যুদ্ধাপরাধের বিচারের গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী: পররাষ্ট্র মন্ত্রী

যুদ্ধাপরাধের বিচারকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে না দেখে বৃহৎ পটভূমিতে দেখতে আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Feb 2015, 09:14 PM
Updated : 27 Feb 2015, 09:14 PM

শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, বাংলাদেশের আইনি কাঠামো এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ১৯৭৩ এর অধীনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ চলছে; উভয় আইনেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে।

রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আয়োজিত ‘বাংলাদেশে গণহত্যা ও বিচার’ শীর্ষ আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মাহমুদ আলী।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠনর পর ২০১০ সালে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের সহযোগীরা মানবতার বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছিল। দীর্ঘদিন ধরে এসব অপরাধের বিচার হয়নি। এ কারণে অপরাধের 'দায়মুক্তি'র সংস্কৃতি তৈরি হয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল।

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা এবং দুই লাখ নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছে বলেও সম্মেলন তুলে ধরেন তিনি। এর বাইরে সেসময় এক কোটি মানুষ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল এবং চার কোটি মানুষ তাদের সহায় সম্বল হারিয়েছে।

সম্মেলনে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্সের সভাপতি ড্যানিয়েল ফিয়ারস্টেইন এবং আর্জেন্টিনার ট্রাইব্যুনালের বিচারক ড্যানিয়েল হোরাসিও অবলিগাডো অংশ নেন।

ভিডিওবার্তা পাঠান জাতিসংঘের গণহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক উপদেষ্টা আদামা ডেয়িং।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিচার পরিচালিত হচ্ছে।

বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে এবং এর সমালোচনাকারীদের উদ্দেশে আবুল হাসান বলেন, “এমন অপরাধের বিচারকে সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখলে হবে না; এ বিচারের সুদূরপ্রসারী গুরুত্ব রয়েছে।”

বক্তব্যে মন্ত্রী বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বলেন, ১৯৭১ সালের মতোই বিএনপি-জামায়াত জোট এখনও রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নৃশংসভাবে মানুষ হত্যা করছে। এটা রাজনীতি নয়, নিষ্ঠুর সন্ত্রাস। এ নিষ্ঠুরতা বন্ধে বাংলাদেশ সরকার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন প্রত্যাশা করেন তিনি।

পাশাপাশি যেকোনো ধরনের সংলাপের সম্ভাবনা নাচক করে আবুল হাসান বলেন, যারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহিংসতা, সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয় তাদের সঙ্গে আলোচনার কোনো অর্থ দাঁড়ায় না।

সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন আগামী ১ মার্চ পর্যন্ত চলবে। বিভিন্ন দেশের গণহত্যা বিষয়ক গবেষক, বিচারক ও প্রতিনিধিসহ বাংলাদেশের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্ররা এতে অংশ নিচ্ছেন।