জাতীয় প্রেসক্লাবে মারামারি

৫ জানুয়ারিতে রাজনৈতিক উত্তাপের মধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অবস্থানকে কেন্দ্র করে জাতীয় প্রেসক্লাবে সোমবার মারামারি বেঁধেছিল সরকার ও বিরোধী দল সমর্থকদের মধ্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Jan 2015, 09:50 AM
Updated : 5 Jan 2015, 04:23 PM

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রেসক্লাব মিলনায়তনে একটি সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে বের হওয়ার সময় বাইরে থাকা যুবলীগকর্মীদের বাধার মুখে পড়েন।

সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং নিজের কার্যালয়ে দলীয় চেয়ারপারসন কার্যত অবরুদ্ধ থাকার মধ্যে সোমবার প্রেসক্লাবে বিএনপি সমর্থিত পেশাজীবীদের এক সমাবেশে বক্তব্য দিতে আসেন বিএনপির মুখপাত্র।

ঢাকায় সভা-সমাবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সমাবেশের আয়োজন করে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, যার আহ্বায়ক সাংবাদিক নেতা রুহুল আমীন গাজী।

সমাবেশের পর ফখরুল, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধানসহ কয়েকজন প্রেসক্লাবের ফটক দিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলে বাইরে অবস্থানরত সরকার সমর্থকরা ‘জয় বাংলা’ ও ‘জ্বালো জ্বালো আগুন জ্বালো’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। তখন ফখরুলসহ বিরোধী নেতারা আবার প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়েন।

প্রেসক্লাবের দিকে তেড়ে যাচ্ছেন সরকার সমর্থকরা

এরপর মাথায় মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের পট্টি লাগানো একদল প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে অবস্থানরত বিএনপি সমর্থকদের ওপর চড়াও হলে মারামারি বেঁধে যায়। 

মারামারির সময় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে শহীদ সাংবাদিকদের নামফলক ভাংচুর হয়েছে। এজন্য বিএনপি সমর্থকদের দায়ী করেছেন সাংবাদিকদের একাংশ।

ফখরুল সঙ্গীদের নিয়ে ঢোকার সময় নামফলক ভাঙার শব্দ পেয়ে সেদিকে তাকান। এসময় তার চোখে-মুখে বিব্রত ভাব দেখা যায়। পরক্ষণে তিনি দ্রুত প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে যান।

প্রায় ১৫ মিনিট ধরে মারামারির পর ইকবাল সোবহান চৌধুরী, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুলসহ সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, “প্রেসক্লাব শুধু সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্থান। এখানে রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করতে যারা এসেছেন, তাদের চলে যেতে অনুরোধ করছি।

“প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষকে বলছি, আপনারা অবিলম্বে রাজনৈতিক নেতাদের বের করে দিন। অন্যথায় আমরা সারারাত বাইরে অবস্থান করব।”

প্রেসক্লাব থেকে বের হচ্ছেন মির্জা ফখরুল

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভেতরে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ব্যবস্থাপনা কমিটি কয়েক বছর ধরে বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণে। ফখরুলসহ বিরোধী নেতারা প্রেসক্লাবের ভেতরে সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে অবস্থান নিয়ে আছেন।

বিএফইউজের একাংশের সভাপতি বুলবুল বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেব একটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এখানে প্রেস ব্রিফিং করতে পারেন। তবে তার নেতৃত্বে শতশত দলীয় কর্মী প্রেসক্লাব দখলের চেষ্টা করতে পারেন না।”

এরপর ইকবাল সোবহান ও বুলবুলসহ সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতারা প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার জন্য ভেতরে ঢোকেন।

আলোচনা করে বেরিয়ে এসে ইকবাল সোবহান সাংবাদিকদের বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম একজন জাতীয় নেতা। তিনি প্রেসক্লাবে আসতে পারেন। তবে অন্য যে রাজনৈতিক কর্মীরা প্রেসক্লাবে অবস্থান নিয়েছে, তাদের বের করার বিষয়ে মতৈক্য হয়েছে।”

সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) এবং ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ সংবাদ সম্মেলন করে শহীদ সাংবাদিকদের স্মরণে নির্মিত ফলক ভাংচুরের নিন্দা এবং জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন।

ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ সাংবাদিক নেতাদের একাংশ

বুলবুল বলেন, “দুপুরে যখন ফখরুল সাহেব ক্লাবের মূল ফটকে অবস্থান করছিলেন, তখন তার দলীয় কর্মীরা জিয়ার সৈনিক স্লোগান দিতে দিতে প্রেসক্লাবে ঢোকে। মূল ফটকের সামনেই শহীদ সাংবাদিকদের জন্য নির্মিত কাচের ফলক তারাই ভেঙে ফেলে।”

প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক শফিকুর রহমান বলেন, “আমার সময়ে মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের সম্মানে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি ম্যুরাল তৈরি করা হয়েছিল। সেটি এখন প্রায় লুকিয়ে ফেলা হয়েছে।

“যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন তাদের সম্মানার্থে নির্মিত কাচের ফলকটিও আজ ভেঙে ফেলা হয়েছে। এটি অত্যন্ত ন্যক্কারজনক।”

নামফলক ভাঙার নিন্দা জানিয়ে ইকবাল সোবহান বলেন, কেউ যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ইতিহাসকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তি করে, তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজ ঐক্যবদ্ধ থাকবে।

“প্রেসক্লাব কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার হবে না। কোনো ব্যক্তি যদি রাজনীতি করতে চান, করতে পারেন; তবে এ ক্ষেত্রে প্রেসক্লাবের কার্যালয়কে ব্যবহার করা যাবে না।”

সংবাদ সম্মেলন থেকে জানানো হয়, প্রেসক্লাব যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ব্যবহার না হয় সেজন্য মঙ্গলবার থেকেই প্রথম তলায় থাকা বিএফইউজের কার্যালয় থেকে সে দিকে বিষয়ে নজর রাখা হবে।