হরতাল-অবরোধে ব্যবস্থা নিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন: হাই কোর্ট

হরতাল-অবরোধে বিধি-নিষেধ দিতে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন ‘অবৈধ’ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 March 2015, 08:22 AM
Updated : 2 March 2015, 12:05 PM

একইসঙ্গে অবরোধকে কেন ‘অসাংবিধানিক’ করা হবে না- আরেক রুলে তাও জানতে চেয়েছে আদালত।  

হরতাল-অবরোধ নিয়ে এফবিসিসিআইসহ চার ব্যবসায়ী সংগঠনের করা একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি করে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ সোমবার এ বিষয়ে রুল দেয়।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, তথ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পাটি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ৪৮ বিবাদীকে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে আরেকটি রিট আবেদনে হাই কোর্টের একই বেঞ্চ সরকারকে  হরতাল ও অবরোধের নামে ‘নৈরাজ্য রোধের’ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছিল।

এরপর ব্যবসায়ীদের করা রিট আবেদনে নতুন এই রুল এল, যাতে হরতাল-অবরোধে আইনগত বিধি-নিষেধ আরোপে সরকারের ‘নিষ্ক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।   

এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএর পক্ষে দায়ের করা এই রিট আবেদনে বাদী হিসাবে রয়েছেন চার সংগঠনের সভাপতিরা।

আদালতে তাদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

আদেশের পর ইমতিয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, “আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বিবাদীদের নির্দেশ দিয়েছেন।”

একইসঙ্গে আরও সাতটি রুল দিয়েছে আদালত,  যাতে ‘যৌক্তিক সময় না দিয়ে হরতাল আহ্বান করাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না’ এবং ‘চলমান হরতাল-অবরোধে  ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঋণ খেলাপি হওয়া সংক্রান্ত ক্রেডিট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকা স্থগিত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না’- তা জানাতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি হরতাল-অবরোধের সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত রাখার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না এবং ছোট ব্যবসায়ীদের সব ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ কেন দেওয়া হবে না- তাও জানাতে বলেছে আদালত।

দুটি রুলে প্রশ্ন করা হয়েছে- হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার কেন একটি তহবিল গঠন করবে না এবং হরতাল-অবরোধে ক্ষতির জন্য কেন সব রাজনৈতিক দলকে দায়ী করা হবে না ও ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ চাইতে কেন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে না।

গণমাধ্যম হরতালের ঘোষণা প্রচার করলে তা উস্কানি হিসাবে কাজ করে কিনা, কাজ করলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অংশ কিনা- এসব বিষয় খতিয়ে দেখে এ ধরনের প্রচার বন্ধের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তাও আদালত জানাতে বলেছে।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চালিয়ে আসছে। আর ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই চলছে হরতাল।

অবরোধ ও হরতালের মধ্যে নাশকতা ও সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা একশ ছাড়িয়ে গেছে, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে।

যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘ বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানালেও কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন ২০ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া।

অবরোধ-হরতালে নাশকতার চিত্র তুলে ধরে এর আগে শাহীনুর রহমান শাহীন নামে কেরানীগঞ্জের এক ব্যবসায়ী রিট আবেদন করলে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি  ‘হরতাল ও অবরোধের নামে নৈরাজ্য রোধে’ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে নির্দেশ দেয়।

পাশাপাশি ‘নৃশংস অবরোধ’ কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে একটি রুলও জারি করা হয়।

রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে ব্যবসায়ীরা আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধের দাবি জানিয়ে আসছেন বেশ কিছুদিন ধরেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, জনগণ চাইলে হরতাল বন্ধে আইন হবে।

আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট কামরুল হক সিদ্দিকী। সঙ্গে ছিলেন ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।

ইমতিয়াজ বলেন, বলেন, আদালত এছাড়াও আরো ৭টি রুল দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, যৌক্তিক সময় না দিয়ে হরতাল আহ্বান করাকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং চলমান হরতাল-অবরোধে  ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের ঋণ খেলাপি হওয়া সংক্রান্ত ক্রেডিট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (সিআইবি) তালিকা স্থগিত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না।

পাশাপাশি হরতাল-অবেরাধের সময়ে ব্যাংক ঋণের সুদ স্থগিত রাখার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না এবং ছোট ব্যবসায়ীদের সকল ঋণ ১২ বছরের জন্য পুনঃতফসিলের সুযোগ কেন সুযোগ দেয়া হবে না, তাও জানাতে বলা হয়েছে।

হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণে কেন সরকার একটি ফান্ড গঠন করবে না,

হরতাল-অবরোধে ক্ষতির জন্য কেন সকল রাজনৈতিক দলকে দায়ী করা হবে না এবং ক্ষতিপূরন চাইতে কেন হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে পারবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।

গণমাধ্যম হরতালের ঘোষণা প্রচার করলে এটা উস্কানি হিসাবে কাজ করে কি-না, কাজ করলে এটা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অংশ কি-না, তা খতিয়ে দেখে এ ধরণের প্রচার বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তাও জানাতে বলা হয়েছে।

এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএর পক্ষে দায়ের করা রিটটি রোববার ওই আদালতের কার্যতালিকায় ছিল। নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষে সভাপতিরা এতে বাদী হিসাবে রয়েছেন।

রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, তথ্য সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, ওয়ার্কার্স পাটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ ৪৮ বিবাদীকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।