হাই কোর্টে খালেদার আবেদনের শুনানি পেছাল

দুর্নীতির দুই মামলায় বিচারক পরিবর্তন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা স্থগিতে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি এক সপ্তাহ পিছিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 March 2015, 05:53 AM
Updated : 5 March 2015, 08:10 AM

বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জমানের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।

আগামী বৃহস্পতিবার, অর্থাৎ ১২ মার্চ আবেদন দুটি আবার বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসবে। 

এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। দুদকের পক্ষে ছিলেন মো. খুরশীদ আলম খান।

জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার বিরুদ্ধে দুদকের করা এ দুটি মামলার বিচার করছেন ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার।

তার প্রতি অনাস্থা জানিয়ে গত ২৮ জানুয়ারি এ দুই মামলায় বিচারক পরিবর্তনের দুই আবেদন হাই কোর্টে দাখিল করেন খালেদা। গত রোববার তা শুনানির জন্য উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে মামলা দুটির অভিযোগ গঠনকারী বিচারকের নিয়োগের বৈধতা এবং অভিযোগ গঠনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে এসেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতেও তা খারিজ হয়ে যায়।

এদিকে লাগাতার অবরোধ ডেকে গত দুই মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে হাজির না হওয়ায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

এরপর তার আইনজীবীরা পরোয়ানা স্থগিতের দুই আবেদন নিয়ে গত মঙ্গলবার হাই কোর্টে আসেন।

একই আবেদন তারা মামলা বিচারের দায়িত্বে থাকা ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতেও করেছিলেন। বুধবার তার শুনানি করে বিচারক খালেদার আবেদন নথিভুক্ত করে রাখেন। এর ফলে আগের পরোয়ানাই বহাল থাকে।

বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে খালেদা জিয়ার আবেদনের শুনানি না হলেও রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আদালতে দুটি ‘পয়েন্ট’ উত্থাপন করে।

তারা বলেন, দুদক আইনের মামলা শুনানির জন্য হাই কোর্টে একটি বেঞ্চ রয়েছে। হাই কোর্টে খালেদার এই মামলার শুনানি করতে হলে তা সেই বেঞ্চেই হওয়া উচিত।

দ্বিতীয়ত, পরোয়ানা জারির পর খালেদা জিয়া এখন আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। পলাতক ব্যক্তি আইনগত প্রতিকার চেয়ে আবেদন করতে পারেন না বলে আদালতকে জানান দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

পরে খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আমাদের পয়েন্ট বলেছি। আদালত শুনেছেন। তবে খালেদা জিয়ার আবেদনের ওপর এখনো শুনানি হয়নি। আমাদের পয়েন্টের বিষয়ে আদালত কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। আগামী সপ্তাহে এটা কার্যতালিকায় আসবে। আবেদনগুলি এখানে শুনানি হবে কি-না, সেটা তখন দেখা যাবে।”

মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, “খালেদার বিচারক পরিবর্তনের দুই আবেদনই মূল। দুদক আইনের মামলায় এ আবেদন দুটির শুনানি এখানে হতে পারে না। আমরা আদালতকে বলছি পলাতক থাকা অবস্থায় এ দুই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়।

“তবে পরোয়ানা স্থগিতেও তাদের দুটি আবেদন আছে। বিচারক স্থগিতের আবেদনে সিদ্ধান্ত হলে বাকি দুটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়ে যাবে।”

দুই মামলা

২০১১ সালের ৮ অগাস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চার জনের বিরুদ্ধে জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ।

তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে।

২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত  কর্মকর্তা।

এ মামলার অপর আসামিরা হলেন- খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান।

এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও রয়েছে।

জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টে অনিয়মের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় অন্য মামলাটি দায়ের করে।

এতিমদের সহায়তার জন্য একটি বিদেশি ব্যাংক থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় এ মামলায়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ ২০১০ সালের ৫ অগাস্ট বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেন।

মামলার অপর আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক সাংসদ কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী এবং প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।

গতবছর ১৯ মার্চ অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে আদালত এ দুই মামলায় আসামিদের বিচার শুরু করে।