বন্ধ ফটক থেকে ফিরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী

ছোট ছেলের মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে গুলশানে তার কার্যালয়ে গেলেও ভেতর থেকে প্রধান ফটক বন্ধ থাকায় ঢুকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Jan 2015, 02:46 PM
Updated : 25 Jan 2015, 09:40 AM

শনিবার রাত ৮টা ১৯ মিনিটে রওনা হয়ে ৮টা ৩৫মিনিটে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রীর গাড়ি বহর।

ভেতর থেকে ফটকে তালা থাকায় প্রধানমন্ত্রী খালেদার কার্যালয়ে ঢুকতে না পেরে গণভবনে ফিরে যান।

প্রধানমন্ত্রী গুলশানের পথে রওনা দেওয়ার পর পরই বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, “খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে।”

শেখ হাসিনা আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে যাচ্ছেন- এমন খবর সন্ধ্যা ৭টা থেকেই গণমাধ্যমে প্রচার হতে শুরু করে।

সাড়ে ৭টার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে গিয়ে দেখা যায় নিরাপত্তারক্ষীদের তৎপরতা। বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষী (এসএসএফ), প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিডেন্টসহ নিরাপত্তাকর্মীরা এলাকা ঘিরে ফেলে।

কার্যা‌লয়ের মূল ফটকের ভেতরে ও বাইরে খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের দুটি গাড়ি প্রধানমন্ত্রীর যাওয়ার খবর জানাজানি হওয়ার পরও আড়াআড়িভাবে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল, যেগুলো বেশ কয়েকদিন ধরেই একই অবস্থানে দেখা যায়।

৮টা ৩৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী গাড়িবহর বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে পৌঁছুলে প্রথমেই গাড়ি থেকে নেমে ফটকের দিকে হেঁটে যান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ।

তালা দেখে খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলেন তারা।

শিমুল বিশ্বাস তাদের জানান, খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে, তারা কেউ তার কাছে যেতে পারছেন না।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিলের কাছ থেকে অবহিত হয়ে শেখ হাসিনা গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে ফটকের কাছে যান।

এ সময় তার নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফ সদস্যরা ফটক ধরে নাড়ানাড়ি করলে ভেতর থেকে কেউ না  খুলে দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী ফিরে এসে ৮টা ৪৩ মিনিটের দিকে গাড়িতে উঠে বসেন; তার গাড়ি বহর রওনা দেয় গণভবনের দিকে।

বিএনপির কোনো নেতা বা খালেদা জিয়ার কোনো স্বজনকেও এ সময় ফটকে দেখেননি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের দুই প্রতিবেদক। 

তবে শেখ হাসিনার ফিরে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জামায়াত নেতা ড. রিদওয়ান উল্লাহ শাহেদি, খেলাফত মজলিস নেতা অধ্যক্ষ মো. ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল লতিফ নেজামীকে কার্যালয়ে ঢুকতে দেখা গেছে।

পরে তাদের কার্যালয়ের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগেই সেখানে অবস্থান করছিলেন বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, আর এ গণি, জমিরউদ্দিন সরকার, জাসদের আসম আবদুর রব, ন্যাপের জেবেল রহমান গণি, এনপিপির ফরিদুর জামান ফরহাদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যরিস্টার রফিক-উল হক, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম।

হৃদরোগে আক্রান্ত হলে শনিবার বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরাফাত রহমানের মৃত্যু হয়।

স্ত্রী সৈয়দ শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে কুয়ালালামপুরে একটি বাড়ি ভাড়া করে থাকছিলেন আরাফাত।

২০০৯ সালের মে মাসে শেখ হাসিনার স্বামী ড. ওয়াজেদ মিয়ার মৃত্যুর পর ধানমণ্ডির সুধা সদনে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সে সময় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সমবেদনা জানান এবং দুই নেত্রীর মধ্যে কিছুক্ষণ কথাও হয়।

এরপর বেশ কয়েকবার একই অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও তারা কথা বলেননি।

২০১৩ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক জানাতে বঙ্গভবনে দুই নেত্রী গিয়েছিলেন। অবশ্য সে সময় কথা হয়নি তাদের মধ্যে।

এরপর ২০১৩ সালের অক্টোবরে খালেদা জিয়াকে ফোন করে গণভবনে আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। কিন্তু খালেদা জিয়া আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন।

এছাড়া বিগত কয়েকবছরে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে সেনাকুঞ্জে গেলেও কথা বলেননি তারা।

জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হয়ে এক বছর কারাগারে থাকার পর ২০০৮ সালের ১৭ জুলাই মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন আরাফাত।

সেখান থেকে তিনি মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। অন্যদিকে মুদ্রা পাচার মামলায় বাংলাদেশের আদালতে ২০১১ সালে তার ৬ বছর কারাদণ্ড হয়; তবে বিএনপির দাবি, এই মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।