জিহাদের মৃত্যুর ক্ষতিপূরণের জন্য আদালতে আবেদন

পরিত্যক্ত গভীর নলকূপের পাইপে পড়ার ২৩ ঘণ্টা পর মৃত অবস্থায় জিহাদকে উদ্ধারের ঘটনায় তদন্ত এবং পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাই কোর্টে দুটি রিট আবেদন হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2014, 03:46 PM
Updated : 28 Dec 2014, 07:47 PM

চার বছরের শিশুটিকে জীবিত উদ্ধারে সরকারি সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা তদন্তে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে একটি আবেদনে।

অন্যটিতে জিহাদের পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল চাওয়া হয়েছে।

গত শুক্রবার রাজধানীর শাহজাহানপুর রেল কলোনির পাইপে পড়া জিহাদকে উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস হাল ছেড়ে দেওয়ার পর কয়েকজন তরুণের উদ্যোগে তুলে আনা হয় শিশুটিকে।

পরিত্যক্ত নলকূপের কয়েকশ ফুট গভীর পাইপে পড়ে যাওয়ার সময় মাথায় আঘাত পেলেও পানির কারণে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে শিশু জিহাদের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা।

যে শিশুটির বেঁচে থাকার প্রার্থনা ২৩ ঘণ্টা ধরে করে আসছিল বাংলাদেশের সবাই, মৃত্যুর পর শরীয়তপুরে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়েছে তাকে।  

জিহাদের উদ্ধার কার্যক্রম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের ভূমিকার ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দুটি করা হয়।  

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মাইনুল হকের পক্ষে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল এবং চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আব্দুল হালিম আবেদন দুটি করেছেন।

সৈয়দ মাইনুলের আবেদনে কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

উদ্ধার অভিযানের এক পর্যায়ে ক্যামেরা নামিয়ে তোলা ছবিতে কিছু না পাওয়ায় পাইপে জিহাদের পড়ে যাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সংশয় প্রকাশের পর শিশুটির বাবা নাসির উদ্দিনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল পুলিশ, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা চলছে।  

রিট আবেদনে জিহাদের বাবাকে ১২ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ঘটনায় দায়ী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজি ও ডিএমপি কমিশনারকে নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

আইজিপি হাসান মাহমুদ খোন্দকার ইতোমধ্যে বলেছেন, ‘সৎ উদ্দেশ্যেই’ জিহাদের বাবাকে হেফাজতে নিয়েছিল পুলিশ এবং তাকে ‘আন্তরিকভাবে’ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।    

নলকূপের এই মুখটি খোলা ছিল তখন,যখন জিহাদ পড়ে গিয়েছিল; এখন তা বন্ধ

রিট আবেদনে রাজধানীর খোলা ম্যানহোলগুলোতে দ্রুত ঢাকনা স্থাপনের জন্য ডিসিসি ও ওয়াসার প্রতি নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, “রেলওয়ের শাহজাহানপুর কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের পাইপের মুখ খোলা থাকায় দুর্ঘটনা ঘটেছে। যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আগেই পাইপের মুখ বন্ধ করে দিতো তাহলে এ ধরনের নির্মম ঘটনা হতো না।”

জিহাদকে উদ্ধারে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, সেই রুলও চেয়েছেন আবেদনকারী মাইনুল হক।

চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের রিট আবেদনে জিহাদের মৃত্যুর জন্য ৩০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি তার বাবাকে আটকের জন্য এক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

বের করে আনা হচ্ছে জিহাদকে

আইনজীবী আবদুল হালিম বলেন, “সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদ অনুসারে শিশুটির জীবনের অধিকার ও মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে।”

সারাদেশে অরক্ষিত ও উন্মুক্ত পাইপ, কূপ, টিউবওয়েল, স্যুয়ারেজ পাইপ, গর্ত এবং পানির ট্যাঙ্কের তালিকা তৈরি করে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশনাও চেয়েছে সংগঠনটি।

এছাড়া অরক্ষিত পাইপ, গর্ত, পানির ট্যাঙ্ক কারণে এবং অবহেলাজনিত দুর্ঘটনা রোধে নীতিমালা করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানাতেও আদেশ চাওয়া হয়েছে।

একইসঙ্গে জিহাদকে উদ্ধারকারী ৫ যুবককে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার আবেদন করেছে চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

এছাড়া গত দুই বছরে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কী কী আধুনিক যন্ত্রপাতি কিনেছে, তার একটি তালিকা নিতে আদালতে আর্জি জানানো হয়েছে।

এই রিট আবেদনে স্বরাষ্ট্র সচিব, রেলওয়ে সচিব, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক, রেলওয়ের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেনটেইনেন্স), ওয়াসার চেয়ারম্যান, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, পুলিশের মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার ও শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে।