মিরপুরে আগুন: ১১টি লাশ, দুটি খণ্ডাংশ উদ্ধার

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বর সেকশনে প্লাস্টিক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন বলে সর্বশেষ খবর জানিয়েছে পুলিশ।

প্রধান অপরাধ বিষয়ক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Jan 2015, 12:09 PM
Updated : 31 Jan 2015, 05:59 PM

শনিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সনি সিনেমা হলের বিপরীত দিকের অ্যাপকো বাংলাদেশ লিমিটেড নামে ওই প্লাস্টিক কারখানায় আগুন লাগে বলে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানিয়েছে।  

তাৎক্ষণিকভাবে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী কিংবা পুলিশ কেউই মৃতের সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারছিল না।

রাত সোয়া ৮টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের বলেন, “আটজনের লাশ আমরা পেয়েছি।”

লাশ উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও পঙ্গু হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল।

সবগুলো লাশ ঢাকা মেডিকেলের মর্গে নেওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে দারুস সালাম থানার উপপরিদর্শক আবু বকর সিদ্দিক সাংবাদিকদের বলেন, “১১টি পূর্ণাঙ্গ লাশ মর্গে রেখে আসা হয়েছে। সেই সঙ্গে দুটি খণ্ডাংশও নেওয়া হয়েছে।”

খণ্ডাংশ দুটি একজনের, না কি দুজনের তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যদি একজনের হয়, তাহলে এই অগ্নিকাণ্ডে নিহতের সংখ্যা হবে ১২, যদি দুজনের হয়, তবে সংখ্যাটি বাড়বে।

নিহতদের মধ্যে তিনজন নারী এবং বাকিরা পুরুষ বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা বকর। নিহতদের কারও পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

এর আগে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক আহমেদুল কবীর চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, তাদের কাছে যাওয়া দুজনের দেহ এতটাই পুড়েছে যে চেনা যাচ্ছে না।

চারজনের লাশ ওই হাসপাতালে গিয়েছিল। তার আগে সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই নারী ও এক পুরুষের লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে নেওয়া হয়।

এই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ চারজন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন বলে মহানগর পুলিশ কমিশনার জানান।

অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর সদস্যরা আগুন নেভানোর সময় এই বাহিনীর মহাপরিচালক আলী আহমেদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”

তবে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে উদ্ধারকর্মীদের উদ্ধৃত করে তিনি তখন বলেছিলেন।

ঘটনার পরপরই দারুস সালাম থানার ওসি সেলিমুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, অগ্নিকাণ্ডে আটজনের মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন।

পাঁচ তলা ওই ভবনটিতে কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত, সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি এখনও।

ঘটনাস্থলে আগুনে নেভাতে কাজ করা অগ্নিনির্বাপক বাহিনীর পরিচালক মেজর শাকিল আহমেদ বলেন, “মনে হচ্ছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুন ধরার পর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ ঘটে তা ছড়িয়ে পড়ে।”

প্লাস্টিকের গৃহস্থালি বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির ওই কারখানায় অনেকগুলো গ্যাস সিলিন্ডার ছিল। বিস্ফোরিত গ্যাস সিলিন্ডারও সেখানে দেখা গেছে। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আগুন ধরার আগে তারা বিকট শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন।

অগ্নি নির্বাপক বাহিনীর মহাপরিচালক আলী আহমেদ জানান, এই অগ্নিকাণ্ড তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করেছেন তারা।

শুরুতে অগ্নিকাণ্ডস্থলটি বিপণি বিতান নাসিম প্লাজা বলে অগ্নিনির্বাপক বাহিনী জানালেও পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, নাসিম প্লাজার পেছনের পাঁচতলা ওই কারখানা ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।

ভবনটির চার তলার ওপর টিনশেড দিয়ে আরেকটি তলা করা হয়েছিল। আগুন এক তলা থেকে একদম ওপর পর্যন্ত ছড়ায়।

অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানার মালিকপক্ষের কাউকে সেখানে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা জানিয়েছে, কারখানাটিতে কয়েকশ’ শ্রমিক কাজ করেন।

আগুনের খবর পেয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নুও ঘটনাস্থলে যান। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই কারখানার কর্মপরিবেশ ঠিক ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখতে চার সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হবে। কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবাসিক এলাকায় আর কোথাও কারখানা রয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে বলে প্রতিমন্ত্রী জানান।