চট্টগ্রামে বিস্ফোরকের বিপুল মজুদসহ গ্রেপ্তার ৪

বিএনপি-জামায়াত জোটের হরতাল-অবরোধে নাশকতার মধ্যে চট্টগ্রামে একটি বাড়িতে বিস্ফোরকের বিপুল পরিমাণ মজুদের সন্ধান মিলেছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2015, 02:39 PM
Updated : 28 Feb 2015, 03:47 PM

শনিবার হালিশহরের বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে এক নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তারও করেছে র‌্যাব।

উদ্ধার বিস্ফোরক দিয়ে দুই হাজার বোমা তৈরি করা যেত জানিয়ে র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেছেন, বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা এঁটেছিল জঙ্গিরা।

“ভয়াবহ তৎপরতার জন্যই বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জাম জড়ো করা হয়। তাদের ভয়াবহ কোনো নাশকতার পরিকল্পনা ছিল।”

স্কুলের শিশুদের পানির ফ্লাক্সের ভেতর বিস্ফোরক পদার্থ দিয়ে বোমা তৈরির পরিকল্পনা ছিল জানিয়ে বেনজীর বলেন, “যে কেউ দেখলে ভাববে বাচ্চার জন্য পানি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ধরনের বোমায় ব্যাপক প্রাণঘাতী প্রভাব হতে পারত।”

৭৬টি তাজা বোমা ও ২৪ রাউন্ড গুলির পাশাপাশি বিস্ফোরকের সঙ্গে ওই বাড়িতে ইসলামী ছাত্রশিবিরের ‘সংবিধান’, ইসলামী ছাত্রী সংস্থার এক নেত্রীর চিঠি, জিহাদি কয়েকটি বইও পেয়েছে র‌্যাব।

হাটহাজারীর ‘ডিজিটাল জিহাদে’র তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধানের ধারাবাহিকতায় হালিশহরের বাড়িটিতে অভিযান চলে বলে র‌্যাব জানিয়েছে।

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারীতে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয় ১২ জনকে। তাদের দেওয়া তথ্যে গত ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর পাহাড়ে ‘জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের’ সন্ধান পায় র‌্যাব, সেখানে গ্রেপ্তার হন পাঁচজন।

হালিশহরের যে বাড়িতে বিস্ফোরক পাওয়া গেছে, তার মালিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী একজন। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার কে ব্লকের ১ নম্বর লেইনের ১/১৯ নম্বর বাড়িটির দ্বিতীয় তলাটি গত জানুয়ারিতে ভাড়া নিয়েছিলেন গ্রেপ্তারকৃতরা।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- কক্সবাজারের পেকুয়া থানার বাসিন্দা ফয়জুল হক (৩০) ও রহিমা আক্তার (২১) এবং বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের আব্দুল হাই (৩৬)।

ওই বাড়ি থেকে জাহেদ (২২) নামের আরেকজনকে দুপুরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। রাতে তাকেও গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

র‌্যাব-৭ এর পরিচালক মিফতাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হালিশহরে গ্রেপ্তার ফয়জুল হক ও রহিমা আক্তার দুজন বাঁশখালীতে খামারের আড়ালে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনাকারী মাওলানা আজিজের ভাই-বোন। জাহিদ ফয়জুলের ভাগ্নে।

“এদের নেতা মাওলানা আজিজ। সে গত ৭ জানুয়ারি সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছে। রহিমা ছাত্র শিবিরের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রী সংস্থা করত।”

উদ্ধার বিস্ফোরক

উদ্ধার করা সরঞ্জামের মধ্যে আছে ৭৬টি বোমা, ২৪ রাউন্ড গুলি, পাইপ বোমা তৈরির জন্য খালি পাইপ ও খালি পানির ফ্লাক্স।

বিস্ফোরক দ্রব্যের মধ্যে আছে ৫০ কেজি অ্যালুমিনিয়াম ডাস্ট, ৩৫ কেজি পটাশিয়াম ক্লোরাইড, ১০ কেজি সালফার, আট কেজি সোডিয়াম অ্যামাইড, পাঁচ লিটার নাইট্রোবেনজিন, চার কেজি আর্সেনিক ডি সালফাইড, দুই কেজি আটশ গ্রাম অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ও দুই কেজি চারকোল।

৮৬ জোড়া জাঙ্গল বুট, ৯৭ জোড়া পিটি শু, ৯৬ জোড়া নাইলন বেল্ট ও ১৮৫ জোড়া মোজাও পাওয়া  গেছে ওই বাড়িতে।

সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় ইসলামী ছাত্র শিবিরের সংবিধান, কক্সবাজারের উশু একাডেমির পরিচালক ছিদ্দিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত কিছু সনদপত্র, ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মার্চ পর্যন্ত ‘যোগাযোগ ও প্রশিক্ষণে’র তালিকা, চট্টগ্রামের ১৭ জন টেলিভিশন সাংবাদিকের ফোন নম্বরের তালিকা, মাওলানা ছগীর বিন ইমদাদের লেখা ‘ফাযায়েলে জিহাদ’ নামের একটি বই এবং চট্টগ্রাম মহানগর দক্ষিণ ইসলামী ছাত্রী সংস্থার সভাপতি সুমাইয়া আফরোজ স্বাক্ষরিত একটি চিঠি।

কোন জঙ্গি গোষ্ঠীর?

হাটহাজারীর ‘ডিজিটাল জিহাদ’র তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও বাঁশখালীর পাহাড়ি এলাকায় সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধানের ধারাবাহিকতায় হালিশহরে বিপুল বিস্ফোরক মজুদ উদ্ধারের দাবি র‌্যাবের।

এ তিনটি স্থান থেকে গ্রেপ্তার হওয়া মোট ২১ জনের সবাই জঙ্গি বলেও দাবি বিশেষ এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের।

তবে তারা কোন জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য সে বিষয়ে এখনি কিছু জানাতে নারাজ র‌্যাব কর্মকর্তারা।  

র‌্যাব-৭ এর পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল মিফতাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বলেন, “১৯ তারিখ বলে দিলে ২১ তারিখ আসত না। ২১ তারিখ জানালে আজকের উদ্ধার হত না।

“আমরা কাজ করছি। আপনারা জানতে পারবেন।”

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হাটহাজারী থানার আলীপুরে সুলতান আহমেদ সড়কের সফিনা ভবনের চতুর্থ তলায় অভিযান চালিয়ে ১২ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে আল কায়েদা, আইএস, আল আজাহারি, আল শাবাব, আল নুসরা, শিশুদের অস্ত্র চালনা, উড়োজাহাজ ছিনতাই, একে-৪৭ রাইফেলের কার্যকারিতা, হাতে-হাতে যুদ্ধ, সেনা প্রশিক্ষণ ও বাংলাদেশের এসএসএফ‘র প্রশিক্ষণের ভিডিও পাওয়া যায়।

দুদিন পরই ২১ ফেব্রুয়ারি বাঁশখালীর ‍সাধনপুরে লটমণি পাহাড়ে পশুর খামারের আড়ালে গড়ে তোলা জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান মেলে। সেখানে গ্রেপ্তার হয় আরও পাঁচ জন।

সেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করা একে-২২ রাইফেল, বিদেশি পিস্তল, রিভলবার, সাড়ে সাতশ রাউন্ড গুলিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম।

র‌্যাবপ্রধান বেনজীর বলেন, “এ ধরনের আন্ডারগ্রাউন্ড কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিশাল নেটওয়ার্ক প্রয়োজন। তাদের দেশীয়, আঞ্চলিক ও আর্ন্তজাতিক যোগাযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

‘পরিস্থিতি জঙ্গিদের অনুকূলে’

র‌্যাব মহাপরিচালক বলেন, চলমান অবরোধ-হরতালে প্রাণঘাতী পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস ধর্মীয় জঙ্গিবাদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

বিএনপি-জামায়াত জোটের ডাকে গত ৫ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধে নাশকতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এর অর্ধেকের বেশি মারা গেছে গাড়িতে ছোড়া পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে।  

বেনজীর বলেন, “পেট্রোল বোমা দিয়ে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস দেশে ধর্মীয় জঙ্গিবাদের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে।

“এই সন্ত্রাস ও নাশকতার সুযোগ জঙ্গিরা নিতে পারে। তারা উৎসাহিত হতে পারে।“