মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে খাবার নিয়ে ছাত্রলীগের হাতাহাতি

ছাত্রলীগ যেন খারাপ খবরের শিরোনাম না হয়- অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর তার উপস্থিতিতেই খাবার নিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2015, 12:00 PM
Updated : 25 Feb 2015, 02:36 PM

বুধবার দুপুর ২টার দিকে পুরান ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে।

এদিন ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে যখন খাবার বিতরণ চলছিল, তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুমন ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মনিরুজ্জামান দীপুর মধ্যে খাবার নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে দুজনের হাতাহাতি শুরু হলে তাদের সমর্থকরাও তাতে জড়িয়ে পড়েন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এসে সবাইকে থামান।

হাতাহাতির সময় ক্যাম্পাসেই ছিলেন ওবায়দুল কাদের, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, বর্তমান সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম।

হাতাহাতির ঘটনাটি প্রকাশ্যে ঘটলেও খবর প্রকাশের পর ছাত্রলীগ সভাপতি সোহাগ টেলিফোন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই ধরনের ঘটনা ঘটেনি।”

পরে সুমন ও দীপুসহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতারাও দাবি করেন, হাতাহাতির কোনো ঘটনা ঘটেনি। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ফাইল ছবি)

এর আগে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদেরসহ বর্তমান নেতারা সংগঠনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাদের আচরণ ও কার্যক্রমের সমালোচনা করে তাদের সতর্ক করেন। 

আওয়ামী লীগের সভাপতিণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, “ছাত্রলীগ যেন খারাপ খবরের শিরোনাম না হয়। কারণ চট্টগ্রাম ও জগন্নাথে এটা প্রতিনিয়ত হচ্ছে। এ অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়ের সমাপ্তি টানা উচিত।

“ছাত্রলীগ, আপনারা আচরণে ডিজিটাল না, অ্যানালগই থাকুন। বড় বড় বিলবোর্ডে চেহারা পরিবর্তন করার দরকার নেই। বঙ্গবন্ধুর বই পড়ে শুদ্ধ রাজনীতি শিখুন।”

শিক্ষককে অস্ত্র ঠেকিয়ে দরপত্র বাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামের বহিষ্কারের প্রসঙ্গও আসে মন্ত্রীর বক্তৃতায়।  

“অনুষ্ঠানে শিক্ষকরা আসছেন, তারা ভয়ে আসছেন কি না, জানি না। কারণ এ শিক্ষকরাই ছাত্রলীগের নামে অভিযোগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ও আমার কাছে গিয়েছিলেন। এটা দুঃখজনক।”

আলোচনা সভায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমানও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বক্তব্যে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “ছাত্রলীগের অর্জনে বড় থাপ্পড় দিয়েছিল জগন্নাথ ছাত্রলীগ। এদের আচরণ দেখে মনে হয়, এরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ছাত্রলীগের আচরণ শেখেনি।”

“আপনাদের প্রোগ্রামে আপনাদের কয়জন কর্মী আছে, আর বাইরে থেকে কয়জন আসছে, তাও আমরা জানি,” বলেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের যে আচরণগত ত্রুটির কথা উঠেছে, তা একটি রাজনৈতিক শিক্ষা। ছাত্রলীগকর্মীদের এ শিক্ষা গ্রহণ করে শোধরাতে হবে।”

‘ঢাকা দিল্লি নয়’

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের চলমান রাজনৈতিক অবস্থার কথা তুলে ধরতে গিয়ে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার ফোনালাপের কথাও আনেন।   

তিনি বলেন, “ঢাকায় বসে অনেকে দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল হওয়ার রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু বাস্তবতা অন্যরকম।

“বাংলাদেশ ভারত না, আর দিল্লিও ঢাকা না। যাদের ৫০০ কর্মী নেই, তারা যখন কেজরিওয়াল হওয়ার স্বপ্ন দেখে, তখন তাদের করুণা করতে ইচ্ছে হয়।”

ডাকসু নির্বাচনে ওবায়দুল কাদেরকে হারিয়ে ভিপি নির্বাচিত হওয়া মান্না চলমান পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে উসকানি দেওয়ার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।

ছাত্রলীগ থেকে জাসদ, বাসদ, জনতা মুক্তি পার্টি হয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছিলেন মান্না।  

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় সংস্কারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের পদ হারানো মান্না নাগরিক ঐক্য গড়ে বিভিন্ন আলোচনা সভায় সরব ছিলেন।

সম্প্রতি বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয়ের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার টেলিকথোপকথন ফাঁস হয়, যাতে তাকে সরকার পতনে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলা এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের উদ্যোগ নিতে তার আগ্রহের বিষয়টি বলতে শোনা যায়।   

ওবায়দুল কাদের বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে মানুষ চেনা যাচ্ছে। যারা সুন্দর কথা বলেন, তাদের মুখোশ উন্মোচিত হলে যে চিত্র দেখা যায়, তা আমরা দেখেছি।”