স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুকের এক মামলায় রায় গেছে স্বামীর পক্ষে; যাতে স্ত্রীকে জরিমানা এবং তা অনাদায়ে তিন দিনের সাজা দেয় আদালত।
বুধবার ঢাকার মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে এই রায় দেন।
দণ্ডিত আসামি মাহমুদা আক্তার উর্মি নোয়াখালীর কাজীরহাট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী।
মামলার বাদী মো. সামছুর রহমান রাজধানীর শাহবাগ এলাকার পপুলার টেলিকমের মালিক। তাদের দু’জনের বাবার বাড়ি বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ থানার একই গ্রাম রসুলপুরে।
এই আদালতের পেশকার আনোয়ারুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “উর্মি রায় ঘোষণার পর পরই তা মেনে নিয়ে একহাজার টাকা আদালতে জমা দিয়ে হাজতবাসের দায় থেকে পার পেয়েছেন। তিনি এ মামলায় আপিল করবেন না।”
বাদী সামছুর রহমানের আইনজীবী হিসেবে ছিলেন প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাস।
রায়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সাদা চোখে শুধু সমাজের এক অধ্যায়ই দেখি, অন্য অধ্যায় দেখি না। দেখলেও তা এড়িয়ে যাই। যৌতুকের দাবিতে নারীদের ওপর পুরুষের নির্যাতন দিনের আলোর মতো সত্য ও আমাদের দেশে একটি নৈমিত্তিক ঘটনা মাত্র। কিন্তু নির্যাতিতরা আদালতে আসেন না কারণ তাদের আর্থিক সঙ্গতি নেই। আর যেসব নারী আদালতে আসেন সেসব মামলার অধিকাংশই মিথ্যা মামলা।
“তবে পুরুষের বিরুদ্ধে নির্যাতনের ঘটনা তুলনায় কম হলেও সত্য। এ রায়ের মধ্য দিয়ে নারীর হাতে পুরুষ নির্যাতন বা স্ত্রীর হাতে স্বামী নির্যাতনের সত্যতা প্রকাশ পেল।”
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি যৌতুক হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করে আসামিপক্ষ। দাবি করা টাকা দেওয়া না হলে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন তারা।
পরে ২৭ এপ্রিল স্ত্রী উর্মীকে সংসারে ফিরে আসার অনুরোধ জানায় স্বামী সামছুর রহমান। তবে টাকা না পেলে সংসারে ফিরবে না বলে জানিয়ে দেয় উর্মী।
এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালের ২১ মে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে উর্মি এবং তার বাবা মনির আহম্মেদ সেলিম এবং মা সফুরা খাতুনের বিরুদ্ধে ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইনের ৪ ধারায় এ মামলা হয়।
মামলাটিতে প্রথমে পুলিশি তদন্ত এবং পরে বিচার বিভাগীয় তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়।
বিচার বিভাগীয় তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলে উর্মির বাবা-মাকে বাদ দিয়ে শুধু উর্মির বিরুদ্ধে মামলাটি আমলে নেন মহানগর হাকিম শাহরিয়ার মাহমুদ আদনান।
পরে উর্মিকে আদালতে তলব করা হলে তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নেন।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল তৎকালীন মহানগর হাকিম এম এ সালাম উর্মির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
এামলার বিচারকালে বাদী পক্ষে পাঁচজন এবং বিবাদী পক্ষে দুই জনের সাক্ষ্য নেন বিচারক অমিত কুমার দে।