ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন ১৪ বিবৃতিদাতা

অবমাননার দায়ে ব্রিটিশ নাগরিক ও সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানের দণ্ড হওয়ার পর উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়া ৫০ নাগরিকের মধ্যে ১৪ জন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 09:09 AM
Updated : 27 Jan 2015, 03:29 PM

বিবৃতিদাতাদের ২৭ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে অথবা আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের আচরণের ব্যাখ্যা দাখিল করতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিকসহ ১৪ জন মঙ্গলবার ক্ষমার আবেদন করেন।

এছাড়া স্বাস্থ্য অধিকারকর্মী জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ দশজন নিজেদের পক্ষে নিজেরাই শুনানি করবেন বলে আদালতে ব্যাখ্যা দাখিল করেছেন।

ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ পাওয়া বাকি ২৫ জন এই রুলের শুনানির জন্য আইনজীবী আনিসুল হাসানের মাধ্যমে সময় চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশে অবস্থানরত ১৪ জনের আবেদন ট্রাইব্যুনাল আমলে নিয়েছে।

২৫ জনের মধ্যে বিদেশে অবস্থানরত ১১ জন ই-মেইলের মাধ্যমে সময়ের আবেদন করায় তাদের আবেদন আদালত আমলে নেয়নি। এ বিষয়ে ‘সঠিক মাধ্যমে’ আবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের।

এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি দিন রেখেছে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২।

ব্লগে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ লেখার মাধ্যমে বিচারাধীন বিষয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ে গত ২ ডিসেম্বর সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল।

সাজা হিসেবে এই নাগরিককে ওইদিন আদালতের পুরোটা সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সেই সঙ্গে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় তাকে।

এরপর ২০ ডিসেম্বর দৈনিক প্রথম আলো ৫০ নাগরিকের উদ্বেগ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে। একই আদলে ২৩ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমসও একটি সম্পাদকীয় প্রকাশ করে।

ওই সংবাদগুলো ‘বাংলাদেশের বিচার বিভাগের প্রতি কটাক্ষ’ বলে মনে হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল প্রথম আলোর কাছে ওই বিবৃতির ‘পূর্ণাঙ্গ কপি’ দেখতে চায়।

সে অনুযায়ী প্রথম আলো কর্তৃপক্ষ ওই ৫০ নাগরিকের পক্ষে বিবৃতি পাঠানো হানা শামস আহমেদের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় ও ঠিকানা ট্রাইব্যুনালে দাখিল করে। প্রথম আলো জানায়, গত ১৮ ডিসেম্বর হানা শামসই ই-মেইলের মাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠায়।

আদালতের নির্দেশে বিবৃতিদাতা ৫০ নাগরিকের মধ্যে ৪৯ জনের পরিচয় ও ঠিকানা গত ১৪ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক।

৫০ নাগরিকের মধ্যে মানবাধিকার কর্মী ও নারীনেত্রী খুশি কবির পরে বিবৃতির বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন জানিয়ে নিজের নাম সরিয়ে নেন।

নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর বিচারক বিবৃতিদাতাদের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলেন।

সে অনুযায়ী মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে শাহদীন মালিক এবং সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন খানের পক্ষে ব্যাখ্যা দাখিল করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন তাদের আইনজীবী এম শামসুল হক।

অপর ১২ জনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ক্ষমার আবেদন করেন তাদের আইনজীবী।

এরা হলেন- সুজনের সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক আমেনা মহসিন, বাংলাদেশ শিশু বিকাশ কেন্দ্রের ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেটর ডা. নায়লা জামান খান, পরিবেশ আন্দোলনকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক আসিফ নজরুল ও ড. শাহনাজ হুদা, মানবাধিকারকর্মী জাকির হোসেন, সংগীত শিল্পী অরূপ রাহী, লেখক শাহীন আক্তার ও অধিকারকর্মী ইলিরা দেওয়ান।

নিজের ব্যাখ্যার শুনানি নিজেই করবেন জানিয়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি  জাফরুল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা আদালতের নিকট বিবৃতির বিষয়ে নিজেরাই ব্যাখ্যা করব। সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বাক স্বাধীনতার অধিকারে বিবৃতি প্রদান করেছি।”

তিনি জানান, বিবৃতিতে যা লেখা হয়েছে তাতে আদালত অবমাননার মতো কিছু ছিল না বলে তিনি মনে করেন। এ বিষয়টি আদালতে দেওয়া ব্যাখ্যাতেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

বিবৃতিদাতা বাকিরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেইট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের শিক্ষক আলী রীয়াজ, নারী অধিকারকর্মী শিরীন হক, আলী আহমেদ জিয়াউদ্দিন, অধ্যাপক পারভিন হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক সি আর আবরার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির অধ্যাপক ফিরদাউস আজিম, নারী গ্রন্থ প্রবর্তনার নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আক্তার, প্রকাশক মহিউদ্দিন আহমেদ, মানবাধিকার আইনজীবী ফস্টিনা পেরেইরা, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির গবেষক বীণা ডি কস্টা, সাংবাদিক ও লেখক আফসান চৌধুরী, নৃ-বিজ্ঞান গবেষক রেহনুমা আহমেদ ও আলোকচিত্রী শহীদুল আলম।

এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মী লিসা গাজী, দিনা এম সিদ্দিকী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাংস্কৃতিক কর্মী লুবনা মারিয়ম, লেখক তাহমিমা আনাম, অধিকারকর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, জারিনা নাহার কবির, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক মো. নুর খান লিটন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া হক, লেখক শবনম নাদিয়া, লেখক মাহমুদ রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসরিন সিরাজ এ্যানি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিউতি সবুর, সংগীত শিল্পী আনুশেহ আনাদিল,  সারাহ শিহাবুদ্দিন, আলাল ও দুলাল ব্লগের সম্পাদক তীব্র আলী, নৃবিজ্ঞানী দেলোয়ার হোসেন, মাসুদ খান, অধিকারকর্মী রেজাউর রহমান, অ্যাডভোকেট জিয়াউর রহমান সই করেন ওই বিবৃতিতে, যা পাঠানো হয় অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদের নামে।