তাগিদের পরও বাড়ির দখল ছাড়েননি ৫ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

মানিক মিয়া এভিনিউ এবং নাখাল পাড়ার সংসদ সদস্য ভবনের (ন্যাম ফ্ল্যাট) ফ্ল্যাট ছাড়ার তাগিদ দেওয়া হলেও তা ছাড়ছেন না পাঁচজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।

সাজিদুল হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2015, 02:52 PM
Updated : 21 May 2015, 10:39 AM

গত বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি সংসদ সদস্য ভবনে মন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া সংসদ সদস্যদের ফ্ল্যাট বরাদ্দ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সংসদ কমিটি।

সে অনুযায়ী নবম সংসদে ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাওয়া সাতজনকে (যারা দশম সংসদ নির্বাচনের পরে মন্ত্রীর দায়িত্ব পান) ছেড়ে দিতে একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হয়।

এর কিছু দিন পর ১৬ ফেব্রুয়ারি বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রীর মর্যাদার কোনো সংসদ সদস্য যদি ন্যাম ফ্ল্যাটে থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেন তবে তাকে সরকার থেকে পাওয়া বাড়ি-ভাড়া ও সার্ভিস চার্জ ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে সংসদ সচিবালয়ের জমা দিতে হবে।

সংসদ সদস্য আবাসন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করা সংসদ কমিটির আহ্বানে একমাত্র সাড়া দিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। আর বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আযম কমিটিকে জানিয়েছেন তিনি ওই ফ্ল্যাটেই থাকতে চান।

বাকি পাঁচজন হলেন- তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (নাখালপাড়া ১ নম্বর ভবনের ১০৪ নম্বর ফ্ল্যাট), মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ছায়েদুল হক (মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ৪ নম্বর ভবনের ১০২ নম্বর ফ্ল্যাট), ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ (মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ৪ নম্বর ভবনের ৪০৩ নম্বর ফ্ল্যাট), নৌমন্ত্রী শাজাহান খান (মানিক মিয়া এভিনিউয়ের ৪ নম্বর ভবনের ৪০৪ নম্বর ফ্ল্যাট), বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু (নাখাল পাড়া ৪ নম্বর ভবনের ৭০৪ নম্বর ফ্ল্যাট)।

সংসদ কমিটির সভাপতি জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজের কাছে মন্ত্রীদের ফ্ল্যাট না ছাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম মন্ত্রীদের নির্ধারিত বাসায় ওঠেননি। তিনি আমাদের জানিয়েছেন ন্যাম ফ্লাটেই থাকতে চান। আমরা এখন তাকে পুনঃবরাদ্দ করব।”

তবে অন্য মন্ত্রীদের বিষয়ে তিনি কোনও কথা বলতে রাজি হননি। 

সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ছয়জনের মধ্যে একমাত্র মির্জা আজম ছাড়া বাকি কেউই সংসদ সদস্য হিসেবে বরাদ্দ পাওয়া ফ্লাটে থাকেন না।

সংসদের টেলিফোন গাইডে এই ছয়জনের মধ্যে মির্জা আজম ছাড়া পাঁচজনের বাসার ঠিকানায় সংসদ সদস্য ভবনের ঠিকানা ব্যবহার করা হয়নি; যদিও আইনগতভাবে ওই সব ফ্ল্যাট এখনও তাদের দখলে। 

বরাদ্দ ফ্ল্যাট ছেড়ে না দেওয়ার বিষয়ে কথা বলতে মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে টেলিফোন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার কোনো ফ্ল্যাট বরাদ্দ নাই। ফালতু কথা কোথা থেকে নিয়ে আসেন মিয়া, না জাইনা শুইনা।”

নসরুল হামিদ

সংসদীয় কমিটির নথিতে তার নামে ফ্ল্যাট বরাদ্দের কথা উল্লেখ রয়েছে জানালে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, “আপনার কাছে ভুল কাগজ আছে। আমি কোনো ফ্ল্যাটও নেই নাই, বাড়িও নেই নাই।

“বরাদ্দ থাকলে কী হবে? আমি কি ফ্ল্যাট দখল করে নিছি। বইলা দিলেন একটা কথা।”

বুধবার সংসদ কমিটির ৫ম বৈঠকে কমিটির সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার সময় বিষয়টি উত্থাপন করা হয়।

বৈঠকের একটি নথিতে (এর অনুলিপি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের হাতে রয়েছে) দেখা যায়, গত ১৮ ডিসেম্বর কমিটির বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়।

ওই বৈঠকে কমিটির সভাপতি আ স ম ফিরোজ বলেন, “যেসব মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সংসদ সদস্য ভবন ছেড়ে দেওয়া এবং ভাড়া দেওয়ার বিষয়ে কোনো প্রকার সহযোগিতা প্রদান করছে না,  তাদেরকে আগামী সংসদ অধিবেশনের (চলমান পঞ্চম অধিবেশন) পূর্বেই ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে।”