ভূমিধসের ঝুঁকিতে বরেন্দ্র অঞ্চল

নওগাঁর মান্দা উপজেলায় ভূমিধসে একটি গভীর নলকূপ তলিয়ে যাওয়ার পর বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকির কথা আবার স্মরণ করিয়ে দিলেন ভূতত্ত্ববিদসহ সংশ্লিষ্টরা।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Jan 2015, 10:16 AM
Updated : 30 Jan 2015, 11:03 AM

গভীর নলকূপের মাধ্যমে অব্যাহত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের কারণে ভূমিধসের ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলেছে।

ভবিষ্যৎ ঝুঁকি এড়ানোর জন্য ভূগর্ভের বদলে উপরের পানির ব্যবহার বাড়ানোর পরামর্শ দেন ভূতত্ত্ববিদসহ স্থানীয় সচেতন অংশের সদস্যরা।   

স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার নওগাঁর মান্দা উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামে দুদফা ভয়বহ ভূমিধসে একটি গভীর নলকূপ মাটির নীচে তলিয়ে গেছে।

এর আগে গত বছর নওগাঁর পোরশা উপজেলার শুড়িপুকুর গ্রামে একইভাবে ভূমিধসে একটি গভীর নলকূপ মাটির নিচে হারিয়ে যায়।

মোহাম্মদপুর গ্রামের বিলীন হওয়া গভীর নলকূপের অপারেটর মোস্তাফিজুর রহমান সুমন জানান, ১৯৮৭ সালে গভীর নলকূপটি স্থাপন করে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

বুধবার রাত ২টার দিকে পানির হাউস সংলগ্ন এলাকায় সোঁ-সোঁ শব্দে তার ঘুম ভেঙে যায়। সেখানে গিয়ে দুই ফুট গোলাকার একটি গর্ত দেখতে পান তিনি।

বৃহস্পতিবার সকালে সেখানে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে মুহূর্তের মধ্যে নলকূপের হাউজিংসহ (১৮ ইঞ্চির লোহার পাইপ) পানির হাউজটি অন্তত ৫০ ফুট মাটির নিচে চলে যায়।

দুপুরের দিকে দ্বিতীয় দফা ধসে প্রায় ৪০ ফুট এলাকাজুড়ে গভীর নলকূপের পুরো ঘরটি মাটির নিচে তলিয়ে যায়।

সুমান জানান, সংবাদটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শতশত নারী পুরুষ তা দেখার জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।

এ নলকূপের পানি দিয়ে মোহাম্মদপুর, মহানগর ও কালীগ্রাম মাঠের ৩০০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়ে থাকে। ইতোমধ্যে ২০০ বিঘার অধিক জমিতে চারা রোপন করা হয়েছে। এসব জমিতে শুধু চারা রোপন করতে প্রতি বিঘায় তাদের খরচ হয়েছে ৪ হাজার টাকা।

নলকূপটি ধসে পড়ায় রোপা হয়েছে এমন ধানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব ও খনিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু। এ ধরনের ঘটনা আরও ঘটতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

অধ্যাপক তাপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মাটির নিচে ‘কোন অব ডিপ্রেশন’ তৈরি হওয়ার কারণে এ ধরনের ভূধসের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তা ১৫ বছর আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল।

আরও ভয়াবহ ঘটনার আশঙ্কা করে তাপু বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি মাটির খুঁটি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ অতিরিক্ত পানি উত্তোলন করার কারণে মাটি ও পানির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এ অঞ্চলে এলাকাভেদে সেচ মৌসুমে ভূগর্ভে মাটি থেকে পানির দুরত্ব ৮ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত হয়।

কিন্তু যে পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে পরবর্তীতে সে পানি পূরণ হচ্ছে না। এভাবে প্রতিবছর ভূগর্ভে মাটির সঙ্গে পানির দূরত্ব বাড়ছে।

যখন ভূগর্ভের মাটি তার ‘সাপোর্ট’ হারাবে তখন সেটি ধসে পড়বে।

এভাবে মান্দার মোহাম্মদপুর গ্রামে ভূমিধসের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করেন অধ্যাপক তাপু।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, বিষয়টির কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে।

খবর পেয়ে মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুর রহিমসহ বিএমডিএ-এর কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে জানান মাহফুজুর রহমান।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, এ ধরনের ভূমিধসের ঘটনা ঘটবে তা ১৫ বছর আগেই আশঙ্কা করেছিলেন ভূতত্ত্ববিদরা।

এর প্রেক্ষিতে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমিয়ে ভূউপরস্থ পানির ব্যবহার বাড়াতে এ অঞ্চলের মানুষ আন্দোলন করছে।

কিন্তু এ নিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ফলে আগামীতে আরও ভয়াবহ ভূমিধসের আশঙ্কা করছেন তিনি।