‘বিএনপি সৌজন্যবোধের অপমান করেছে’

আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুতে সমবেদনা জানাতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গেলেও ফটকে তালা দিয়ে রাখার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকারি ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2015, 04:01 PM
Updated : 25 Jan 2015, 04:01 PM

রোববার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদে এক অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা বলেছেন, ‘শিষ্টাচার বহির্ভূত’ আচরণ করে বিএনপি মানবতা, সৌজন্যবোধের অপমান করেছে।

ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে শনিবার গুলশানে তার কার্যালয়ে গেলেও ভেতর থেকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী।

গেট না খোলায় আট মিনিট সেখানে অবস্থান করে ফিরে যান তিনি।

পরে বিএনপি চেয়ারপার্সনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস বলেন, ইনজেকশন দিয়ে খলেদা জিয়াকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

সংসদে অনির্ধারিত আলোচনার সূত্রপাত করেন বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

পরে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতদা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, দীপু মনি, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল, আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল।

এসময় সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ কক্ষে ছিলেন না।

রওশন এরশাদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার খবরে আমরা আশান্বিত ছিলাম। সবাই টেলিভিশনের সামনে ছিল। তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভেতরে বসাতে পারতো। অন্য নেতারা সেখানে ছিল। মওদুদ সাহেব, রফিকুল ইসলাম, জমির উদ্দিন সরকার ছিলেন। তারা কথা বলতে পারতেন। এটা কেন হলো না। এটাই আমার প্রশ্ন।”

খালেদা জিয়ার বন্ধ কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনা (শনিবারের ছবি)

“আমরা শিষ্টাচার যদি না মানি তবে কীভাবে রাজনীতি করবো। সবাই আশা করেছিল একটা সমাধান আসবে। দুই নেত্রী কথা বললে কিছু একটা হতো। কিন্তু গেটে তালা। দেশ-জাতি এতে অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছে। মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। শিষ্টাচার না থাকলে রাজনীতি কিভাবে হবে?”

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “অপাত্রে ঘৃত দান করতে নেই। অপাত্রে দান করা অনেক সময় বিপদজ্জনক হয়ে যেতে পারে।”

“যিনি ৩৩ জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে। তার কাছে মানবতাবোধ। রাজধর্ম পালন করতে গেলে অনেক কঠোর হতে হয়। সেখানে রাগ-অনুরাগের সুযোগ নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ পাচারকারী দণ্ডিত অপরাধীর মৃত্যুতে সমবেদনা জনাতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী-মন্ত্রীরা।”

বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী একজন পুত্রহারা মাকে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। অথচ ওখানে জমির উদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমেদ ছিলেন ভিতরে। অবাক হয়েছি।”

তিনি আরও বলেন, “কিছু জিনিস নিয়ে রাজনীতি করতে হয় না। মা হিসেবে পুত্রহারা মাকে প্রধানমন্ত্রী সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। আমি নিজে দরজার কাছে গেলাম, শিমুল বিশ্বাসকে দেখলাম, কথা বললাম। গেট বন্ধ। বললেন ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। দেখা করা সম্ভব নয়।

“মানুষ ভালোভাবে নেয় নাই, গ্রহণ করে নাই। অনেকে বিষ্মিত হয়েছে। আমি হইনি। বিষ্মিত হয়েছি এটা দেখে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী একটি দলের প্রধান তার ছেলে মৃত্যুর পর অবরোধ রেখেছেন। বৃদ্ধি করে ৩৬ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছেন। অনেককে বলতে শুনছি তার ছেলেতো স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। একজন মা তার ছেলের স্বাভাবিক মৃত্যর পরে ব্যথায় মুহ্যমান হয়েছেন। এমনকি ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয়েছে। যারা নাশকতায় মৃত্যুবরণ করেছেন। তাদের মায়েদের কোল খালি হয়েছে। তাদের ব্যথা বিএনপি চেয়ারপার্সন নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন। অন্য মায়ের ব্যথা তিনি বুঝতে পারবেন বলে মনে হয়।”

ছবি: তানভীর আহমেদ/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “আরাফাত রহমানের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। এটা আমাদের সামাজিক রীতি। সন্তানহারা মা অসুস্থ হতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী নামলেন। পাঁচ-সাত মিনিট অপেক্ষা করলেন। কেউ ভিতর থেকে আসল না। শিষ্টাচার থাকলে কেউ এ কাজ করতে পারে না। গেট আটকে দেবে, এ কোন ধরনের আচরণ। এতে গোটা দেশবাসীকে অপমান করা হয়েছে।”

“এদের কাছে কোনো ভালো ব্যবহার আশা করা যায় না। কে ইনজেকশন দিল? প্রধানমন্ত্রী চলে আসার পর শিমুল বিশ্বাস শোক বই নিয়ে আসল। প্রধানমন্ত্রী কি রাস্তায় দাঁড়িয়ে শোক বইতে সই করবেন? আগে তো ঘরে ঢুকতে দিবি, বসতে দিবি। ইনজেকশন দিলে তো সারারাতই ঘুমানোর কথা। প্রধানমন্ত্রী যাবার আধঘণ্টা পর তিনি ধন্যবাদ জানালেন। কোনো চিকিৎসককে তো দেখা যায়নি। কোন চিকিৎসক ইনজেকশন দিল, শিমুল বিশ্বাস দিল?”

“যারা পেট্রোল বোমা মারে, গাড়িতে আগুন দেয়, তাদের কাছে কোনো মানবতা আশা করা যায় না। ছেলে মারা যাবার পর হরতাল-অবরোধ কীভাবে দিতে পারেন।"

শেখ সেলিম বলেন, “কেন ঢুকতে দেওয়া হলো না। সেখানে সন্ত্রাসী, জঙ্গি, পেট্রোল বোমা মারে, সেই চিহ্নিত কেউ আছে কি না। এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তল্লাশি করা উচিত।”

জাসদের মইন উদ্দিন খান বাদল বলেন, “আপনারা বলেছেন রাজনীতি না করতে। আমরাও বলছি মরদেহ নিয়ে রাজনীতি করবেন। মরদেহ আনবেন সৎকার করবেন।”

আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনি বলেন, “তিনি অসুস্থ হতেই পারেন। শোকে মুহ্যমান একজন মাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতেই পারে। এগুলো স্বাভাবিক। সেখানে অস্বাভাবিক, অস্বস্তিকর ও লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। সেখানে যা ঘটেছে তাতে প্রধানমন্ত্রী অপমানিত হননি, অপমানিত হয়েছে, মানবতা, সহমর্মিতা ও সৌজন্যবোধ।”

শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা এই সংসদ সদস্য বলেন, “যারা মৃত্য নিয়ে এই আচরণ করতে পারেন তাদের কাছ থেকে আর কি আশা করা যায়। যে আচরণ করা হয়েছে তা কোন শিষ্টাচারের সঙ্গে মেলে না।”