নিজস্ব সংস্কৃতি চর্চায় জোর দিতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ, ধর্মান্ধতা ও সহিংসতা বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়; নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য চর্চার মাধ্যমে এসব অমানবিক আচরণে পরিবর্তন আসতে পারে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Dec 2014, 12:58 PM
Updated : 29 Dec 2014, 02:56 PM

সোমবার শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করতে গিয়ে একথা বলে তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাঙালি সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অসাম্প্রদায়িকতা। ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ ভুলে মানুষে মানুষে মিলন হবে- এটাই বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা।

“মাঝে মধ্যে নিজের মনেই প্রশ্ন জাগে, বাঙালি জাতি কি তার সংস্কৃতির মূলধারা থেকে বিচ্যুত হচ্ছে? হয়তো কিছু একটা গোষ্ঠী বিশেষ হচ্ছে, সমগ্র বাঙালি জাতি নয়।” 

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে জাতীয় জাদুঘরে জন্মবার্ষিকীর এ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তৃতায় মানুষের মননে ‘মানবিক মূল্যবোধ’ জাগ্রত করতে শিল্পী-সাহিত্যিক, সংস্কৃতিসেবীদের ‘কার্যকর’ পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “আমরা চাই একটি সুন্দর বাংলাদেশ এবং আমরা সেটা দেখি। যেমন পহেলা বৈশাখ আমরা বাঙালির নববর্ষ উদযাপন করি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সবাই এক হয়ে মিলেমিশেই পালন করি। এটাইতো বাঙালির বৈশিষ্ট্য।”

প্রতিটি ধর্মের অনুষ্ঠান মিলেমিশে উদযাপন করার দৃষ্টান্তও বাংলাদেশে রয়েছে বলে জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের মন থেকে ঘৃণাবোধ দূর করতে হবে। আমরা সংঘাত চাই না, শান্তি চাই। বাঙালির জাতির একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ আমরা গড়ে তুলতে চাই।

অনুষ্ঠানে জয়নুল আবেদিনের জীবন ও শিল্পকর্ম নিয়েও কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কেবল একজন শিল্পী ছিলেন না, বাংলাদেশের শিল্পসংস্কৃতির অঙ্গনে নানা ক্রান্তিকালে তিনি নেতৃত্বও দিয়েছেন।

“১৯৪৭ পরবর্তীকালে ঢাকায় একটি চারু ও কারুকলা বিদ্যায়তন প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে রূপান্তরিত হয়েছে।

“জীবনাশ্রয়ী বাস্তবানুগ শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের কৃতিত্ব সর্বজনস্বীকৃত। সাধারণ মাটির মানুষের বিচিত্র জীবনের বিভিন্ন দিক এবং নিসর্গ, নবান্ন, দুর্ভিক্ষ, জলোচ্ছ্বাস, যুদ্ধ, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, জীবজন্তু ইত্যাদি অনায়াসে তার শিল্পকর্মের বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্পাচার্য ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ শীর্ষক চিত্রমালার জন্য সারাবিশ্বে খ্যাতিলাভ করেছেন। তাঁর নৌকা, সংগ্রাম, নবান্ন, মনপুরা-৭০, বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রভৃতি শিল্পকর্ম একদিকে বাংলার নিসর্গ, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে যেমন ফুটিয়ে তুলেছে, তেমনি বাঙালির জীবন-সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি এসব শিল্পকর্মে মূর্ত হয়ে উঠেছে।

এসময় বঙ্গবন্ধুর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “জাতির পিতাও শিল্পী ছিলেন। তবে তার ক্ষেত্র রঙ-তুলির জগতে ছিল না, তিনি ছিলেন রাজনীতির নান্দনিক শিল্পী। বাঙালির মানসে তিনি শুধু স্বাধীনতার বীজমন্ত্র এঁকে দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন।” 

বঙ্গবন্ধু কন্যা জানান, শিল্পচার্যের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা মননে-আদর্শে একই ধরনের মত ও পথের অনুসারী ছিলেন। এই দুই বাঙালি মহাপুরুষ বাঙালি সংস্কৃতির উন্নয়ন ও বিকাশে আজীবন কাজ করেছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ফিতা কেটে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জয়নুল আবেদিন স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর।

জয়নুল আবেদিনের স্ত্রী বেগম জাহানারা আবেদিনও বক্তব্য দেন।