সন্ত্রাস ঠেকাতে পুলিশকে সহযোগিতা করুন: প্রধানমন্ত্রী

সন্ত্রাস প্রতিরোধে দল-মত নির্বিশেষে পুলিশকে সহযোগিতা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 07:54 AM
Updated : 27 Jan 2015, 08:18 AM

একইসঙ্গে ‘যথাযথভাবে’ কর্তব্য পালন করে জনগণের ‘আস্থা’ অর্জন করতেও পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার সকালে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৫ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। ‍এখানে সহিংসতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসের কোনও স্থান নেই।

“তাই আমি দেশের সকল জনগণের কাছে আহ্বান জানাব-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে দল-মত নির্বিশেষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং এই সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হবে। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে সর্বতভাবে সহযোগিতা করার জন্য আমি দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি।”

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আপনারা আপনাদের কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করে যাবেন এবং জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করবেন সেটাই আমরা চাই।”

এসময় দেশে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের চিত্রও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অর্থনৈতিক, সামাজিকভাবে বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে; ঠিক সেই সময় কোন কারণ ছাড়াই হঠাৎ আমরা দেখছি বিএনপি-জামায়াত জোট হরতাল, অবরোধের নামে নাশকতামূলক, সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে।

“মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, সারাজীবনের মত পঙ্গু করে দিচ্ছে। এর থেকে জঘন্য কাজ আর হতে পারে না।” 

নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি-জামায়াত জোট গত ২২ দিন টানা অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে; যাতে নাশকতায় অন্তত ৩০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এদের অধিকাংশই নিহত হয়েছে বাসে পেট্রোল বোমা হামলায়।

কেন এই ধরনের নাশকতা তা ‘আমরা বুঝতে পারি না’ মন্তব্য করে বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই ধরনের কাজ থেকে তাদের বিরত থাকার জন্য আমি আহ্বান জানাচ্ছি।”

এ সময় ২০১৩ সালে বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধে সহিংসতার ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুলিশ বাহিনীর ১৭ জন সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ২০ জন সদস্যকে তারা হত্যা করেছিল।

“শত বাধার মধ্যে অর্পিত দায়িত্ব দিন-রাত পরিশ্রম করে আপনারা পালন করে যাচ্ছেন। সেজন্য আপনাদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”

৫ জানুয়ারির নির্বাচন সম্পন্ন করতে ‘নিজেদের জীবনের ঝুঁকি’ নিয়ে কাজ করায় পুলিশ সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

“সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএনপি-জামাতের সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড, হরতাল ও অবরোধের নামে নিরীহ মানুষ হত্যা, যাত্রীবাহী গাড়িতে আগুন দিয়ে নারী-শিশু হত্যার ঘৃণ্য অপকর্ম প্রতিরোধে বাংলাদেশ পুলিশ অত্যন্ত দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছে। আমি এজন্য পুলিশ বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে ধন্যবাদ জানাই,” বলেন তিনি।

এসময় পুলিশ বাহিনীতে বিভিন্ন সংস্কারের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “পুলিশের আধুনিকায়নে আমরা যে সকল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম তার অধিকাংশই আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করেছি।”

গত ছয় বছরে পুলিশে ৩১ হাজার ৭৪৪টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আরো ৫০ হাজার পদ সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 

পুলিশে বর্তমানে গ্রেড-১ পদ রয়েছে দুটি। ‘প্রয়োজনে’ আরো একটি গ্রেড-১ পদ বাড়ানোর আশ্বাস দেন প্রধানমন্ত্রী।

বর্তমানে কনস্টেবল হতে এসআই পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ঝুঁকি ভাতা পর্যায়ক্রমে ‘সকল স্তরের পুলিশ সদস্যদের জন্য বাস্তবায়নের’ও আশ্বাস দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রবিরোধী অপতৎপরতা রোধ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের একটি বিশেষায়িত ইউনিট গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রযুক্তি নির্ভর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ শুরু হয়েছে।”

থানা পুলিশি সেবার ‘সবচেয়ে কার্যকর ও দৃশ্যমান’ ইউনিট হওয়ায় সেখানে জনবল বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ দমনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ‘যা যা প্রয়োজন সেটা’ দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করি।

পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে পুলিশের বার্ষিক কুজকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

এসময় তিনি পেশায় কৃতিত্বের জন্য ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক’ ও ‘রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক’ পাওয়া সদস্যদের পদক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হকসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।