হুমায়ুন আজাদ হত্যা: দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবরোধের খাড়া

হুমায়ুন আজাদের ওপর হামলার ১১ বছর পূর্ণ হতে চললেও এখনো বিচার পায়নি তার পরিবার ও ভক্তরা। বিচার কাজ অনেকটা এগোলেও বিরোধী জোটের অবরোধে ফের মাঝখানে আটকে গেছে।

প্রকাশ রঞ্জন বিশ্বাসবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Feb 2015, 12:22 PM
Updated : 14 Feb 2015, 12:25 PM

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে অবরোধ চালিয়ে আসা বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় থাকাকালে ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়েছিলেন লেখক-অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

তার ওপর হামলার জন্য নিজেই মৌলবাদী গোষ্ঠীকে দায়ী করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার চলছে।

এ আদালতের পেশকার ফয়েজ আহমেদ জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১০টি আলোচিত মামলার বিচার দ্রুত শেষ করতে বলা হয়েছে, যার মধ্যে হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলাও রয়েছে।

তারপরও মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের উপস্থিতির অভাবে ঝুলে যাচ্ছে বিচার কাজ।

গত ১৪ জানুয়ারি থেকে আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে বিভিন্ন দিন রাষ্ট্রপক্ষের ১৯ জন সাক্ষীকে আদালতে হাজির করতে নির্দেশ দেন বিচারক। রাষ্ট্রপক্ষ আদালতে সাক্ষী আনতে ব্যর্থ হওয়ায় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা, হাকিম, চিকিৎসককে আদালতে আনতে গত ১২ নভেম্বর জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

এরইমধ্যে গত ৫ জানুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অবরোধ ডাকেন। নিরাপত্তার কারণে আসামিদের কারাগার থেকে আদালতে না আনতে পারায় গত এক মাসে তিন দফা পিছিয়ে যায় মামলার শুনানি।

রাষ্ট্রপক্ষে সাক্ষী হাজির থাকলেও গত ১৪ জানুয়ারির পর ৫ ও ১১ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণ পিছিয়ে গেছে। আইন অনুযায়ী আসামিদের সামনে সাক্ষ্য নেওয়ার নিয়ম থাকায় তা পিছিয়ে যায়।

এ আদালতের বিচারক রুহুল আমীন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী দিন রেখেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী  এ বি এম বশির উদ্দিন মিঞা ও বিপুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, এ মামলার বিচার অনেক দূর এগিয়েছে।রাষ্ট্রপক্ষে ৫৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জনের সাক্ষ্য নেওয়া শেষ হয়েছে।

“কিন্তু মামলা প্রমাণে অতি গুরুত্বপূর্ন চার থেকে পাঁচজন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া এখোনো বাকি রয়েছে। অবরোধ না থাকলে কাশিমপুর কারাগার থেকে আসামিদের নিয়ে আসা সম্ভব হত এবং মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলতি মাসেই শেষ করা যেত।”

এ মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- মো. মিজানুর রহমান মিনহাজ ওরফে শফিক ওরফে শাওন ওরফে হামিম ওরফে হাসিম, আনোয়ারুল  আলম ওরফে ভাগ্নে শহীদ, নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে জে এম মবিন ওরফে সাবু, সালেহীন ওরফে সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তাওহিদ এবং হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাকিব ওরফে রাসেল।

এরা সবাই নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা।  আসামিদের মধ্যে নূর মোহাম্মদ শামীম ওরফে সাবু, মিনহাজ, সালেহীন পলাতক রয়েছেন।

মামলার আসামিদের মধ্যে জেএমবির শূরা সদস্য আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ এবং হাফিজ মাহমুদ কারাগারে আছেন। শুনানি চলাকালে তাদেরই আদালতে হাজির করা হয়ে থাকে।

পলাতক তিন আসামির মধ্যে মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক এবং সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিনকে গত বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে পুলিশ ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয় জঙ্গিরা। আর নূর মোহাম্মদ ওরফে সাবু শুরু থেকেই পলাতক।

তাদের অনুপস্থিতিতেই মামলার বিচার কাজ চলছে। মামলায় সর্বোচ্চ শাস্তির ৩০২ ধারা থাকায় পলাতক আসামি মিনহাজ ও সালেহীনের পক্ষে রাষ্ট্রের খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি রাতে একুশে বইমেলা থেকে ফেরার পথে বাংলা একাডেমীর উল্টো পাশের ফুটপাতে হামলার শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ।

তার ওপর হামলার পর বিক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা। কয়েক সপ্তাহ আন্দোলনের এক পর্যায়ে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি দিতে গেলে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও পুলিশ, যাতে আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েক শিক্ষার্থী।

হুমায়ুন আজাদের ওপর চরমপন্থী ইসলামী জঙ্গিরা এই হামলা চালিয়েছিল বলে পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে।

কয়েক মাস চিকিৎসা নেয়ার পর ২০০৪ সালের অগাস্টে গবেষণার জন্য জার্মানিতে যান এই লেখক। পরে ওই বছর ১২ অগাস্ট মিউনিখে নিজের ফ্ল্যাট থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

প্রথমে একটি হত্যাচেষ্টা মামলা হলেও সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে এটি হত্যামামলায় পরিণত হয়।

২০১২ সালের  ১০ সেপ্টেম্বর জেএমবির ওই পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলার অভিযোগ গঠন হয়।

হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ওয়াজে বিষোদগার করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে প্রথমে আসামি করা হলেও পরে তাকে বাদ দেয়া হয়।