বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া বিবৃতিতে ক্ষুব্ধ যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসম্যানরা

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা জানিয়েছেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যানের নামে ‘মিথ্যা বিবৃতি’ প্রচার করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই কংগ্রেস সদস্য।

নিউইয়র্ক প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2015, 12:09 PM
Updated : 10 Jan 2015, 03:00 AM

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস ও কমিটির সদস্য এলিয়ট অ্যাঙ্গেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, কোনো পক্ষের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নামে ভুয়া বিবৃতি ব্যবহার কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।   

প্রথম আলো, নয়া দিগন্ত, ইউএনবিসহ বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এবং যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক দুটি অনলাইন সংবাদ পোর্টালে বৃহস্পতিবার রাতে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের নামে ওই বিবৃতির খবর প্রকাশ করে। ইউএনবি ৪০ মিনিট পর প্রতিবেদনটি প্রত্যাহার করে নেয়।

এড রয়েস ও এলিয়ট অ্যাঙ্গেলসহ ছয় কংগ্রেস সদস্যের নাম উল্লেখ করে এসব প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবরুদ্ধ করা এবং তার ছেলে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের নিন্দা জানিয়েছেন।

রয়েস ও অ্যাঙ্গেল ছাড়াও রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেস সদস্য স্টিভ শ্যাবট, জর্জ হোল্ডিং ও ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জোসেফ ক্রাউলি ও গ্রেস মেং ওই বিবৃতিতে সই করেছেন বলে দাবি করা হয়।

কিন্তু কংগ্রেসের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য গ্রেস মেংয়ের কার্যালয় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়, এ ধরনের কোনো বিবৃতির বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা নেই।

কমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েসের কার্যালয় থেকেও ওই বিবৃতির খবরে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়।

পরে রয়েস ও অ্যাঙ্গেলের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, ছয় কংগ্রেস সদস্যের নামে ৭ জানুয়ারির যে বিবৃতির বরাত দিয়ে বাংলাদেশের কিছু সংবাদ মাধ্যমে দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা ‘বানোয়াট’।

“পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি ও কংগ্রেস সদস্যদের অনেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এলেও কমিটি বা কোনো সদস্য এ ধরনের কোনো বিবৃতি দেননি।”

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ উপদেষ্টা এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বৈদেশিক দূত পরিচয় দিয়ে জাহিদ এফ সরদার সাদী নামের এক ব্যক্তি গত ৮ জানুয়ারি বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের উদ্বোধনী অধিবেশনে (৬ জানুয়ারি) নজিরবিহীনভাবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। কংগ্রেস সদস্য হাকিম জেফরি বিষয়টি হাউজে উত্থাপন করেন।

এ বিষয়টিও সত্য নয় বলে কংগ্রেস সদস্য হাকিম জেফরির কার্যালয় থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানানো হয়েছে।

জাহিদ এফ সরদার সাদীর ফেইসবুক পাতায় কংগ্রেসের একটি ‘বিশেষ বিবৃতি’ এবং উদ্বোধনী অধিবেশনে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে সরকারের প্রতি ‘কঠোর হুঁশিয়ারি’ উচ্চারণের কথাও লেখা হয়েছে, যদিও তার কোনো সত্যতা মেলেনি। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের অনুসন্ধানে জানা যায়, জাহিদ এফ সরদার সাদী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় বসবাস করেন। ফ্লোরিডা ও অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে দুই ডজনের বেশি প্রতারণার মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তার হয়ে সাজাও খেটেছেন তিনি।

অ্যারিজোনায় ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার একটি মামলার নথিতে দেখা যায়, সাদী কখনও সর্দার জাহিদ ফারুক, কখনও সর্দার ফারুক, এস ফারুক, সর্দার ফারুক আবার কখনও ফারুক সর্দার নাম নিয়ে প্রতারণা চালিয়ে এসেছেন।

২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তাকে বিএনপির বৈদেশিক দূত এবং বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বলে নিউ ইয়র্ক বিএনপির নেতারা জানান।

এরকম একজন ‘বিতর্কিত ব্যক্তিকে’ দলের বৈদেশিক দূত নিয়োগ দেওয়ায় দুই সপ্তাহ আগেই নিউ ইয়র্কে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্ময় প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট।

যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির আরেক নেতা মো. বশির বলেন, “এই ব্যক্তি কংগ্রেসম্যানদের সই জাল করে ভুয়া বিবৃতি প্রচারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইমেজ ভূলুন্ঠিত করল।”