খালেদার কার্যালয়ের সামনে প্রধানমন্ত্রীর ‘৮ মিনিট’

ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশানে কার্যালয়ে গেলেও ভেতর থেকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2015, 03:29 PM
Updated : 24 Jan 2015, 04:57 PM

শনিবার রাত ৮টা ১৯ মিনিটে গণভবন থেকে রওনা হয়ে ৮টা ৩৫ মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৌঁছায় প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিবেদক সুমন মাহমুদ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বিষয়ক প্রতিবেদক রিয়াজুল বাশার।

প্রায় ৮ মিনিট বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করেও প্রধান ফটকে তালা থাকায় গণভবনে ফিরে যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদকরা জানান, বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৌঁছে প্রথমেই গাড়ি থেকে নেমে ফটকের দিকে হেঁটে যান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

সেখানে গিয়ে তালা দেখে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

শিমুল বিশ্বাস তাদের জানান, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে, তারা কেউ তার কাছে যেতে পারছেন না।

মূল ফটকের ভেতরে ও বাইরে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের দুটি গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরও আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, যেগুলো বেশ কয়েকদিন ধরেই একই অবস্থানে দেখা গেছে।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের কাছ থেকে অবহিত হয়ে শেখ হাসিনা গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ফটকের কাছে যান।

এ সময় তার নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফ সদস্যরা বেশ কিছুক্ষণ  ফটক ধরে নাড়ানাড়ি করেন। কিন্তু ভেতর থেকে ফটক না খোলায় প্রধানমন্ত্রী ফিরে এসে ৮টা ৪৩ মিনিটের দিকে গাড়িতে উঠে বসেন; তার গাড়িবহর রওনা দেয় গণভবনের দিকে।

এ সময় বিএনপির কোনো নেতা বা খালেদা জিয়ার কোনো স্বজনকে ফটকে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দুই প্রতিবেদক।    

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলেও প্রধানমন্ত্রী রওনা দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।

ওই ঘোষণা শুনে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ভেতরে থাকা দলীয় নেতাকর্মীদের করতালি দিয়ে স্বাগত জানাতে দেখা যায়।

হৃদরোগে আক্রান্ত হলে শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত রহমানের মৃত্যু হয়।

স্ত্রী সৈয়দ শামিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন আরাফাত।

২০০৯ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমণ্ডির সুধা সদনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়।

এরপর বেশ কয়েকবার একই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তারা কথা বলেননি।

২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে দুই নেত্রী গিয়েছিলেন। অবশ্য সে সময় কথা হয়নি তাদের মধ্যে।

এছাড়া বিগত কয়েকবছরে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে গেলেও কথা বলেননি তারা।

জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন আরাফাত।

সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হয়; তবে বিএনপির দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।