কঠোর হতে বললেন রাষ্ট্রপতিও

বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে দেশে চলমান নাশকতায় জড়িতদের ‘গণতন্ত্রের শত্রু’ আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানালেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2015, 07:23 AM
Updated : 29 Jan 2015, 09:29 AM

আর এ কাজে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার করতে দেশবাসীর প্রতিও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “সাম্প্রতিককালে যেভাবে নিরীহ মানুষকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে, গাড়িতে আগুন ধরিয়ে অবলীলায় পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে তাতে গোটা দেশবাসীর সাথে আমিও গভীরভাবে ব্যথিত, মর্মাহত।

“যারা এসব নৃশংসকাজে জড়িত তারা গণতন্ত্রের শত্রু, মানবতার শত্রু, সভ্যতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিধা না করে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়ার পরদিন রাষ্ট্রপতির এই আহ্বান এল।

নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্রুত আগাম নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপির লাগাতার অবরোধের ২৪তম দিন বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্যও ছিল তাই। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় দল-মতের পার্থক্য থাকা স্বাভাবিক এবং সেটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এজন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় পরমত সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধসহ গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

অবরোধের এই ২৪ দিনে নাশকতা ও সহিংসতায় অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। যানবাহনে দেওয়া আগুন ও পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়েছে বহু মানুষ।

এর মধ্যে দুটি ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলাও হয়েছে, যিনি অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। বিএনপির দাবি, সরকারের লোকেরাই নাশকতা করে তাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে।   

পুলিশ সদর দপ্তর, মেট্রোপলিটন, বিভাগ ও জেলা পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আবদুল হামিদ বলেন, “পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ বিশ্ববাসীকে ভাবিয়ে তুলেছে। শান্তি ও সমৃদ্ধির অন্যতম অন্তরায় এই দুষ্টচক্র আজ কোনো দেশের একক ভূখণ্ড ও সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সন্ত্রাসবাদ-জঙ্গিবাদ আজ বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে প্রচলিত অপরাধের পাশাপাশি প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধও বৃদ্ধি পেয়েছে।”

এ কারণে পুলিশকে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, অস্ত্র, মাদক ও মানব পাচারের মত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংঘবদ্ধ অপরাধের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং এর মত আন্ত:দেশীয় অপরাধসহ পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংক্রান্ত অপরাধ দমনে বিশেষ কার্যক্রম নিতে হচ্ছে বলে রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করেন।

“তবে আশার কথা, দেশে জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাদের ভূমিকা  জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতেও বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিটি সদস্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায়, সংবিধান ও গণতন্ত্র সুরক্ষাসহ রাষ্ট্রবিরোধী সকল অপতৎপরতা রোধে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাবে।”

পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালন করার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অবয়ব হচ্ছে সময়োপযোগী, আধুনিক, জনবান্ধব ও সেবাধর্মী পুলিশ। তাই সকল পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তা এবং পুলিশ সদস্যদের নিজ নিজ অবস্থান হতে জনসাধারণকে সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানসহ আইনগত সহায়তা প্রদানে বিশেষভাবে তৎপর থাকতে হবে।”

অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং  নিরপেক্ষভাবে তদন্ত পরিচালনার ওপরই আইনের শাসন ‘অনেকাংশে’ নির্ভর করে মন্তব্য করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

অন্যদের মধ্যে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহীদুল হকসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।