‘সামনে এগোতে করতে হবে গণহত্যার বিচার’

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যার বিচার শুরুতে দেরি হলেও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিতের পথে একটি বাধা অতিক্রম হয়েছে বলে অভিমত এসেছে গণহত্যা ও বিচার বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 07:25 PM
Updated : 1 March 2015, 07:25 PM

বাংলাদেশে গণহত্যা ও বিচার শীর্ষক ওই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এ সংক্রান্ত অভিমত দেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষকরা।

রোববার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর সম্মেলনের সমাপনী আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

আর্জেন্টিনা, কম্বোডিয়া, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের নয়টি দেশের ১৯জন গণহত্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক তিন দিনব্যপী এ সম্মেলনে অংশ নেন।

অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, “বিশ্বের আরও অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও এসব জঘন্য অপরাধের শিকার যারা হয়েছেন, ন্যায় বিচারের জন্য তাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে। এখনও এ প্রক্রিয়া অনেক বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তবে এ পর্যন্ত এর যা কিছু অর্জন, তাতে প্রমাণিত হয় বিচার বিলম্বিত হলেও ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়েছে।”

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে ধন্যবাদ জানিয়ে যৌথ ঘোষণায় বলা হয়, “১৯৭১ সালের স্মৃতিসমহ ধরে রাখার অক্লান্ত প্রচেষ্টা, মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকারদের জন্য ন্যায়বিচারের দাবি, তরুণ প্রজন্মকে এ বিষয়ে শিক্ষাদানের প্রচেষ্টার মাধ্যমে এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন এ ধরনের অপরাধ আর কখনোই না ঘটে।”

মানবতা ও শান্তির জন্য বাংলাদেশে গণহত্যার বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেও মত দেন তারা।

যৌথ ঘোষণা বলা হয়, “সকল গণহত্যার বিচার শেষ করেই সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে।” 

ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এক্সট্রাঅর্ডিনারি চেম্বারস ইন দ্য কোর্ট অব কম্বোডিয়ার সাবেক সদস্য হেলেন জারভিস।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, “বাংলাদেশে এমন কোন পরিবার নেই, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হননি। এজন্য আমরা ১৯৭১ সালের গণহত্যা, বর্বরতা, ধ্বংসযজ্ঞ ভুলতে পারি না। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যেসব পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বজন হারিয়েছে তাদের ন্যায় বিচার পাওয়ার চেয়ে বরং যারা গণহত্যা ও অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটিয়েছিল, তাদের মানবাধিকারের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছে কয়েকটি বিদেশি রাষ্ট্র।”

“১৯৭১ সালে যারা গণহত্যা ঘটিয়েছে তাদেরই মানবাধিকারের দাবি করছে কয়েকটি বিদেশী রাষ্ট্র। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক দেশে মৃত্যুদণ্ড নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশের আইনে তা এখনো বলবৎ রয়েছে, এবং তাদের ভয়ঙ্কর মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”

দেশে যুদ্ধাপরাধের ট্রাইবুন্যাল স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ীই হচ্ছে উল্লেখ করে ড. গওহর রিজভী বলেন, “বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ যেমন আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত, তেমনি এই অপরাধের বিচারে গঠিত আদালতও আন্তজার্তিকভাবে স্বীকৃত।”

অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, “একাত্তরে গণহত্যাসহ অন্যান্য জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের বিচারের চূড়ান্ত লক্ষ্য শুধু অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া নয়, এর সঙ্গে সত্য প্রতিষ্ঠা করা এবং তা সারা বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।”

সম্মেলনের বিভিন্ন আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণহত্যা গবেষক মাইকেল মসকো, আন্দ্রে বার্টোলি,  ডা. সারোয়ার আলী, মুক্তিযোদ্ধা নিজামউদ্দিন, সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক পাওলো কাসাকা, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারের সভাপতি ডেনিয়েল ফেইরিস্টেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ডেপুটি প্রসিকিউটর জেমস স্টুয়ার্ট, ভারতের সেন্টার ফর স্টাডি অব ডেভেলপিং সোসাইটিজের সিনিয়র ফেলো আশীষ নন্দী, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী, শহীদ মুনীর চৌধুরীর ছেলে আসিফ মুনীর।

শুক্রবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।