ঢাকা ভেঙে ৩ বিভাগ করার পক্ষে প্রধানমন্ত্রী

প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের ওপর জোর দিয়ে ঢাকাকে ভেঙে তিনটি বিভাগ করার পক্ষে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Jan 2015, 08:45 AM
Updated : 25 Jan 2015, 12:38 PM

রোববার সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করে কর্মকর্তাদের কাজে গতি আনারও তাগিদ দেন তিনি।

ঢাকা বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এখানে ১৭টি জেলা এবং সব থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এখানে প্রশাসন চালানো যে কি কঠিন অবস্থা...ইতোমধ্যে ময়মনসিংহকে বিভাগ করার ঘোষণা আমরা দিয়েছি।”

সম্প্রতি মন্ত্রিসভার আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ছয় জেলাকে নিয়ে দেশের অষ্টম বিভাগের কাজ শুরুর নির্দেশ দেন বলে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানুষকে সত্যিকারভাবে সেবা দিতে গেলে, উন্নয়ন করতে গেলে…. সবচে ভাল হতো যদি আমরা ঢাকাকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি।”

তবে ঢাকাকে ভেঙে তৃতীয় কোন বিভাগ হতে পারে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি তিনি।

কর্মকর্তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোন এলাকায় কি ধরনের কার্যক্রম নিলে সে এলাকার দ্রুত উন্নতি হবে, মানুষ সেবা পাবে- সেভাবে চিন্তা করেই কিন্তু আমাদের বাজেট এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলি গ্রহণ করা দরকার।”

স্থানীয় সরকার ও স্থানীয় উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো গ্রহণের সময় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ভৌগলিক অবস্থানের কথাও মাথায় রাখা প্রয়োজন।

গত বছরের জানুয়ারিতে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় পরিদর্শন করছেন শেখ হাসিনা। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার তিনি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আসেন; যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি নিজেই রয়েছেন।

মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন এবং উন্নয়ন তরান্বিত করতে দ্রুত কাজ শেষ করার তাগিদ দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “এই মন্ত্রণালয়ের অনেক দায়িত্ব; কাজ যেন পড়ে না থাকে। ধীরগতিতে যেন কাজ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবেন।”

সরকারের কর্মকর্তাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের আরেকটা জিনিস মনে রাখতে হবে। প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের গোলামি করতে হয়েছে আমাদের। ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন আনতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালে তার নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য একটি কমিশন করা হয়েছিল। ওই কমিশন প্রতিবেদন দিলেও সরকারের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তা কার্যকর করার সময় পাওয়া যায়নি।

তিনি ‘সরকারি কর্মচারী আইন’ দ্রুত প্রণয়ন করার পাশাপাশি প্রশাসনের সব স্তরে ই-গভর্নেন্স চালুর ওপর গুরুত্ব দেন।

“প্রশিক্ষণের ব্যাপারে খুব গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ এগিয়ে যাওয়া বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে হলে সু-শিক্ষিত কর্মকর্তা একান্ত প্রয়োজন।... যুগের পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পরিবর্তন আনতে পারলেই আমরা এগিয়ে যাব।”

প্রশাসনের শূন্য পদে নিয়োগের জন্য ৩৪ ও ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণদের নিয়োগ কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী।

“ইতোমধ্যে আমাদের প্রচুর পদ শূন্য রয়েছে প্রশাসনে... একদিকে প্রমোশনের জায়গা নেই অন্যদিকে শূন্যপদ। এই অবস্থাটা কিন্তু থাকা উচিৎ না।”

এ কাজে গতি বাড়াতে সরকারি কর্ম কমিশনে একাধিক ‘উইং’ খোলা যায় কিনা- তাও ভেবে দেখা যেতে পারে বলে মত দেন সরকারপ্রধান।

তিনি জানান, বেতন কমিশনের সুপারিশের পর যে কমিটি করা হয়েছে তাদের প্রতিবেদন পেলেই ‘দ্রুত’ নতুন বেতন স্কেল বাস্তবায়ন করা হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে প্রশাসনের ‘হৃৎপিণ্ড’ অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বেসামরিক প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু। কাজেই এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অনেক বেশি।”