মাছ চাষে ৫০ হাজার কর্মসংস্থান

যশোরের শার্শায় মাছ চাষ করে কয়েকহাজার পরিবারে সুদিন এসেছে। এর ফলে উপজেলার মাছের চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানিও হচ্ছে।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Feb 2015, 03:15 PM
Updated : 5 Feb 2015, 03:15 PM

স্থানীয় উদ্যোগের ফলে তৈরি হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে দেশের প্রথম ‘ফরমালিন মুক্ত’ মাছের বাজার।

উপজেলার পনেরটি বাঁওড় ও সাড়ে ছয় হাজার পুকুর-জলাশয়ে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, চাহিদার চারগুণ বেশি মাছ উৎপাদিত হচ্ছে এখানে। প্রতি বছরে মাছের চাহিদা সাড়ে পাঁচ হাজার মেট্রিক টন, আর উৎপাদিত হয় ২০ হাজার মেট্রিক টন।

“মাছ চাষ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, পরিবহন ও বিপণনে ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা। স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে সাড়ে চার হাজার পরিবার।”

আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই উপজেলার চাষিরা মাছ চাষ করছেন। বছরে প্রতি একরে পাঁচ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। আর মাছ বিক্রি করতে পারছেন আট লাখ টাকার।

অধিকাংশ মাছচাষি দেশি রুই-কাতলার পাশাপাশি দ্রুত বর্ধনশীল সিলভার কার্প, জাপানি রুই,  গ্রাস কার্প, মাগুর,  কই, পাঙ্গাস, নাইলোটিকা, তেলাপিয়া ও বাটা মাছ চাষ করে থাকেন বলে জানান মাহাবুবুর রহমান।

উপজেলা মৎস্য পরিদর্শক আমিনুর রহমান বলেন, শার্শার মাছ সম্পূর্ণ ফরমালিন মুক্ত।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন উপজেলার তিনটি বড় মাছবাজার বেনাপোল, বাগআঁচড়া ও নাভারনের মাছ ব্যবসায়ী, মাছচাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে উপজেলার মাছবাজারকে সম্পূর্ণ ‘ফরমালিন মুক্ত’ বাজার ঘোষণা করেছেন।

এই বাজার থেকে ফরমালিন মুক্ত মাছ দেশের অভ্যন্তরে সরবরাহ করা হয় বলে এখানকার মাছের চাহিদাও অনেক বেশি বলেও জানান তিনি।

মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুর আরও বলেন, ভারতের কলকাতার স্থানীয় বাজারে ফরমালিন মুক্ত শার্শার সাদা মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। রপ্তানিকারকরা এই উপজেলার বাজার থেকে সংগ্রহ করে বছরে ১৫ হাজার মেট্রিক টন মাছ ভারতে রপ্তানি করে থাকেন।

শার্শার ছোট বসন্তপুর গ্রামের ফিরোজ মামুন ২০০৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ডিগ্রি অর্জনের পর বেকারত্ব ঘোচাতে মাছ চাষ শুরু করেন। প্রথমে একটু সমস্যায় পড়লেও বছর যেতে না যেতেই এর সুফল পেতে শুরু করেন।

ফিরোজ বলেন, “এখন ১৪ বিঘা জলকরের দুটি পুকুরে মাছ চাষ করছি। মাসে সাত হাজার টাকা বেতনে দুজনকে ওই পুকুর সার্বক্ষণিক দেখাশুনার জন্য রেখেছি। মাছ ও পানির গুণাগুণ বুঝে এদের সঙ্গে কাজ করার কারণে আমার সফলতা এসেছে।”

তিনি বলেন, দুটি পুকুরে মাছ ছাড়া থেকে শুরু করে তার খাদ্য,ওষুধ ও তদারকিতে বার্ষিক খরচ হয় প্রায়  আট লাখ টাকা। তবে বছর শেষে আসে প্রায় ১৩ লাখ টাকা।

কায়বার গ্রামের মাছচাষি রিজিয়া খাতুন বলেন, “১০ শতক জলাশয়ে মাছ চাষ করে আমার সংসারে সুখ ফিরেছে। ওই জলাশয়ের বেড়িতে বিভিন্ন ধরনের সবজি লাগিয়েছি। সবজি বেচেও পাচ্ছি বেশ টাকা।”

সহজ শর্তে সরকারি ঋণ সুবিধা পেলে মাছ চাষের ক্ষেত্র বাড়ানো সম্ভব হবে বলেও জানান রিজিয়া।

বাগুড়ি গ্রামের ইব্রাহিম হোসেন ১০ বিঘা জলাশয়ে মাছ চাষ করছেন। শিক্ষিত ও কর্মঠ এ যুবক মাছ চাষ করে পরিবারে সুদিন ফিরিয়ে এনেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করতে খাদ্য ও পুষ্টির জন্য ওষুধের প্রয়োজন। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণির কোম্পানি ভেজাল খাদ্য ও নিম্নমানের ওষুধ বাজারে ছেড়েছে।

ইব্রাহিম বলেন, “আমরা ওইসব ভেজাল জিনিস কিনে প্রতারিত হচ্ছি। সরকার যদি প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তবে মাছ চাষ বন্ধ হয়ে যাবে।”