রোববার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে অভিজিতের কফিন আনার পর রাখা হয় অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বানানো বেদীতে। তার আগেই ফুল হাতে সেখানে অপেক্ষায় ছিলেন বন্ধু, স্বজন, শুভানুধ্যায়ী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা।
সম্মিলিত সংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠান শুরুর পর অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের দীর্ঘ দিনের সঙ্গী লেখক ও সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, “আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি। অভিজিতের ওপর আগে থেকেই হুমকি ছিল, তারপরও দেশে ফেরার পর কেন তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়নি- সরকারের কাছে আমরা জানতে চাই।”
মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা অভিজিত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করছিলেন প্রকৌশলী হিসাবে। সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্ম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তিনির্ভর লেখালেখি করে আসছিলেন নিয়মিত। তিনি ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের একজন নিয়মিত কলামনিস্ট।
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলন চত্বরের উল্টো পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান সংলগ্ন ফুটপাতে কুপিয়ে হত্যা করা হয় অভিজিতকে। হামলায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বন্যার একটি আঙুল।
এ ঘটনার জন্য জঙ্গিবাদীদের দায়ী করে শাহরিয়ার কবির বলেন, “তাদের তালিকায় এক নম্বরে শেখ হাসিনা। তারপরে মুক্তমান ব্লগার এবং আমিও আছি। তাদের যদি চিহ্নিত করা না হয়, তাহলে একদিন শেখ হাসিনাকেও হত্যা করা হবে।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়েল অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, “লেখক হুমায়ুন আজাদ ও অভিজিতের হত্যা একই সূত্রে গাঁথা। এই খুনীদের দুয়েকজনকে ধরে ফাঁসি দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। আমাদের সামাজিকভাবে এ সমস্যার মোকাবেলা করতে হবে।”
এ হত্যাকাণ্ডে নিন্দা জানিয়ে ঘাতকদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। এ ঘটনাকে ‘কাপুরুষোচিত’অ্যাখ্যায়িত করে তদন্তে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
বাবা অজয় রায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক হওয়ায় অভিজিতের শৈশব-কৈশর কেটেছে এই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতেই। অথচ সেই ক্যাম্পাসেই বইমেলা ঘিরে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শাহবাগ থানা থেকে দুইশ গজ দূরে ঘাতকের চাপাতির আঘাতে খুন হতে হয়েছে তাকে।
এই প্রেক্ষাপটে এ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের সহায়তা নেওয়া উচিৎ বলে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে মত প্রকাশ করেন একজন বক্তা।
অভিজিৎ রায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দান করা হবে বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।