চট্টগ্রামের আদালতের ২৬ বছরের অচলায়তন ভাঙল

বিভেদের অবসান ঘটিয়ে হরতালে আদালতের কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চট্টগ্রামের আইনজীবীরা, এতে ২৬ বছরের অচলায়তনের সমাপ্তি ঘটল।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 March 2015, 10:08 AM
Updated : 3 March 2015, 10:44 AM

গত দুই দিনের হট্টগোলের পর মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক ও বর্তমান নেতাদের এক যৌথসভায় হরতালে আদালতের কাজে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে বুধবার থেকে হরতালের মধ্যে বেলা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া হবে বলে সব পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম আদালতের সব পক্ষের আইনজীবীরা হরতালে আদালতের কাজে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

‘মৌখিক’ ওই সিদ্ধান্ত অনুসারে হরতালের মধ্যে অচল থাকত চট্টগ্রামের আদালত; যদিও উচ্চ আদালত থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা আদালতেও হরতালে কাজ চলে আসছিল।  

বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকে গত মাস থেকে প্রায় লাগাতার হরতালে আদালত অচল হয়ে পড়ার এক পর্যায়ে সরকার সমর্থক আইনজীবীরা আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

দুই দিন আগে আওয়ামী লীগ সমর্থক আইনজীবীরা শুনানিতে গেলে আদালদের কাজে বাধা দেয় বিএনপি-জামায়াত সমর্থক আইনজীবীরা। এ নিয়ে গত দুই দিন ধরে গণ্ডগোল চলছিল।

এরপর মঙ্গলবার জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে সাবেক ও বর্তমান নেতারা যৌথসভায় বসেন।

বৈঠকের পর চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নেতা মুজিবুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিচার প্রার্থী ও সাধারণ আইনজীবীদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করে সভায় সর্বসম্মতভাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

“হরতালের দিনে তিন ঘণ্টার কার্যক্রম আর পুরো দিন আদালতের কাজ চলার মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে এটা আগের পরিস্থিতির চেয়ে ভালো। বার ও বেঞ্চ পারস্পরিক কার্যকর সহযোগিতার মাধ্যমে বিচার কাজ তরান্বিত হবে বলে আশা করি,” বলেন তিনি।  

সমিতির সভাপতি মুজিবুল হক বলেন, ২৬ বছরের আগের সিদ্ধান্ত মৌখিক ছিল। প্রথা হিসেবে তারা এটা মেনে আসছিলেন।

“আজকের সভার সিদ্ধান্ত সবাই মিলে নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে সেই প্রথার অবসান হল।”

আইনজীব সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নেতা এনামুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগের সিদ্ধান্তের পক্ষ-বিপক্ষ হয়ে গিয়েছিল।

“আইনজীবীদের একাংশ হরতালে আদালতের কাজে অংশ নিতে চায়। অন্য পক্ষ চায় না। এমন পরিস্থিতিতে বিরোধ এড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।”

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এর আগে গত ২২ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সমিতি সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিল। ওই দুই সভায় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

২৬ ফেব্রুয়ারি সভা মুলতবির পর মঙ্গলবার পুনরায় বসার দিন তখনই ঠিক হয়েছিল।

এর মধ্যেই রোববার ২৬ বছর পর হরতালে এজলাসে ওঠেন চট্টগ্রাম আদালতের দুই বিচারক। সেদিন বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা বিচার কাজে বাধা দেন। পরদিন সোমবারও বিচারকরা এজলাসে উঠলে বাধার মুখে পড়েন।

দুই পক্ষের আইনজীবীদের হাতাহাতি

 

এরপর মঙ্গলবার সকালে আইনজীবীদের দুই পক্ষ নতুন আদালত ভবনের নিচে পাল্টাপাল্টি মিছিল নিয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হন।

হরতালে আদালতের কাজ চালানোর পক্ষে-বিপক্ষে সেখানে সমবেত হয়ে তারা সমাবেশ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আইনজীবীরা হাতাহাতিতেও লিপ্ত হন। পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুপুর ১২টায় হাতাহাতির পর ১টায় আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে সমিতির সভা শুরু হয়, যাতে দুই পক্ষের আইনজীবীরাই ছিলেন।

ওই সভায় অংশ নেন সাবেক ১০ সভাপতি ও ১২ সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বর্তমান সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিত্বকারী আরও ১০ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী।

সভায় আলোচনা শেষে হরতালে আদালতের কাজে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা সবার সামনে দেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক মো. কবির চৌধুরী।