যুদ্ধাপরাধী আজহারের ফাঁসির রায়

বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণের মতো যুদ্ধাপরাধ ঘটিয়ে উঠতি বয়সেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন রংপুর অঞ্চলের ত্রাস; চার দশক আগের সেই অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের ফাঁসির রায় দিয়েছে আদালত।

সুলাইমান নিলয়ও কাজী শাহরিন হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Dec 2014, 06:43 AM
Updated : 30 Dec 2014, 06:43 AM

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।

প্রসিকিউশনের আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে আজহারের দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হকও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

জামায়াতের আজকের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম একাত্তরে ছিলেন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি। সে সময় তার নেতৃত্বেই বৃহত্তর রংপুরে গণহত্যা চালিয়ে ১৪ শ’র বেশি মানুষকে হত্যা, বহু নারীকে ধর্ষণ ও অপহরণ, নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল বলে ট্রাইব্যুনালে প্রমাণিত হয়েছে।      

প্রসিকিউশন বলছে, সংখ্যার দিক থেকে এত বড় গণহত্যার বিচার এ ট্রাইব্যুনালে আর হয়নি।

ট্রাইব্যুনাল আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা না থাকায় একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়নি। তার বদলে রাষ্ট্রকে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে বলেছে আদালত। পাঠ্যপুস্তকেও তাদের গৌরবগাথা অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে।

রায় শুনে কাঠগড়ায় থাকা এই জামায়াত নেতা দাঁড়িয়ে যান এবং সামনের দিকে হাত উঁচিয়ে বিচারকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এটা ফরমায়েশি রায়। আমি নির্দোষ। আল্লাহর আদালতে আপনাদের বিচার হবে ইনশাল্লাহ।”

রায় ঘোষণা শেষ হলে তিন বার ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি তুলে এই বদর নেতা বলেন, “আল্লাহ আপনাদেরও বিচার করবে।”

আজহার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলেও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন তার আইনজীবী।

অন্যদিকে রায়ের পর স্রষ্টার শুকরিয়া আদায় করেছেন রংপুরের বীরাঙ্গনা মানসুরা, যাকে অন্য অনেক নারীর মতো ধরে নিয়ে গিয়েছিল আজহার ও পাকিস্তানি বাহিনী, রংপুর টাউন হলে নিয়ে করা হয়েছিল ধর্ষণ।

তিনি বলেন, “লম্পট আজহারের ফাঁসির রায় হওয়ায় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। ফাঁসি কার্যকর হলে শান্তিতে মরতে পারব।”

এটিএম আজহার হলেন জামায়াতের অষ্টম শীর্ষ নেতা, যিনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলেন। 

‘সবচেয়ে বড়’ গণহত্যার বিচার

এটিএম আজহারুল ইসলামের সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা চালিয়ে অন্তত ১৪০০ লোককে হত্যা এবং ১৪ জনকে খুনের অপরাধে।

প্রসিকিউশনের আনা ছয় অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর অভিযোগ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।

এর মধ্যে ২  নম্বর অভিযোগে ১৪ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন চালিয়ে হত্যা,  ৩ ও ৪ নম্বর অভিযোগে ঝাড়ুয়ার বিল ও দমদম ব্রিজে ১৪ শ’র বেশি লোককে হত্যার দায়ে আজহারকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ সাংবাদিকদের বলেন, “ট্রাইব্যুনালে যতগুলো বড় গণহত্যার ঘটনার বিচার হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে ঝাড়ুয়ার বিলের গণহত্যা। সংখ্যার দিক থেকে এত বড় গণহত্যার বিচার ট্রাইব্যুনালে হয়নি।”

ওই অঞ্চলের বহু নারীকে রংপুর টাউন হলে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতন কেন্দ্রে ধর্ষণের জন্য তুলে দেওয়ার দায়ে ৫ নম্বর অভিযোগে একাত্তরের এই বদর কমান্ডারকে ২৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।   

৬ নম্বর অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনায় আসামির জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

আর ১ নম্বর অভিযোগ প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় আজহারকে খালাস দিয়েছে আদালত।

তিনটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হওয়ায় আজহারকে আর জেল খাটতে হবে না। তিনি ৩০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ পাবেন।  

প্রতিক্রিয়া ও পর্যবেক্ষণ

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাসে করে সকাল ৯টার দিকে আজহারকে ট্রাইব্যুনালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে রাখা হয় ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায়।

তাকে আদালত কক্ষে নিয়ে আসা হয় সকাল ১০টা ৫৮ মিনিটে। সাদা পায়জামা পাঞ্জাবি ও ঘিয়ে রঙের স্যুয়েটার পরিহিত এই জামায়াত নেতা কাঠগড়ায় রাখা চেয়ারে বসেই পায়ের ওপর পা তুলে দেন।

বেলা ১১টা ৮ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্য বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক এজলাসে আসেন।

প্রারম্ভিক বক্তব্যে ট্রাইব্যুনালে চেয়ারম্যান বিচারপতি  ইনায়েতুর রহিম বলেন, “দেশের ও বিদেশের কয়েকটি মিডিয়া বলছে, এখানে ধর্মীয় নেতাদের রায় দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা একাত্তরের অপরাধীদের বিচার করছি। তিনি কোন পর্যায়ের ইসলামিক বা ধর্মীয় নেতা সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়।”

আসামির আজকের অবস্থান আদালতের বিচারে দেখা হয় না বলেও উল্লেখ করেন বিচারক।

জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় এর আগের রায়ের দিনগুলো ঘিরে সারা দেশে সহিংসতার বিষয়টিও ট্রাইব্যুনাল প্রধানের বক্তব্যে এসেছে।

বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, “আমরা রায় হওয়ার পর বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখি। বিবৃতি দিয়ে বা সহিংস হয়ে রায় পরিবর্তন করা যায় না। আইনের ভেতরে থেকে আইনের মাধ্যমে চেষ্টা করতে হয়।”

এরপর ১৫৮ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়া শুরু হয়। বিচারপতি মো. আনোয়ারুল হক এ মামলার প্রেক্ষাপট আদালতের সামনে তুল ধরেন। বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন পড়েন রায়ের পর্যবেক্ষণের একটি অংশ। সবশেষে বিচারপতি  ইনায়েতুর রহিম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগকে বিবেচনায় নিয়ে তাদের ত্যাগ ও কষ্টকর অভিজ্ঞতার ইতিহাসকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে যুক্ত করতে সরকারের  প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ, যাতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারে। যাতে বীরঙ্গনাদের আত্মত্যাগ, পাকিস্তান দখলদার ও তাদের সহযোগী রাজাকার, আল বদর ও আল শামসের যৌন সন্ত্রাসসহ বর্বর ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে তারা জানতে পারে।”

রায়ে বলা হয়, প্রসিকিউশন বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণের আবেদন জানালেও ট্রাইব্যুনাল আইনে এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই।

“কিন্তু আমরা মনে করি, রাষ্ট্রের উচিৎ আর দেরি না করে এই বীরাঙ্গনাসহ সকল বীরাঙ্গনাকে যথাযথভাবে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসন করা। কারণ তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ঘোষিত এবং সম্মানিত বীরাঙ্গনা। সমাজে তাদেরকে গ্রহণ, স্বীকৃতি এবং সম্মানিত করা রাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব। শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের মতো তারাও জাতির অহঙ্কার।”

এর আগে হবিগঞ্জের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের যুদ্ধাপরাধ মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে বীরাঙ্গনা ও যুদ্ধশিশুদের ‘জাতীয় বীর’ উল্লেখ করে বলা হয়, তাদের দুর্দশা কমানোর জন্য সরকার দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলে ট্রাইব্যুনাল আশা করে।

বদর কমান্ডার থেকে জামায়াত নেতা

এটিএম আজহারুল ইসলামের জন্ম ১৯৫২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার বাতাসন লোহানীপাড়া গ্রামে। বাবার নাম নাজির হোসাইন, মা রামিসা বেগম।

১৯৬৮ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে মেট্রিক পাস করে পরের বছর তিনি ভর্তি হন রংপুর কারামাইকেল কলেজে। একত্তরে বাঙালি যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, আজহার তখন জামায়াতের সেই সময়ের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের জেলা কমিটির সভাপতি হিসাবে আলবদর বাহিনীর রংপুর শাখার কমান্ডার।

বাঙালির মুক্তি সংগ্রাম দমনে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা দিতে শীর্ষ জামায়াত নেতাদের তত্ত্বাবধানে এই সশস্ত্র দলটি গড়ে তোলা হয়।

পাকিস্তানি বাহিনী সে সময় রংপুর টাউন হলকে  নির্যাতন কেন্দ্রে পরিণত করে এবং বৃহত্তর রংপুরের বিভিন্ন জায়গা থেকে স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে এনে সেখানে নির্যাতন করা হয়।

রংপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আজহার সে সময় ৭০ জন আল-বদর সদস্যের একটি বাহিনীর নেতৃত্ব দিতেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের স্বজনদের তথ্য সংগ্রহ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে দিতেন এবং তাদের হত্যা, আটকে রেখে নির্যাতনে অংশ নিতেন।

১৭ আগস্ট আল বদর বাহিনী সারা দেশেই সভা-সমাবেশ করে। রংপুর সদরে আল বদর বাহিনীর সেই সভা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামের সভাপতিত্বে, যা জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামেও আসে।

১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতাযুদ্ধে বাংলার বিজয়ের আগে আগে আজহার দেশত্যাগ করেন এবং চলে যান সৌদি আরবে।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর আজহার আবার দেশে ফেরেন এবং ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন।

জিয়াউর রহমানের আমলে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ার পর দলের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন আজহার। ১৯৯১ সালে তিনি ঢাকা মহানগর জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পান এবং ২০০৫ সালে কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হন।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ যুদ্ধাপরাধ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর কিছুদিনের জন্য ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন আজহার। ২০১২ সালের ২২ অগাস্ট তিনিও একই অভিযোগের মামলায় গ্রেপ্তার হন।

‘কলঙ্কমোচন’

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আজহারের আইনজীবী তাজুল ইসলাম বলেন, “প্রসিকিউশন যে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছে সেই সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে সেই সাক্ষ্যপ্রমাণ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেললে সুবিচার হতো।”

আপিল করার কথা জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, “তার (আজহার) সাথে কথা হয়েছে, তিনি মৃত্যুদণ্ডে ভীত নন। আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।”

অন্যদিকে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘এই ভয়ঙ্কর অপরাধী’ দণ্ড পাওয়ায় রংপুরের শহীদদের আত্মা ও তাদের স্বজনরা সান্ত্বনা পাবে।

প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ বলেন, “দীর্ঘ বিচার চলাকালে এটিএম আজহার তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়নি। এমনকি রায়ের দিনও না। সাজা দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্রাইব্যুনাল এই বিষয়টিও বিবেচনায় রেখেছে।”

রংপুরের বীরাঙ্গনা মানসুরার স্বামী মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা (৭৫) ছিলেন এ মামলায় প্রসিকিউশনের দ্বিতীয় সাক্ষী।

রায়ের পর তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালতের কাছে আজহারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছি। আদালত তা দিয়েছেন। রায় দ্রুত কার্যকর করা হলে রংপুর কলঙ্কমুক্ত হবে।”

আজহার আল বদর নেতা হিসেবে রংপুরের কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপকের স্ত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করেছিলেন একাত্তরে।

রায়ের পর ওই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই কলেজের শিক্ষকরা শহীদ শিক্ষকদের স্মৃতিফলকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

রংপুরের বদরগঞ্জের লোহানীপাড়া ইউনিয়নে আজহারের গ্রাম বাতাসনের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকবর আলী বলেন, “এমন সাজা তার প্রাপ্য ছিল, আজ বাতাসন গ্রামসহ বদরগঞ্জ উপজেলার কলঙ্কমোচন হল।”

রায়ের পর বদরগঞ্জে আনন্দ মিছিল বের হওয়ার পাশাপাশি অনেককে মিষ্টি বিতরণ করতেও দেখা যায়।

রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই রায়ে বীরাঙ্গনাদের অবদানের কথা বলা হয়েছে। রাষ্ট্রকে বলা হয়েছে তাদের স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এটা একটি যুগান্তকারী ঘটনা।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মুফিদুল হক বলেন, “ন্যায়ের স্বীকৃতি পেলাম। আপিলের নামে যাতে রায় কার্যকরে বিলম্ব না হয় সেই প্রত্যাশা করছি।”

রায়ের পর শাহবাগে সমবেত গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা আনন্দ মিছিল করেছে। তবে একইসঙ্গে সর্বোচ্চ আদালতে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া যুদ্ধাপরাধী মো. কামারুজ্জামানের রায় কার্যকরের দাবিতে প্রতি শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

মামলার দিনপঞ্জি

২০১২ সালের ১৫ এপ্রিল এটিএম আজহারের যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু করেন তদন্ত কর্মকর্তা এস এম ইদ্রিস আলী। ওইবছর ২২ অগাস্ট মগবাজারের বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

তদন্ত শেষে প্রসিকিউটর এ কে এম সাইফুল ইসলাম ও নূরজাহান বেগম মুক্তা ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই আজহারের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেন।

যুদ্ধাপরাধের ছয় ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে গত বছর ১২ নভেম্বর আজহারের বিচার শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। ২৬ ডিসেম্বর শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) এম ইদ্রিস আলীসহ প্রসিকিউশনের পক্ষের মোট ১৯ জন সাক্ষ্য দেন। তবে সপ্তম সাক্ষী আমিনুল ইসলামকে বৈরি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া আজহারের যুদ্ধাপরাধের একজন ‘ভিকটিম’ ১৪ নম্বর সাক্ষী হিসাবে ক্যামেরা ট্রায়ালে জবানবন্দি দেন।

চলতি বছর ৩ ও ৪ অগাস্ট আজহারের পক্ষে একমাত্র সাফাই সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন আনোয়ারুল হক।

দুই পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখা হয়।

 

[এই প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন ফয়সাল আতিক, কামাল তালুকদার, আজিজ হাসান, হালিম সুমন ও শাহজাদা মিয়া আজাদ ]