‘খুনি’ হিসেবে খালেদার বিচার: হাসিনা

নাশকতায় প্রাণহানির জন্য অবরোধ আহ্বানকারী খালেদা জিয়াকে দায়ী করে তার বিচারের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2015, 03:08 PM
Updated : 20 Jan 2015, 07:09 PM

বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে চলমান সংসদ অধিবেশনে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিচার চেয়ে আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা দাবি তোলার পর একথা বলেন তিনি।

অবরোধে নাশকতার শিকার নিরীহ মানুষের চিত্র তুলে ধরে আবেগাপ্লুত সংসদ নেত্রী হাসিনা বলেন, “কোনও জাতীয় ইস্যু নয়। ব্যক্তিগত কারণে উনি (খালেদা) খুন করে যাচ্ছেন। খুনির বিচার যা হওয়া উচিত, সেই বিচার হবে।”

তার আগে সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা নাশকতার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে দায়ী করে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি করে তাকে কারাগারে পাঠানোর দাবি তোলেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “৫ জানুয়ারি নির্বাচন বন্ধে যে নৈরাজ্য করেছে, সে সময় ব্যবস্থা নিলে আজ এ অবস্থা হত না। এখনও সময় রয়েছে।

“অবিলম্বে বিএনপিকে জঙ্গি সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করা হোক। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে রাষ্ট্রদ্রোহ, মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচার করা হোক।”

সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু বলেন, “তার জন্য ১৬ কোটি মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। এ পর্যন্ত ৩০টি মানুষ মারা গেছে। ৩০টি খুনের মামলা হবে। প্রতি মামলার খুনের আসামি হবে খালেদা জিয়া। এ মামলা যদি করতে না পারেন, তা হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যর্থতা।”

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি-জামাতের শীর্ষনেতা বেগম খালেদা জিয়াসহ সবাইকে অভিযুক্ত করতে হবে।”

নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত ২০ দলের নেত্রী খালেদা গত ৫ জানুয়ারি নিজের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ অবস্থায় লাগাতার অবরোধ ডাকেন।

কার্যালয় থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়ার পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংলাপ ডাকতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া যা করছে, তা আন্দোলন নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, জঙ্গি কার্যকলাপ। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গির স্থান হবে না। জঙ্গি উৎখাত করব।

“আমরা ধৈর্য ধরে সহনশীলতার সঙ্গে এগুচ্ছি। জনগণের নিরাপত্তা দিতে যা যা করতে হয়, করব।”

সংসদ নেতার আগে বক্তব্যে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ সহিংসতা ঠেকাতে সরকারকে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাতে নিজেদের সমর্থন থাকবে বলে জানান।

গণতন্ত্র ‘রক্ষার’ জন্য আন্দোলনের কথা বলে বিএনপি নেত্রী জনগণকে ‘হত্যা’ করছেন বলেও মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

“উনি মানুষের ওপর জুলুম করছেন। কোনো জুলুম বরদাশত করা যাবে না।”

নাশকতাকারীদের প্রতিরোধে জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা মানুষ হত্যা করবে- প্রত্যেক পাড়ায় মহল্লায় সন্ত্রাস-জঙ্গি বিরোধী কমিটি করে শান্তি-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতা করে রুখে দাঁড়ান। যারা জড়িত ধরিয়ে দিবেন।”

অবরোধ কর্মসূচির সময় আহত মানুষদের ছবি দেখিয়ে এগুলোকে তার বক্তব্যের অংশ হিসেবে গ্রহণ করতেও স্পিকারের প্রতি অনুরোধ জানান সংসদ নেতা।

“বিএনপি নেত্রী দোষ দিলেন এটা সরকারি দল করছে। ছবি তো কথা বলে। কী করে ডিনাই করবেন, এ কাজ তার না।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারি ট্রাকে আগুন দিচ্ছে, খাদ্যে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে, যাতে মানুষ খেতে না পায়। সাধারণ শ্রমিক-দিনমজুর, খেটে খাওয়া জনগণ, ছাত্র-ছাত্রীর ওপর হামলা করছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বাচ্চা নিয়ে যাচ্ছিল। এমনভাবে পুড়িয়েছে যাতে পেটের বাচ্চাটা মারা যায়।

“কিভাবে খালেদা জিয়া পুড়িয়ে মারতে পারল! কলেজের ছাত্রীকে মারল, শিক্ষয়িত্রীকে হত্যা করল।”

বিএনপি নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোটকে ‘বিষধর সাপ’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, “২০ দল বিষধর সাপ হয়ে দংশন করছে। ২০ দলের বিষে মানুষ জর্জরিত।

“গাড়ি থেকে ড্রাইভার বেরিয়ে গেছে, তার গায়ে পেট্রোল দিয়েছে। রেলে আগুন দেওয়া... কত প্রকারের খুন  হতে পারে এই খুন বিএনপি-জামাত করছে। কেউ রেহাই পাচ্ছে না।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে জঙ্গিদের জায়গা করে দিতে পারি না। যেখানে মুসলমান সেখানে কেউ কেউ গোলমাল পাকাচ্ছে। বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ মুসলমান, এখানে সবাই শান্তিপূর্ণভাবে আছে। সংখ্যালঘুরা নিরাপদে আছে। যে যার ধর্ম পালন করছে। এটা অনেকের পছন্দ নয়।

“অন্তত আমি বেঁচে থাকতে বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী দেশ হতে দেব না। তাতে যাই আসুক না কেন।”

অবরোধের আগুনে পুড়ছে ট্রাক

নির্দলীয় সরকারের দাবি জানালেও যুদ্ধাপরাধীদের ‘রক্ষার’ জন্য এখন আন্দোলন করছেন বলে দাবি করেন আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্যরা। 

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল বলেন, “বিএনপি-জামাতের যে আন্দোলন, তাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচন। কিন্তু তাদের মূল এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল। খালেদা-তারেক কিভাবে মামলা থেকে অব্যাহতি পাবে, কিভাবে একাত্তরের ঘাতকদের রক্ষা করতে পারবে।”

সংলাপের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তিনি বলেন, “বিএনপি সন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত। বিএনপি সন্ত্রাসের দল। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আইএস-লাদেনের সাথে পশ্চিমারা আলোচনা করে না।”

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “খালেদা জিয়ার আন্দোলন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। এক সময় পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান খুন করেছিল ৩০ লক্ষ শহীদকে, আজকেও বেগম খালেদা জিয়া খুনের নির্দেশ দিয়ে খুনির খাতায় নাম লিখিয়েছেন।”

বিএনপি জোটের কর্মসূচিতে জনগণের সমর্থন নেই দাবি করে তিনি বলেন, “তিনি অবরোধ দিয়েছেন, আর ঢাকায় ট্রাফিক জ্যাম। উনার কোনো ক্ষতি হচ্ছে না। তিনি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো অকার্যকর করতে চান।

“নিষ্ঠুর নেত্রী। তিনি স্কুল বাসেও বোমা মারার নির্দেশ দিতে পারেন। দেশবাসীকে আহ্বান, আসুন ঐক্যবদ্ধ হয়ে হাতিয়ার তুলে নিয়ে একাত্তরের মতো এদের পরাজিত করি।”

স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, “জনগণ শান্তি চায়, নিরাপত্তা চায়। আপনাকে এ সন্ত্রাস বন্ধ করে দিতে হবে। শান্তি ফিরিয়ে আনার জন্যে যা যা করার দরকার করতে হবে।”

তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী বলেন, “উনি খুনি। উনি মানুষ নামের কলঙ্ক। কোনো অবস্থায় এ খুনির সঙ্গে আলোচনা হবে না, সমঝোতা হবে না।”

শেখ সেলিম বলেন, শেখ হাসিনার ‘পা ধরে মাফ চাইলেই’ একমাত্র সংলাপ বা আলোচনা হতে পারে।