এবার ক্ষান্ত দিন: প্রধানমন্ত্রী

ছেলের মৃত্যুর পর অবরোধ সহিংসতায় সন্তান হারানো মানুষগুলোর হাহাকার খালেদা জিয়া উপলব্ধি করতে পারছেন কিনা- সংসদে সে প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2015, 01:40 PM
Updated : 28 Jan 2015, 04:51 PM

বুধবার সরকার দলীয় সাংসদ তাজুল ইসলামের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি অন্তত বলব- বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া পুত্রহারা শোকে ভুগছেন। আমি বুঝলাম- উনি শোক সইতে পারেননি, উনাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

“তার অসুস্থ ছেলে মারা গেছেন এজন্য তাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়ানোর প্রয়োজন হয়; যে মা দেখছে যে তার সুস্থ সন্তানকে পুড়িয়ে মারা হয় সে মায়ের মনের অবস্থাটা কি তিনি এখনো উপলব্ধি করতে পারছেন না? এখনো তিনি বুঝবেন না? এখনো কি তিনি এই নির্মম কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন না?”

এসময় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের সহিংতার বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি।

পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারনকে নির্মম কাজ করা থেকে বিরত থাকারও অনুরোধ জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো- অপকর্ম করে খালেদা জিয়া; আর কিছু কিছু লোক আছে-দোষ দেওয়ার সময় আমাদেরও দোষ দেয়। অথচ আমাদের মানুষ তারা মারছে, এখানে আমাদের দোষটা কী হলো?”

শেখ হাসিনা জানান, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে জনগণকে নিয়ে আর্থসামাজিক উন্নয়নের কাজ চলছে।

“কিন্তু কোনো কথা নাই, বার্তা নাই ৫ জানুয়ারি থেকে অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হয়। উনার অবরোধ কর্মসূচি মানে মানুষ পুড়িয়ে মারা, মানুষের মাঝে ভীতি সৃষ্টি করা।

“আজ সর্বস্তরের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এদের অত্যাচারে। একটা দেশকে কেউ এভাবে ধ্বংস করার চেষ্টা করে অতীতে তা কখনো দেখা যায়নি। উনার অপকর্মের কারণে ও ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তারা এখন না পার্লামেন্টে, না বাইরে।”

বক্তব্যের এক পর্যায়ে বিএনপিকে ‘বিরোধী দল’ বলার বিষয়ে সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।

“কিছুক্ষণ আগে এক সংসদ সদস্য তাদের [বিএনপি] বিরোধী দল বলে আখ্যায়িত করেছে। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সচেতন হতে বলব। এখানে পার্লামেন্টে ডেমোক্রেসি রয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল তাদেরকেই বলে যারা পার্লোমেন্টে বিরোধী দলে বসে, তারাই বিরোধী দল। বর্তমানে বিএনপি কিন্তু সরকারেও নেই, বিরোধী দলেও নেই; একটা রাজনৈতিক দল জোট হিসেবে রয়েছে।”

দীর্ঘদিন বিএনপি বিরোধী দলে থাকলেও বর্তমানে রাজনৈতিক দলটি সন্ত্রাসী দলে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ধ্বংসযজ্ঞ প্রতিরোধে স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আইন শৃঙঙ্খলাবাহিনীকে নিয়ে পাহারা শুরু করতে স্থানীয় সাংসদের প্রতি অনুরোধ জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি-নির্বাচনের আগেও বিএনপি নেত্রীকে ফোন করেছি। উনি যেভাবে ঝাড়ি মেরেছেন...এসব আমি আর বলতে চাই না।”

‘ছোট গেটেও তালা’

খালেদা জিয়ার ছেলের মৃত্যুতে গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে ফিরে আসার বর্ণনাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “উনার যখন ছেলে মারা গেল, একজন মা তার সন্তান হারিয়েছে। এটা স্বাভাবিক মা তার সন্তান হারালে তার ব্যথা, বেদনা থাকবে। কিন্তু আমি সেখানে ছুটে গেছি। আপনার জানেন, সেখানে দরজা তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে, আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মেইনগেট তালা থাকায় আমার গাড়ি সেখানে ঢুকতে পারলো না। আমি কিন্তু তবুও কোনো কিছু চিন্তা করিনি; নিরাপত্তার কথাও চিন্তা করিনি। আমি গাড়ি থেকে নেমে মেইনগেট যখন বন্ধ, ছোট গেট দিয়ে যেতে চেয়েছি। কিছুদূর এগোলে সবাই জানালো ওই গেইটেও তালা মারা। অর্থাৎ ঢুকতে দেওয়া হবে না।”

ফাইল ছবি

বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে কেউ এ ধরনের ব্যবহার আর কখনো করেছে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
‘আর হত্যা নয়’

খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে মানুষ হত্যা বন্ধের অনুরোধ জানান তিনি।

খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এ ধরনের অপমান করা হয়েছে। তারপরও আমি বলব- উনি উনার ছেলে হারিয়েছেন। ছেলে হারানোর ব্যথা, বেদনা নিশ্চয়ই উনি উপলব্ধি করছেন। কাজেই আমি আশা করব- আগামীতে উনি উনার ওই সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে আর যেন কোনো মায়ের কোল খালি না করেন, মানুষ হত্যা না করেন।”

দগ্ধ ১৩৩, নিহত ২৬

চট্টগ্রাম-৩ আসনের মাহফুজুর রহমানের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোট সহিংসতা চালিয়ে জনগণকে জিম্মি করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।

“১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর মতো সহিংসতা ও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে চোরাগুপ্তা হামলার মাধ্যমে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে সাধারণ ও নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে।”

৫ থেকে ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীদের পেট্রোল বোমা ও অগ্নিকাণ্ডে ১৩৩ জন মানুষ অগ্নিদগ্ধ হয়েছে, নিহত হয়েছে ২৬ জন।

এছাড়া বিভিন্ন সহিংসতায় ৩৮২টি বাস-ট্রাকে আগুন, রেলে নাশকতামূলক ১৪টি ঘটনায় দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত এবং তিনটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।

এছাড়া একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আহত হয়েছে ও পুলিশের উপর ৮৫টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।

‘দেশ উন্নয়নের পথে’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত বছরের ৫ জানুয়ারি থেকে একটি বছর দেশ শান্তিপূর্ণভাবে চলেছে। জনগণের সহযোগিতায় অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। কৃষি, শিল্প, বিদ্যুত, জ্বালানিসহ সবখাতে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন সাধিত হয়েছে।

তিনি বলেন, এসময়ে পদ্মা সেতুর কাজ পুরোদমে শুরু হয়েছে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ সব কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২.৪ বিলিয়ন, মুদ্রাস্ফীতি ৬.১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীতে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে।

একবছরে ১২টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্বাচিত হওয়ার কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।