চট্টগ্রামে বিচার কাজে বিএনপি-জামায়াতপন্থিদের বাধা

হরতালের মধ্যে এক মাস পর চট্টগ্রামে এজলাসে এসে বিচার কাজ শুরুর চেষ্টা করে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের বাধার মুখে পড়েছেন দুই বিচারক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 March 2015, 07:30 AM
Updated : 1 March 2015, 08:41 AM

চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ নুরুল হুদা এবং বিভাগীয় বিশেষ জজ আতাউর রহমান রোববার সকালে এজলাসে আসার পর আইনজীবীদের এ অংশটি হট্টগোল শুরু করে। এক পর্যায়ে দুই বিচারক এজলাস ছেড়ে যান।

বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা পরে নতুন আদালত ভবনের নিচতলায় গাড়ি বারান্দা সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৯৮৯ সালে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি হরতালের দিনে শুনানিতে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যা এখনো অনুসরণ করা হচ্ছে।

গত ৫ জানুয়ারি থেকে টানা অবরোধ চালিয়ে আসা বিএনপি-জামায়াত জোট ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিনই হরতাল করছে। এর মধ্যে কোনো পক্ষের আইনজীবীরা না আসায় পুরো ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। 

দীর্ঘ সময় ধরে শুনানি না হওয়ায় সাধারণ মানুষ যেমন বিচারবঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি জামিন আটকে থাকায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা ধারণ ক্ষমতার ছয়গুণ ছাড়িয়ে গেছে।

হরতালের মধ্যে আইনজীবীরা না আসায় এতোদিন বিচারকরাও এজলাসে বসছিলেন না। হরতাল-অবরোধে নাশকতাসহ অন্যান্য ঘটনায় যারা গ্রেপ্তার হচ্ছেন তাদের রিমান্ড বা কারাগারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছিল বিচারকের খাস কামরা থেকে।

এই অচলাবস্থা কাটাতে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম আদালতে আইনজীবীদের বিভিন্ন পক্ষের নেতারা গত ২২ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি দুই দফা বৈঠকে বসলেও সিদ্ধান্ত আসেনি।

এর মধ্যেই দীর্ঘ এক মাস পর রোববার সকাল ১০টার দিকে এজলাসে আসেন দুই বিচারক।

বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতা মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, বিচারকদের এজলাসে আসার খবর পেয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সদস্যরা মিছিল বের করেন।

“শুরুতে তারা জেলা জজ আদালতে যান। সেখানে তাদের হট্টগোলের মুখে বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।”

বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতে বিচারক ১৫ মিনিটের মত কয়েকটি মামলায় সময়ের আবেদন শোনেন এবং পরবর্তী তারিখ দেন। এরই মধ্যে মিছিল নিয়ে সেখানে যান বিএনপি-জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা।

মেজবাহ উদ্দিন বলেন, “মিছিলে থাকা কয়েকজন তরুণ আইনজীবীকে এ সময় আপত্তিকর স্লোগান দিতে শোনা যায়। আমরা কয়েকজন আইনজীবী এ সময় এজলাস কক্ষের দরজায় অবস্থান নেই। পরে তাদের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি বিচারকের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিচারক এজলাস ত্যাগ করেন।”

আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নেতা এ কিউ এম নুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুইজন বিচারক এজলাসে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। আমার যাওয়ার পর তারা এজলাস থেকে নেমে যান।”

আইনজীবীদের এ অংশের নেতা আবদুস সাত্তার বলেন, “বিচারকরা এজলাসে উঠবেন খবর পেয়েই আমরা গিয়েছিলাম। শুনানি হয়নি, আইনজীবীরা আদালত বর্জন করেছেন। এরপর বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (প্রশিকিউশন) কাজী মুত্তাকি ইবনু মিনান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় বিচারকরা এজলাসে উঠেছিলেন। উকিল সাহেবরা গিয়ে বলেছেন তারা শুনানিতে অংশ নেবেন না। পরে বিচারকরাও এজলাস থেকে নেমে যান।”

সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের নেতারা বলছেন, ২৬ বছর আগের যে সিদ্ধান্তে চট্টগ্রামের আদালতে এই অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে, তা ছিল একটি ‘মৌখিক সিদ্ধান্ত’। এর কোনো লিখিত অনুলিপির সন্ধান তারা পাননি।