মিরপুর অগ্নিকাণ্ড: ১০ জনের লাশ নিলো শোকাহত স্বজনরা

রাজধানীর মিরপুরে অ্যাপকো প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের মধ্যে ১০ জনকে সনাক্তের পর লাশগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2015, 11:28 AM
Updated : 1 Feb 2015, 05:50 PM

শনিবার সন্ধ্যায় অগ্নিকাণ্ডের পর রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে নয়টি লাশ সনাক্ত করেন স্বজনরা। রোববার আরও একটি লাশ সনাক্ত করা হয়। এরপর লাশগুলো হস্তান্তর হয়।

যাদের লাশ হস্তান্তর হয়েছে, তারা হলেন- আল মাহমুদ (১৯), খোকন মিয়া (২৫), মোকলেসুর রহমান বাচ্চু (৩৬), মুকুল মিয়া (২২), তানভির হাবিব (২৯), ফাতেমা হোসেন ইশিতা (২৮), শবনম পারভিন ইতি (২৭), ওয়াজি উল্লাহ (৩৬), রাসিয়া বেগম (৩৫) ও মন্টু মিয়া (২৯)।

এদের মধ্যে বরিশালের রাসিয়া বেগম ওই কারখানায় আগুন লাগার পর ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে দোতলায় আটকা পড়ে মারা যান। রাসিয়া ছিলেন পিয়ন, তার ১৯ বছরের ছেলে রাসেল ছিল শ্রমিক।

দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার বড় রাসেল লাশ নেওয়ার আগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে এইচএসসি পড়ুয়া ছোট ভাই ও বোনকে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল; অশ্রুবিহীন শূন্য দৃষ্টি ছিল তার চোখে।

পাশে দাঁড়ানো তার মামা রাসেলকে কাঁদাতে চেষ্টা করলেও রাসেলের কোনো সাড়া নেই, সে যেন এই জগতেই নেই।

একই কারখানায় প্রশাসনিক বিভাগে কাজ করতেন শবনব পারভীন ইতি। তিন বোন দুই ভাইয়ের সবার ছোট ইতির মৃতদেহ সনাক্ত করেছেন তার বড় বোন সুমী আক্তারসহ স্বজনরা।

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস এবং কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তরের দুটি তদন্ত দল।

এ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় মর্গের সামনে একটি দপ্তর খুলেছে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর।

ওই অগ্নিকাণ্ডস্থল থেকে ১১ জনের লাশ এবং অগ্নিদগ্ধ দুটি দেহের খণ্ডাংশ নেওয়া হয়েছিল মর্গে। দুটি খণ্ডাংশ কি একজনের, না কি দুজনের, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।  

এদিকে অগ্নিকাণ্ডে আহত দুজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং একজন পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রোববার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা মেলে চিকিৎসাধীন নাঈমের  (১৪)। আগুন থেকে বাঁচতে কারখানার দুতলা থেকে লাফ দেয় সে। তার বাম পা ভেঙে গেছে, মাথায়ও আঘাত রয়েছে।

বিছানার পাশে বসা তার মা মোরশেদা বেগম বললেন, নাঈমের বাবা মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় ছেলেটিই তার সংসারের হাল ধরেছিল। দেড় বছর ধরে কারখানায় ফুটফরমাশ খাটার কাজ করত নাঈম। এখন পর্যন্ত কোনোরকম আর্থিক সহযোগিতা পাননি।

ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে কামাল হোসেন (৪০) ও তৌহিদুল ইসলাম (৪৫)। দুজনই ওই কারখানাটির নিরাপত্তারক্ষী। শনিবার রবিউল ইসলামকে (৩০) প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

শনিবার সন্ধ্যায় মিরপুর ১ নম্বর সেকশনে সনি সিনেমা হলের বিপরীত দিকের অ্যাপকো বাংলাদেশ লিমিটেডের পাঁচ তলা কারখানায় আগুন লাগে।