শহীদ মিনারে শান্তির জন্য সমাবেশ

হরতাল, অবরোধে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শান্তি সমাবেশে করেছে শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2015, 05:03 PM
Updated : 30 Jan 2015, 08:39 PM

শুক্রবার ফেইসবুকভিত্তিক ইভেন্ট ‘হোকপ্রতিবাদের’ এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন অবরোধ সহিংসতার শিকার পরিবারের সদস্যরাও।

এ সময় তারা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের মতো সহিংসতা থেকে সরে আসতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

পেট্রোল বোমায় আহত ইডেন কলেজের এক ছাত্রীর বাবা মোহাম্মদ খোকন বলেন, “মেয়ের দগ্ধ শরীর দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। বাবা হিসেবে এসব আর সহ্য করতে পারছি না। মেয়ে বিছানায় ছটফট করছে।

“খালেদা জিয়াকে বলবো- এসব পেট্রোল বোমার কর্মসূচি বন্ধ করুন। অন্য কোনো পথে আন্দোলনের চিন্তা করুন।”

প্রবীণ সাংবাদিক আবেদ খান বলেন, বাংলাদেশ এখন সর্বশেষ যুদ্ধের মুখোমুখি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের হবে, নাকি রাজাকারদের হবে এটি তা নির্ধারণ করে দেবে।

“এই পরিস্থিতিতে অনেকে আবার সংলাপের কথা বলছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসে সংলাপের অভিজ্ঞতা ভালো নয়। মানুষকে দগ্ধকারীদের সঙ্গে সরকার সংলাপ করতে চাইলেও মুক্তিযুদ্ধে বিশ্বাসী মানুষ তা মেনে নেবে না।”

সদ্য প্রয়াত খালেদাপুত্র আরাফাত রহমান কোকো ‘বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছিলেন’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি কোকোকে, খালেদা জিয়াকে, তারেক রহমানকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করেছে।

বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে নাট্যকার রামেন্দু মজুমদার বলেন, দাবি আদায়ের নামে তারা সন্ত্রাসী আন্দোলন করে যাচ্ছে। বার্ন ইউনিটে গেলে তারা আন্দোলনের ফসল দেখতে পারবে। এসব সন্ত্রাসীকাণ্ডের বিরুদ্ধে আর প্রতিবাদ নয়; প্রতিরোধ করার সময় এসেছে।

“সামনে ২ ফেব্রুয়ারি এসএসসি পরীক্ষাকে কাজে লাগিয়ে আপনারা আন্দোলন থেকে বেরিয়ে আসুন। আর সরকারকে বলবো আপনারা বিরোধী দলকে কর্মসূচি পালনের সুযোগ করে দিন। তবে সেই কর্মসূচি অবশ্যই শান্তিপূর্ণ হতে হবে।”

স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল বলেন, “আমার প্রতিবাদ কোনো মানুষের বিরুদ্ধে নয়; জানোয়ারের বিরুদ্ধে। যারা মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে হত্যা করে তারা মানুষ নয়, জানোয়ার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, এদেশের কিছু দানব আজ মানুষকে হত্যা করছে, পুড়িয়ে মারছে। ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে-দানবের বিরুদ্ধে সব সময় মানুষের বিজয় হয়েছে।

“আজকে এসব সহিংস কর্মকাণ্ডের শুধু প্রতিবাদ যথেষ্ট নয়, ১৬ কোটি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোদ গড়ে তুলতে হবে।”

প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মেসবাহ কামাল চৌধুরী বলেন, দেশে এখন যুদ্ধ চলছে, যা বাংলাদেশ বিরোধীরা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে, আগামী দিনে অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র হবে-নাকি মৌলবাদি রাষ্ট্র হবে, সত্যিকারের বাংলাদেশ হবে-নাকি মিনি পাকিস্তান হবে।

জাসদ নেতা নাজমুল হক প্রধান বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক শক্তি নয়; তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের মত পরিণত করতে আন্দোলনের নামে নাশকতা করছে।

নব্বইয়ের ছাত্রনেতা শফি আহমেদ বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কাজ করছে। গুপ্তহত্যা, গুপ্তহামলা চালিয়ে গণতন্ত্র কায়েম করা যায় না। শুধু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এসব সন্ত্রাসীকে মোকাবেলা করা যাবে না। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

ঢাবি শিক্ষক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ, সাবেক তথ্য কমিশনার অধ্যাপক সাদেকা হালিম, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ভিসি আব্দুল মান্নান চৌধুরী, কবি আসলাম সানি, যুব মহিলা লীগ নেত্রী অপু উকিল, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী (বুলবুল মহলনবিশ), মুক্তিযোদ্ধা বিচ্ছু জালাল, ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামসুল কবির রাহাতসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যুবসমাজের প্রতিনিধিরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে আসেন।

শনিবার সারাদেশে শোক দিবস পালন এবং বিকালে শহীদ মিনারে শোকসভা পালন করবে ‘#হোকপ্রতিবাদ’।

চলতি মাসের ৫ তারিখ থেকে বিএনপি জোটের লাগাতার অবরোধে বাসে পেট্রোল বোমা ও আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন অন্তত পনের জন যাত্রী। এছাড়া প্রায় একশ’ মানুষ দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

প্রায় এক সপ্তাহ আগে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকভিত্তিক ইভেন্ট #হোকপ্রতিবাদ।

শিল্পী চারু মজুমদার, কাজী টিটু, শাফি সমুদ্র, সুমন কোতোয়াল, ঋষি এস্তেবানসহ একদল যুবক এই প্রতিবাদের প্রথম আহ্বানকারী।