তাই বাসযোগ্য শহর গড়ে তুলতে পরিকল্পিত নগরায়ন, নদীদূষণ বন্ধ, পৃথক পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা এবং নগর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম ক্লাবে অনুষ্ঠিত ‘নগর পরিস্থিতি: বাসযোগ্য চট্টগ্রামের জন্য শাসন ব্যবস্থা’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “নগর পরিকল্পনায় আমাদের কোনো দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ছিল না। একটা শিল্প এলাকা করার প্রয়োজন দেখা দিলে করা হল তেজগাঁও এ। এখন সেটা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্রে চলে এসেছে।
“এখন ঢাকা শহর বালু নদী, তুরাগ নদী হয়ে কেরানীগঞ্জ পেরিয়ে গেছে। একই অবস্থা চট্টগ্রামেও। বায়েজিদ বোস্তামিতে শিল্পাঞ্চল করা হল, যা এখন শহরের মাঝখানে চলে এসেছে।”
গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ বলেন, পরিকল্পনাহীনভাবে শহর বেড়ে উঠেছে। বুড়িগঙ্গায় গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্য, বৃষ্টির পানি আর পয়ঃবর্জ্য সব এক হয়ে গেছে।
“চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। চট্টগ্রাম-ঢাকা শুধু নয়, প্রত্যেকটা শহরই এখন বাসযোগ্য নয়।”
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ সম্ভব বলে আশাপ্রকাশ করে মোশাররফ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী জাইকার তহবিল এনেছেন। বুড়িগঙ্গা ও বালু নদীর পরিবর্তন সম্ভব। বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল বলেছে, পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করলে নদীর দূষণ বহুলাংশে কমানো সম্ভব।“
এক হাজার সাতশ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত চার লেনের আউটার রিং রোড প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এ সড়কের পাশে ‘ওশান ভিউ’ আবাসন প্রকল্প করা যেতে পারে বলে জানান গণপূর্ত মন্ত্রী।
“মিরসরাইয়ে সাড়ে ছয় হাজার একর জমিতে ইকনোমিক জোনে সাড়ে পাঁচ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে।”
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বিআইজিডি’র গবেষক এম শহিদুল ইসলাম বলেন, নগরীর বিদ্যমান উন্নয়ন মডেল নগরবাসীর প্রয়োজনীয়তাকে অবজ্ঞা করছে।
“মাস্টার প্ল্যানের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো উপক্ষো করে রাজনৈতিক বিবেচনায় কম গুরুত্বের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩২টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় ও জবাবদিহিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতা খুব দুর্বল।”
চট্টগ্রামের মৌলিক নাগরিক সেবা, পরিবহন, ভূমি ব্যবহার ও আবাসন, পরিবেশ ও নগর শাসনের রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে এ গবেষণা প্রতিবেদন তৈরিতে এক হাজার ২০০ খানার ওপর জরিপ করা হয়।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. সুলতান হাফিজ রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাউদ্দিন কাসেম খান।
প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্থানীয় সরকার গবেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমদ, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সদস্য স্থপতি জেরিনা হোসেন এবং পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মদ সিকান্দার খান।
উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, চট্টগ্রাম ওয়াসার সাবেক সচিব সৈয়দ শফিক উদ্দিন ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেহানা কবির রানু।