অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে এফবিআইয়ের তদন্তে সায়

যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে লেখক-ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআইকে যুক্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 02:34 PM
Updated : 1 March 2015, 06:01 PM

হত্যাকাণ্ডের পর তিন দিনেও বাংলাদেশের তদন্তকারীরা কোনো কূল-কিনারা খুঁজে না পাওয়ার মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী রোববার এই সিদ্ধান্ত বিদেশি কূটনীতিকদের জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পরপরই ওয়াশিংটনে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নিয়মিত একে প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্তে আগ্রহর কথা জানান।

যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রকৌশলী অভিজিৎ একুশের বইমেলায় তার বই প্রকাশ উপলক্ষে বাংলাদেশে এসেছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে বইমেলা থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

বিএনপি জোটের হরতাল-অবরোধে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে এই লেখক হত্যাকাণ্ড ঘটে। লেখালেখির জন্য তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল বাংলাদেশের জঙ্গিবাদীরা।

চলমান পরিস্থিতি নিয়ে রোববার যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের মিশন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মাহমুদ আলী, সেখানেই অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আসে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিলেন, তাদের চিহ্নিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার প্রস্তাব ইতিবাচকভাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে।

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার তদন্তে বাংলাদেশে এসেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে ওই তদন্তে তারা সহযোগিতা পাননি বলে অভিযোগ রয়েছে।   

ব্লগসাইট মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা অভিজিৎ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অজয় রায়ের ছেলে। সেদিন হামলায় তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাও আহত হয়েছেন। আঙুল হারিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ধরন ও আগের হুমকি বিবেচনায় অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের জন্য জঙ্গিদের সন্দেহ করা হলেও তিন দিনেও কাউকে চিহ্নিত বা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

অভিজিতের ওপর হামলার স্থান

বইমেলার নিরাপত্তা বলয়ের কাছেই এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তাও তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গাফিলতি এবং হত্যা তদন্তে সহায়তা করার জন্য দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর তার বাবা অজয় রায়কে টেলিফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। উত্তরবঙ্গের একটি জেলা খেকে ফোনটি করার প্রমাণ মিলেছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেক কর্মকর্তা বলেন, টুইটারে এই হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে যে বক্তব্য এসেছে, সে বিষয়টিও তদন্ত করা হচ্ছে।

অভিজিতের ওপর হামলার পর বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে ‘আনসার বাংলা সেভেন’ নামে একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করে এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বিজয়’ হিসেবে দাবি করা হয়।

তবে তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো পুলিশ কর্মকর্তাই আর কিছু বলতে রাজি হননি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুর্বৃত্তদের ধরতে একাধিক দল কাজ করছে।

হামলার উদ্দেশ্য জানা গেছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এ বিষয়ে এখন কোনো বক্তব্য দেব না। শুধু বলব, পুলিশ মাঠে কাজ করছে দুর্বৃত্তদের ধরতে।”

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পুলিশের মতো তারাও বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। উগ্র মৌলবাদীরা এই ঘটনা ঘটাতে পারে বলে তার ধারণা।

অভিজিৎ রায় (ফেইসবুক থেকে নেওয়া ছবি)

গত ১৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎ দেশের আসার পর এবং ঘটনার আগে কার কার সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই টেলিফোন নম্বরগুলো কার কার ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা জানান। 

একুশের বইমেলার জন্য বসানো সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখছে গোয়েন্দা পুলিশ।

“অভিজিৎ ঘটনাস্থলে কখন এসেছেন এবং আগে-পিছে সন্দেহজনক কেউ তাকে অনুসরণ করেছিল কি না, তা দেখা হচ্ছে,” বলেন এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শাহবাগ থানার পুলিশ শুরু করলেও পরে তা গোয়ে্ন্দা পুলিশেকে (ডিবি) দেওয়া হয়।

এদিকে অভিজিতের স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা অবস্থা আগের ছেয়ে কিছুটা ভাল বলে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সুব্রত গোলদার জানিয়েছেন।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর পর অভিজিতের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজে দান করেন তার বাবা অধ্যাপক অজয় রায়।