গোয়েন্দা কার্যালয়ে মান্না

অডিও ক্লিপ ফাঁস নিয়ে তুমুল আলোচনায় থাকা মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটকের ২১ ঘণ্টা পর গুলশান থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

লিটন হায়দারও গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Feb 2015, 06:29 PM
Updated : 24 Feb 2015, 07:57 PM

মঙ্গলবার রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ককে থানায় নেওয়ার পরপরই গোয়েন্দা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তার আগ পর্যন্ত তাকে আটকের খবর অস্বীকার করে আসছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। অবশ্য র‌্যাবের কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমে আসেনি।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পেনাল কোডের ১৩১ ধারায় গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই ধারায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানি দেওয়া কথা বলা হয়েছে।”

২৪ ফেব্রুয়ারি গুলশান থানার এসআই সোহেল রানার দায়ের করা ৩২ নম্বর এই মামলায় অজ্ঞাত আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে।

বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশজুড়ে।

এর মধ্যেই মঙ্গলবার ভোররাতে মান্নাকে বনানীতে তার ভাইয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়।

তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূর আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জিজ্ঞাসায় বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।

গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও বলেন, “মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেপ্তার কোনোটাই করা হয়নি। তবে অন্য কোনো সংস্থা তাকে আটক করেছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

পুলিশ আটকের খবর অস্বীকার করার পর মান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুরে বনানী থানায় একটি জিডি করা হয়।

মান্নার বড় ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানার করা ওই জিডিতে বলা হয়, নিজের কলাবাগানের বাসা থেকে মান্না বনানীর ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে ৬-৭ জন লোক গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বনানীর বাসা থেকেই মান্নাকে নিয়ে যায়।

“রাত সাড়ে ৩টার দিকে সাদা পোশাকের ৫/৬জন বাসার গেটে এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেয় এবং এখানেই মান্না আছে বলে জানায়। এসময় বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকার করে। পরে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে দরজা খুলে দেওয়া হয়।”

এরপরই ওই ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বলে বেগম সুলতানা জানান।

কিন্তু পরে পুলিশের অস্বীকারের খবর গণমাধ্যমে দেখে মান্নার সন্ধানে পুলিশের শরণ নেওয়ার কথা জিডিতে উল্লেখ করেন বেগম সুলতানা।  

জিডির পর বনানী থানার ওসি ভূইয়া মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মান্নার অবস্থান জানতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন।

মান্নাকে আটকের খবরে বিএনপির প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মান্না বিএনপির সঙ্গে যোগসাজশ করে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও টেপে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মান্নাকে কথা বলতে শোনা যায়।

এর মধ্যে খোকার সঙ্গে আলাপে এক সময়কার ডাকসুর ভিপি মান্নাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তির সঙ্গে কথায় সেনা হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্যোগী হতে তার আগ্রহের প্রকাশ ঘটে।

খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তির সঙ্গে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মান্নার কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

এদিকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পুলিশ।

শাহবাগার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে থানার ওসি বা কোনো এসআই বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য নোট করা হলো উল্লেখ করে একটি জিডি করে থাকেন।

“তেমনি আজকে (সোমবার) মান্না, খোকা ও অজ্ঞাত ব্যক্তির কথোপকথনের খবরটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ওসি সিরাজুল ইসলাম থানায় জিডি করে রেখেছেন।”