টানা অবস্থানে যাচ্ছে জাগরণ মঞ্চ

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও রাজনীতির নামে সহিংসতা, সন্ত্রাস এবং দেশব্যাপী অপতৎপরতা বন্ধে আবারও শাহবাগে টানা গণঅবস্থানে বসছে গণজাগরণ মঞ্চ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 05:33 PM
Updated : 27 Jan 2015, 05:40 PM

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চ দ্বিতীয় বর্ষপূর্তির দিন সকাল ১০টা থেকে এ কর্মসূচি পালন করবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘সন্ত্রাসবিরোধী গণঅবস্থান ও সমাবেশ’ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন মঞ্চের মুখপাত্র  ইমরান এইচ সরকার।

পরে সেখানে প্রতিবাদী গণসংগীত পরিবেশন করে উদীচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন।

‘সম্মিলিত প্রতিবাদ, রুখতে পারে সন্ত্রাস’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ ব্যানারে দলমত নির্বিশেষ সহিংসতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী গণঅবস্থান ও সমাবেশ আয়োজন করা হয়।

পরে শুক্রবার বিকেল ৩টা থেকে প্রতিবাদী গণস্বাক্ষর ও সমাবেশ এবং ৬ ফেব্রুয়ারি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে নিয়ে দেশব্যাপী ‘মুক্তির অভিযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা আসে।

এ সময় ইমরান বলেন, “বর্তমানে দেশে একটি ভয়াল পরিস্থিতি মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষকে ঘরে বন্দি করে রাখা হয়েছে।

“দেশে সন্ত্রাস, মানুষ হত্যার যে রাজনীতি চলছে আমরা মনে করি এই রাজনীতি অপরাজনীতি। কোনভাবেই এটি মানুষের রাজনীতি হতে পারে না।

অবরোধে নামে মানুষ হত্যাকারীদের ‘অমানুষ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “আজকে যারা মানুষ হত্যা করছে, অপরাজনীতি করছে, নিঃসন্দেহ তারা মানুষের কাতারে পড়ে না। কোনভাবেই মানুষ নয়। অমানুষ বলা হলেই তাদের প্রাপ্ত উপাধি দেওয়া হবে। সুতরাং আজকে যারা রাজনীতির নামে অপরাজনীতি করছে, কোনভাবেই মানুষ নয়।”

জামায়াতই দেশব্যাপী সহিংসতা চলাচ্ছে অভিযোগ করে ইমরান বলেন, “এই যুদ্ধাপরাধী সংগঠনটি গণতন্ত্রের নামে, বিভিন্ন মানুষের অধিকারের নামে কথা বলে। তারা একটি অপরাজনীতি করে মূলত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার রুখে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”

সমাবেশে অর্থনীতিবিদ আবুল বারাকাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মূল যে দুটো আকাঙ্ক্ষা- বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও অসাম্প্রদায়িক সমাজকাঠামো কোনটাই পূরণ হয়নি।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে সরকারের উচিত জামায়াতের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে এর সম্পদ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বণ্টন করা।

এছাড়া সব মন্ত্রী-সাংসদ-আমলাকে স্ব-স্ব এলাকায় পাঠিয়ে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করার দাবি জানান এই অর্থনীতিবিদ।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের দলিলে সই করে বললো, তাদের সব সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে আত্মসমর্পণ করছে, তখন থেকেই জামায়াত নিষিদ্ধ। পাকিস্তান যেভাবে বাংলাদেশে কোনো কার্যক্রম চালাতে পারে না, তেমনি জামায়াতও এদেশে রাজনীতি করতে পারে না।

অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, নারী নেত্রী খুশি কবির, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফউদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হাসান তারেক প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

এদিকে গণঅস্থান কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে সহিংসতা প্রতিরোধ জনতা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র, বাংলাদেশ আদমজি জুট মিল চালু সংগ্রাম পরিষদসহ আরও অন্যান্য সংগঠনের কর্মীরা।