রংপুরে শিবিরের ৩০০ মেস

রংপুর নগরীতে ইসলামী ছাত্রশিবির নিয়ন্ত্রিত ৩০০ মেস রয়েছে, যেখানে অবস্থানকারী সংগঠনটির নেতাকর্মীরা হরতাল-অবরোধে নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি পুলিশের।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2015, 03:28 PM
Updated : 3 March 2015, 03:28 PM

রংপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) আব্দুর রাজ্জাক জানান, শিবির যাতে নাশকতা চালাতে না পারে সেজন্য চিহ্নিত মেসগুলো কড়া নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এছাড়া মেস মালিকদের সতর্ক করে দেওয়ার পাশপাশি এসব মেসে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। 

এসপি রাজ্জাক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নগরীর লালবাগে অবস্থিত কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে গড়ে উঠেছে এক হাজারের বেশি বেসরকারি মেস। 

"এর মধ্যে নগরীর কামারপাড়া, বিনোদপুর, বালাপাড়া, আশরতপুর চকবাজার, পার্কের মোড়, মডার্ন মোড়, লালবাগ, কলেজপাড়া, দর্শনা মোড় এলাকার ৩০০ মেসে শিবিরের নেতাকর্মী ছাড়া অন্য দলের কেউ থাকার সুযোগ পায় না।

"এসব মেসে থেকেই দীর্ঘদিন ধরে কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে একক আধিপত্য বিস্তারসহ নানা নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে শিবির।"

পুলিশ সুপার আব্দুর রাজ্জাকের দাবি, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে শিবির কোনঠাসা হয়ে পড়ে। তবে, সাম্প্রতিককালে হঠাৎ করে বেশ তৎপর হয়ে ওঠে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ বিনতে হোসাইন নাসরিন বানু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “২০০৮ সালের আগে কারমাইকেল কলেজ শিবিরের নিয়ন্ত্রণেই চলত। কলেজের চারটি ছাত্রাবাস শিবির ছাড়া অন্য কোনো ছাত্র থাকতে পারত না।”

তিনি জানান, ২০০৩ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত দশ বছরে এক ছাত্রীসহ ৭ জনের হাত-পায়ের রগ কেটে দিয়েছে শিবিরকর্মীরা। এদের মধ্যে ২ জনের হাত-পায়ের রগকাটার পর তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।

শিবিরের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন ২ শতাধিক শিক্ষার্থী। এদের অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। আবার কেউ কেউ প্রাণ ভয়ে কলেজ ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে বলে জানান তিনি।

কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল কাদের জিলানী জানান, সবশেষ সোমবার রাতে নগরীর কামাপাড়া এলকার মাহিন ছাত্রাবাসে তল্লাশি চালিয়ে ১০টি হাতবোমাসহ শিবিরের ছয়কর্মী এবং মেসের মালিককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার শিবিরকর্মীরা হাতবোমাগুলো নিজেরাই তৈরি করেছে এবং তা দিয়ে নগরীর বিভিন্ন স্থানে নাশকতা চালানোর বিষয়টি স্বীকার করেছে বলে জানান ওসি আব্দুল কাদের।

রংপুর ছাত্রাবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, “শিক্ষার আড়ালে বেশকিছু মেস একটি ছাত্রসংগঠনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে সমিতির পক্ষ থেকে মেস মালিকদের জানানো হয়েছে।”