ঢাকা বারে ভরাডুবি ক্ষমতাসীনদের

বাংলাদেশের জেলা বারগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সরকার সমর্থকদের ভরাডুবি হয়েছে।

আদালত প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2015, 06:46 AM
Updated : 28 Feb 2015, 07:16 AM

বিএনপি জোট সমর্থিত আইনজীবীরা (নীল প্যানেল) প্রার্থীরা সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ অধিকাংশ পদে বিজয়ী হয়েছেন।

১০টি সম্পাদকীয় পদে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের প্যানেল (সাদা প্যানেল)  থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও ট্রেজারার পদে জিতেছেন কেবল দুজন।

সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার। তার প্যানেলের ওমর ফারুক ফারুকী সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন।

সভাপতি পদে মাসুদ তালুকদার পেয়েছেন ৪ হাজার ৫৬২ ভোট। তার চেয়ে ২৩০ ভোট কম পেয়ে হেরেছেন সাদা প্যানেলের সাইদুর রহমান মানিক।

সাধারণ সম্পাদক পদে ওমর ফারুক ৪ হাজার ৬৪৩ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। সাদা প্যানেলের আয়ুবুর রহমান তার চেয়ে ৫৮৬ ভোট কম পেয়েছেন।

কার্যনির্বাহী সদস্যদের ১৫টি পদের মধ্যে ১২টিতে জিতেছেন বিএনপি-জামায়াত সমর্থক অর্থাৎ নীল প্যানেলের প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সাদা প্যানেলের তিনজন জিতেছেন।

সব মিলিয়ে সমিতির মোট ২৫টি পদের মধ্যে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল পেয়েছে ২০টি। আর আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল পেয়েছে পাঁচটি।

বুধ ও বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণের পর গণনা শেষে শনিবার ভোররাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, ঢাকা বারের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম আলতাফ হোসেন ফল ঘোষণা করেন।

এই নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলেন ১৫ হাজার ৩৭২ জন। দুই দিনে ৯ হাজার ৯২ জন ভোটার ভোট দিয়েছেন।

সহ-সভাপতি পদে নীল প্যানেলের হারুন রশীদ খান ৪ হাজার ৫৭৭, সিনিয়র সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে হাফিজুর রহমান হাফিজ ৪ হাজার ৪২৪, সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে তাহেরুল ইসলাম তৌহিদ ৪ হাজার ৮১৬, গ্রন্থাগার সম্পাদক পদে মাজেদুর রহমান মামুন ৪ হাজার ৮৯২, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে আকলিমা আক্তার আলো ৪ হাজার ৩৬৬ ও দপ্তর সম্পাদক পদে শেখ আলাউদ্দিন ৪ হাজার ৬৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে সাদা প্যানেলের মোশারফ হোসেন ৪ হাজার ৪৭৩, কোষাধ্যক্ষ পদে মকবুল হোসেন ৪ হাজার ৪৪৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।

সদস্য পদের বিজয়ীরা হলেন- মোহাম্মাদ আব্দুল হান্নান খন্দকার (নীল), মোহাম্মাদ বিল্লাল হোসেন (নীল), মজিবর রহমান (নীল), ফাতিমা ইয়াসমিন (নীল), মিজানুর রহমান মিজান (নীল), শাহনাজ পারভীন জোসনা (নীল), তপো গোপাল ঘোষ (সাদা), মোস্তফা কামাল খান (নীল), শাহ আলম (নীল), মোহাম্মাদ আবুল কাশেম (নীল), মোহাম্মাদ কামাল হোসেন (নীল), শফিকুল ইসলাম (নীল), রেহানা পারভীন (নীল), ফাতেমাতুজ জহুরা মনি (সাদা), লিলিয়া আক্তার লিলি (সাদা)।

২৫টি পদে এবারের নির্বাচনে ৬১ জন প্রার্থী অংশ নেন। নীল ও সাদার বাইরে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সবুজ প্যানেলের কেউ জয়ী হতে পারেননি।

ঢাকা বারে গতবার অর্থাৎ ২০১৪-১৫ বর্ষের নির্বাচনেও বিএনপি জোট সমর্থকদের আধিপত্য ছিল। ২৫টি পদের মধ্যে ১৯টিই ছিল তাদের দখলে।

গতবারের মতো এবারও আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের পরাজয়ের জন্য সরকার সমর্থকদের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস ও অহমিকাকে দায়ী করেছেন কয়েকজন আইনজীবী।

ঢাকা বারের আইনজীবী আমিনুল গণী টিটো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জাতীয় রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের অহঙ্কার ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই তাদের পতনের কারন।”

আরেক আইনজীবী বেলাল হোসেন জসীম বলেন, “আমি আগেই জানতাম, এরা জিততে পারবে না। ঢাকা বার সব সময়েই সরকারের বিরুদ্ধে ম্যান্ডেট দেয়। এবারও ব্যতিক্রম করেনি।”

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বারের আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা বলেন, “আওয়ামী লীগ হেরেছে সাধারণ আইনজীবীদের ওপর সরকারি আইনজীবীদের (পিপি, জিপি, এপিপি, এজিপি) অত্যাচারের কারণে।”