সরকার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচার করেনি: এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশে হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেপ্তারের মতো ‘গুরুতর’ ঘটনায় সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে বলে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 02:10 PM
Updated : 29 Jan 2015, 02:10 PM

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই মানবাধিকার সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত তথ্য-প্রমাণ থাকার পরও সরকার নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা বা অন্য কোনো নিয়ম লংঘনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পদক্ষেপ নেয়নি।

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে ‘বিতর্কিত’ হিসাবে উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলছে, ওই নির্বাচন ঘিরে কয়েকশ লোক হতাহত হয়েছেন, আর এই সহিংসতার জন্য ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলে থাকা দুই পক্ষই দায়ী। 

“বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকরা পেট্রোল বোমা ছুড়ে হরতাল ও অবরোধ কার্যকর করতে চেয়েছে। নির্বাচনের আগে ও পরে হিন্দু ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বাড়ি ও দোকানপাটে হামলাও চালানো হয়েছে।   

“জবাবে সহিংসতার জড়িত থাকার অভিযোগে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার দমন অভিযান চালিয়েছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চালিয়েছে হত্যা, গুম, গণগ্রেপ্তার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তি ধ্বংসের মতো বিচার বহির্ভূত কর্মকাণ্ড।”   

বিশ্বের ৯০টি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১৪ সালে বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি তুলে ধরা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে সরকারের ভূমিকার ক্ষেত্রে গতবছর মে মাসে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি ছিল ‘একমাত্র ব্যতিক্রম’।      

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া বিভাগের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “র‌্যাবের কয়েকজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ, কিন্তু কেবল পারিবারিক বা রাজনৈতিক যোগাযোগ আছে এমন লোকজনই যাতে ন্যায়বিচারের সুবিধাভোগী না হয় তা সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতক্ষণ সরকারের স্বার্থ রক্ষা করছে ততক্ষণ সরকার তাদের অবাধ স্বাধীনতা দিয়ে যাচ্ছে এবং তাদের বাড়াবাড়ির বিষয়ে চোখ বন্ধ করে থাকছে- অনেকদিন ধরে বাংলাদেশে এ প্রবণতাই চলছে, তা যে দলই ক্ষমতায় থাকুক।”

বাংলাদেশে ২০১৪ সালকে এইচআরডব্লিউ চিহ্নিত করেছে ‘হামলা, গুম ও খুনের’ বছর হিসাবে।

সংস্থাটি বলেছে, আগের বছরের মতো ২০১৪ সালেও বাংলাদেশ সরকার সমালোচকদের ‘দমনের জন্য’ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বছরই এনজিওগুলোর ‘বিদেশি তহবিল নিয়ন্ত্রণে’ একটি নতুন আইনের খসড়া করা হয়েছে। এছাড়া সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য একটি নীতিমালা করা হয়েছে, যার লক্ষ্য ‘সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ প্রচার নিয়ন্ত্রণ।’  

প্রতিবেদনে বাংলাদেশে বিয়ের বয়স কমিয়ে আনতে সরকারের চিন্তাভাবনার সমালোচনা করা হয়েছে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার সুযোগ বাড়াতে সরকার শ্রম আইন সংশোধন করলেও সংগঠন না করার বিষয়ে কারখানা মালিকদের চাপ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।  

এইচআরডব্লিউ বলছে, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা চলছে ধীর গতিতে।

ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, “দীর্ঘ সময় পর সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের পোশাক খাতের কাজের পরিবেশের উন্নতি ঘটাতে আগ্রহী হয়েছে। এই পরিবর্তনকে ধরে রাখতে হবে।... যথেষ্ট করা হয়েছে- এমন আত্মতুষ্টি যেন কখনোই চিন্তায় স্থান না পায়- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে, কারণ এতোদিনে বাংলাদেশে শিল্প কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপত্তা  নিশ্চিতের কাজটি শুরু হয়েছে মাত্র।”