‘অবৈধ’ হওয়ায় পরোয়ানা পৌঁছতে দেরি: খোকন

খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তারে আদালতের পরোয়ানা ‘অবৈধ’ হওয়ায় তা থানায় পৌঁছাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেছেন তার আইনজীবী মাহবুবউদ্দিন খোকন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 March 2015, 03:03 PM
Updated : 4 March 2015, 03:03 PM

এক সপ্তাহ আগে পরোয়ানা জারির পর তা পুলিশের কাছে না পৌঁছার মধ্যে মামলার পরবর্তী শুনানির দিন বুধবার তা বহাল রেখে আদালতের আদেশের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

এদিন বিকালে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, পুলিশ এখনও পরোয়ানা হাতে পায়নি।

“গ্রেপ্তারের পরোয়ানা এখনও আসেনি, আসুক দেখি, দেখে সিদ্ধান্ত নেব।”

জিয়া অরফ্যানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের ওই দুই দুর্নীতি মামলার শুনানিতে গরহাজির থাকায় বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি এই পরোয়ানা জারি হয়।

ওই পরোয়ানা জারির পর থেকে কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদাকে গ্রেপ্তারের আলোচনা চলছে। তবে এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বুধবার সংসদে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার খালেদার অনুপস্থিতিতে ঢাকার আদালতে ওই দুই মামলার শুনানির পর সুপ্রিম কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন তার আইনজীবীরা।

এতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন, সাবেক সভাপতি এজে মোহাম্মদ আলী ও সমিতির সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।

খালেদার বর্তমান ‘লিগ্যাল স্টাটাস’ কী জানতে চাইলে জবাবে খন্দকার মাহবুব বলেন, “আমরা তো কিছুই জানি না।”

খোকন বলেন, “আমরা প্রথমেই বলেছি, সরকার দুদককে ব্যবহার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অবৈধ ওয়ারেন্ট ইস্যু করিয়েছে। কারণ বেগম খালেদা জিয়া এর মধ্যেই ওই আদালতের প্রতি অনাস্থা দিয়েছেন এবং এটার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে মামলা বিচারাধীন।

“এই (পরোয়ানা) অবৈধ ও অনৈতিক। এই জন্যই দেখেন না, এক সপ্তাহের মধ্যেও ওয়ারেন্ট যাচ্ছে না।”

আইনের দৃষ্টিতে খালেদা জিয়া পলাতক কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেটা সরকারকে জিজ্ঞাসা করেন।”

এই মামলায় খালেদাকে দেওয়া ইতোপূর্বেকার হাই কোর্টের জামিনের বিষয়টি তুলে ধরে খন্দকার মাহবুব বলেন, “হাই কোর্ট বিভাগ জামিন দিলে সেটা বাতিল করার আগে তাকে শোকজ করতে হবে। সঠিক জবাব না হলে জামিন বাতিল করবেন কি না, সেটা দেখবেন। কিন্তু তিনি হঠাৎ করে জামিন বাতিল করে দিলেন।”

এই প্রসঙ্গ খোকন বলেন, “মিগ কেইসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশেষ আদালত-১ এ ৪৩টা ধার্য তারিখে হাজিরা দেননি। মাননীয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জামিন বাতিল হয়নি। উনি হাজির হননি, উনার মামলাও শেষ হয়ে গেছে।”

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালেও এই মামলার শুনানি চলছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কোন কোর্টের সাহস আছে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়?”

হাজির না হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে বাধা আছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “বাধা তো নাই, সাহসও নাই।”

খালেদার জামিন বাতিলের আদেশ পুনর্বিবেচনা করতে করা আবেদন গ্রহণ বা খারিজ না করে সেগুলো নথিভুক্ত করা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন খন্দকার মাহবুব।

তিনি বলেন, “আজ এ জে মোহাম্মদ আলীর মতো লোক, মাহবুবউদ্দিন খোকনের মতো লোক, তারা নিজেরা গিয়ে দরখাস্ত দিয়েছেন, ভদ্রতার খাতিরে বিচারিক মনোভাব নিয়ে একটা আদেশ দিতে পারতেন।

“উনি (বিচারক) আদেশটা দিলেন না। না দিয়ে নথিভুক্ত করা হল। বিচারপ্রার্থী আবেদন করবে, বিচারক হ্যাঁ বা না বলবেন। নথিভুক্ত জিনিসটা কী, সেটা আমরা জানি না। কোথা থেকে এই আবিষ্কার হল?”

বিচারাধীন এই মামলা ধরে খালেদা জিয়াকে ‘এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী’ বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যরও সমালোচনা করেন খন্দকার মাহবুব।

“আমরা যদি বলতাম, আদালত অবমাননা হয়ে যেত। যে মামলা আদালতে বিচারাধীন আছে। সেই মামলায় যদি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি বলেন, বেগম জিয়া টাকা আত্মসাত করেছেন। তাহলে বিচারক আর কী বিচার করবেন। বিচার তো হয়েই গেল। জাজ সাহেব শুধু লেখবেন, এত বছর সাজা।”

খালেদা জিয়ার নিরাপত্তাহীনতা তুলে ধরতে গিয়ে বের হলে তাকে আর গুলশানে কার্যালয়ে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে আশঙ্কার কথাও জানান খন্দকার মাহবুব।

“বাজারে যা রটে, কিছু না কিছু ঘটে। উনাকে বাড়ি থেকে বের করছে, এখন উনি রাজনৈতিক কার্যালয়ে আছেন। যেই মুহূর্তে উনি বের হবেন, ঠিক তখনই তালা দিয়ে তাকে জনবিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে। ওই জায়গা থেকে তাকে বের করাই মূল উদ্দেশ্য।”

আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যাহার করা মামলাগুলো ভবিষ্যতে পুনরুজ্জীবনের হুঁশিয়ারিও দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব।

“যেই ক্ষমতায় আসলেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যত মামলা আলাদিনের প্রদীপের মতো উধাও হয়ে গেল। ক্ষমতায় আসার পর মামলাগুলো কোথায় চলে গেল, তার কোনো হদিস নেই।”

এই মামলাগুলো ভবিষ্যতে পুনরুজ্জীবিত করা হবে কি না- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস করি; যা কিছু হবে, আইন অনুযায়ী হবে।”