ঢাকার চোখে উদ্যোগে আন্তরিক ভারত

নয়া দিল্লী প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সমস্যাগুলো ‘দ্রুত’ সমাধানে নজর দেওয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে ‘বড় ধরনের পরিবর্তন’ দেখতে পাচ্ছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2015, 03:06 PM
Updated : 2 March 2015, 03:06 PM

সোমবার সফররত ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের সঙ্গে প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের একথা বলে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।

তিনি বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত’ বৈঠকে তারা দ্বিপক্ষীয়, উপ-আঞ্চলিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ের নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলীর সঙ্গেও দেখা করেছেন জয়শঙ্কর।

বৈঠকের পর বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমরা আরও সহযোগিতা চাই।”

প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রয়াসের অংশ হিসেবে জয়শঙ্করের এই সফর, ‘সার্ক যাত্রা’ নামে যার শুরু রোববার ভুটান সফরের মধ্যে দিয়ে। এরপর তিনি পাকিস্তান যাবেন।

নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ছয় মাসের মাথায় গত মাসের শেষ দিকে সুজাতা সিংকে সরিয়ে জয়শঙ্করকে পররাষ্ট্র সচিব করেন।

সার্ক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে নতুন পররাষ্ট্র সচিবকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পাঠাচ্ছেন মোদী।

তার এই সফরে দ্বিপক্ষীয় গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ই আলোচনায় উঠবে বলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আগেই আভাস দিয়েছেন।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জয়শঙ্করের এই সফর ঝুলে থাকা তিস্তা চুক্তি সইয়ের ক্ষেত্রে গতি দেবে।

এছাড়া স্থল সীমান্ত চুক্তিও উঠবে আলোচনায়, যা কার্যকরে ভারতের পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধন বিল পাসের আশা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিসহ সব বিষয়েই তারা আলোচনা করেছেন। তবে ৪০ মিনিটের এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ‘সুনির্দিষ্ট কিছু হয়নি’ বলে জানান তিনি।

স্থল সীমান্ত চুক্তি অনুসমর্থনের পর চূড়ান্ত পর্যায়ে এটি এখন লোকসভার অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তিস্তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছি। তাদের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক।

“একটা বিষয় পরিষ্কার হয়েছে, তারা সমস্যাগুলোর সমাধান করতে চায়। তারা আঞ্চলিক দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে চায় এবং কোনো সমস্যা থাকলে তা দ্রুত সমাধান করতে চায়।”

শহিদুল বলেন, “আমরা এটাতে ভারতের পররাষ্ট্র নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হিসেবে দেখছি।”

ভারতের আগের সরকারের আমলে সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতির মধ্যে ফাঁক ছিল কিনা তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “প্রত্যেক সরকারেরই বিশেষ প্রাধান্য থাকে।

“কিন্তু এই (মোদী) সরকার শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে শুরুতেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে প্রাধান্য দিয়েছে।”

তিনি বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়টিও শিগগিরই সমাধান হবে তারা আশাবাদী।

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জয়শঙ্করের নিয়োগের এক মাসের মধ্যে তার এই সফরে ইঙ্গিত রয়েছে, “বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ককে জোর দিচ্ছে ভারত।”

তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ‘এতোটাই গভীর’ যে ‘আপনি যদি প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে একছত্র লিখেন তাহলে ২৫ পাতার একটি দলিল হয়ে যাবে।

“বিস্তারিত আলোচনা আমরা করি মূলত, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক (এফওসি) এবং যৌথ পরামর্শ কমিশন (জেসিসি) পর্যায়ের বৈঠকে।”

তিনি বলেন, এ বিষয়ে উভয় পক্ষই একমত যে সম্পর্ক ‘খু্বই ভাল’ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ‘এটা নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।’ এটা ভবিষ্যতে আরো জোরদার হতে থাকবে।

আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে মোদীর ভারত সফর নিয়ে দুদেশের গণমাধ্যমে খবর বেরুলেও শহিদুল হক বলেন, এবিষয়ে তারা সুনির্দিষ্ট কোনো আলোচনা করেননি।

“আমরা দিন তারিখ আলোচনা করিনি। তিনি যথাসময়ে সফর করবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগেই তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং তিনি তা গ্রহণও করেছেন।”

তিনি বলেন, উপ-আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটে তারা বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে পানি, বিদ্যুৎ, সংযোগ ও ট্রানজিট বিষয়ে আলোচনা করেছেন।

সম্মিলিতভাবে সার্কের উদ্যোগ সফল হওয়ায় উপ-আঞ্চলিক পর্যায়ে সহযোগিতার উপর জোর দিচ্ছে ভারত।

আনুষ্ঠানিক পর্যায়ে বড় দুটি অংশের বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। একদিকে আছে- পানি ও বিদ্যুৎ, অন্যদিকে সংযোগ ও ট্রানজিট।

এ বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চার দেশের কর্মকর্তাদের মধ্যে এবিষয়ে আগামী বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, “আমরা উভয়ে আরো সহযোগিতা চাই।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভীর সঙ্গে দেখা করেন জয়শঙ্কর।

এর পর তিনি জাতীয় সংসদে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন।

সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম পর্বের সফরে মঙ্গলবার সকলে পাকিস্তানের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন । সেখান থেকে বুধবার আফগানিস্তান যাবেন তিনি।