বায়তুল মোকাররমে জানাজার পর বনানীতে কোকোকে দাফন

মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশে আনার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদে জানাজা শেষে সমাহিত করা হয়েছে আরাফাত রহমান কোকোকে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 09:44 AM
Updated : 27 Jan 2015, 09:44 AM

মঙ্গলবার বিকালে হাজারো মানুষের অংশগ্রহণে জানাজা শেষে সন্ধ্যায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হয় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলেকে, যিনি মুদ্রা পাচারের একটি মামলায় সাজা নিয়ে বিদেশে পলাতক ছিলেন।

কুয়ালালামপুর থেকে আরাফাতের লাশ সকালে ঢাকায় আনার পর বিমানবন্দর থেকে নেওয়া হয় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। সেখানে খালেদা জিয়া ছেলেকে শেষবার দেখেন।

সেখান থেকে বিকালে কফিন নেওয়া হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে, সেখানে জানাজায় বিএনপির বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মী-সমর্থক অংশ নেন।

জানাজার আগে থেকে বায়তুল মোকাররমের উত্তর ও দক্ষিণ ফটক সংলগ্ন সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। উত্তর ফটকে জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে দৈনিক বাংলা মোড়, দক্ষিণে জিরো পয়েন্ট থেকে গুলিস্তান ফ্লাইওভার পর্যন্ত পুরো সড়ক ভরে ছিল জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষে।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন জানাজা পড়ান। এরপর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের পশ্চিম পাশে খোলা স্থানে, সেখানে কফিনে ফুল দেওয়া হয়।

জানাজায় ইমামতিতে মুহাম্মদ সালাহউদ্দিন

বিএনপির নেতাদের মধ্যে জানাজায় ছিলেন মওদুদ আহমদ, মাহবুবুর রহমান, রফিকুল ইসলাম মিয়া, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, মীর মো. নাছিরউদ্দিন, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, রুহুল আলম চৌধুরী, মোসাদ্দেক আলী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, গিয়াস কাদের চৌধুরী, খায়রুল কবির খোকন, নেসারুল হক প্রমুখ।

জানাজায় রাজনীতিকদের মধ্যে ছিলেন এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, অলি আহমদ, আবদুল মান্নান, রেদোয়ান আহমেদ, শাহাদাত হোসেন সেলিম, মজিবুর রহমান, সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী, আবদুল লতিফ নেজামী, মুহাম্মদ ইসহাক, আহমেদ আবদুল কাদের, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এম এম আমিনুর রহমান, খন্দকার গোলাম মূর্তজা, আবদুল মোবিন, ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জেবেল রহমান গানি, গোলাম মুস্তফা ভুঁইয়া, হামদুল্লাহ আল মেহেদি, সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, খন্দকার লুৎফর রহমান।

পৌনে ৬টার দিকে দাফনের জন্য বনানী কবরস্থানের পথে রওনা হয় আরাফাতের কফিনবাহী আলিফ মেডিকেল সার্ভিসের গাড়িটি। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে কফিন মসজিদ থেকে বের করতে নিরাপত্তাকর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।

বনানী কবরস্থানে দাফন হচ্ছে

 

এরপর পৌনে ৭টার দিকে বনানী কবরস্থানে নিয়ে দাফন করা হয় আরাফাতকে। বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি বহু কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

সাবেক সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছেলেকে বিএনপি সেনা কবরস্থানে দাফন করতে চাইলেও তার অনুমতি মেলেনি।

সাত বছর ধরে মালয়েশিয়ায় থাকা আরাফাত গত শনিবার হৃদরোগে মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর। মুদ্রাপাচারের একটি মামলায় সাজা নিয়ে স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি ও দুই মেয়েকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে থাকছিলেন তিনি।

বিগত সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার আরাফাত ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই তখনকার কর্তৃপক্ষের নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে যান। সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন।

আরাফাতের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মামা শামীম এস্কান্দারসহ কয়েকজন স্বজন ও বিএনপি নেতা ঢাকা থেকে মালয়েশিয়া রওনা হন। রোববার সেখানে জানাজা শেষে কুয়ালালামপুরে একটি হাসপাতালের হিমঘরে রাখা ছিল লাশ।

কফিন নিতে বিমানবন্দরে বিএনপি নেতারা

বিমানবন্দর থেকে গুলশানের পথে কফিন

মঙ্গলবার কফিন নিয়ে রওনা হয়ে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় পৌঁছান শামীমসহ বিএনপি নেতারা। বিমানবন্দরে মরদেহ গ্রহণ করতে উপস্থিত ছিল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি প্রতিনিধি দল।

বিমানবন্দর থেকে কফিনবাহী অ্যাম্বুলেন্স বেলা পৌনে ২টার দিকে পৌঁছায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে, যেখানে গত ৩ জানুয়ারি থেকে অবস্থান নিয়ে আছেন কোকোর মা খালেদা জিয়া।

কোকোর কফিন রাখা হয় কার্যালয়ের নিচতলার একটি কক্ষে। মিনিট দশেক পর ওপরের চেম্বার থেকে নেমে এসে ছেলের কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা।  

কফিনের পাশে বসে দুই নাতনী জাফিয়া ও জাহিয়াকে জড়িয়ে ধরেও কাঁদতে দেখা যায় বিএনপি চেয়ারপারসনকে। এ সময় তাকে দুই পাশ থেকে ধরে রাখেন পুত্রবধূ শর্মিলা এবং দুই ভ্রাতৃবধূ নাসরিন সাঈদ ও কানিজ ফাতেমা।

নিচ তলার ওই কক্ষে আত্মীয় ও দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের ছাড়া কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। খালেদার বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানু, দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা মোসাদ্দেক আলী, প্রেসসচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস এবং সেনা, বিমান ও নৌ বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকজন কর্মকর্তা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

ছেলের লাশ দেখে খালেদা জিয়ার কান্না

গুলশানে আরাফাতের কফিন

পরিবারের সদস্যদের শেষবার দেখার জন্য কোকোর কফিন ওই কক্ষে রাখা হয় প্রায় এক ঘণ্টা। এর মধ্যে প্রায় ৩৫ মিনিট খালেদা জিয়া সেখানে ছিলেন। কফিনের পাশে বসেই ছেলের জন্য মোনাজাত করেন তিনি।

পরে তার সামনেই কফিনটি ঢেকে দেওয়া হয় এবং অশ্রুসিক্ত খালেদা দাঁড়িয়ে থেকে ছোট ছেলেকে শেষ বিদায় জানান।

আরাফাত রহমান কোকো

একদিকে লাশের কফিন অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হয়, অন্যদিকে খালেদা জিয়াকে দুই পাশ থেকে ধরে দোতলায় নিয়ে যান তার দুই ভাইয়ের স্ত্রী।

বেলা পৌনে ৩টার দিকে একই অ্যাম্বুলেন্সে করে কোকোর কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বায়তুল মোকাররমে। দলীয় নেতা-কর্মীদের বেষ্টনিতে পৌনে ৫টায় কফিন সেখানে পৌঁছায়। সেখান থেকে পৌনে ৬টায় কফিন নেওয়া হয় বনানী কবরস্থানে।   

অবরোধের মধ্যে বিমানবন্দর থেকে গুলশানের কার্যালয়, সেখান থেকে বায়তুল মোকাররম, জানাজা শেষে বনানীতে নেওয়ার পুরোটা সময় কফিনের সঙ্গে ছিল বিএনপি নেতাদের কয়েকটি গাড়ি; সামনে ছিল মোটর সাইকেলের বহর; আর কফিন ঘিরে হাঁটছিলেন বহু নেতা-কর্মী।

আরাফাতের মৃত্যুতে সোমবার থেকে তিন দিনের শোক পালন করছে বিএনপি। মঙ্গলবার সারাদেশে গায়েবানা জানাজাও হয়েছে। একমাত্র ভাই তারেক রহমান রোববার লন্ডনে গায়েবানা জানাজায় অংশ নেন।