ঐতিহ্য রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় দালান নয়: প্রধানমন্ত্রী

নতুন নগরায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা তৈরির নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়া ব্রিটিশ আমলের দালানগুলো এখনো ধরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা তিনি দেখেন না। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Dec 2014, 12:25 PM
Updated : 28 Dec 2014, 12:25 PM

রোববার গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্ত সংস্থাগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ বিষয়ে দির্দেশনা দেন।

ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক আমলের কিছু কিছু স্থাপনা ভেঙে ফেলতে বলেন তিনি।

“এখানে আমি আরেকটা দিক দেখি, ব্রিটিশ আমলের ভাঙা দালান সেটা রাখা- এটার মনে হয় খুব একটা প্রয়োজন নেই। ঐতিহ্য রক্ষার নামে অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলি ধরে রাখার একটা চেষ্টা..., হ্যাঁ যদি দৃষ্টিনন্দন হয় তাহলে দুই একটা জিনিস রাখা যেতে পারে।

“কিন্তু লাল দালান যে কয়টা আছে সবই রেখে দিতে হবে হেরিটেজ হিসেবে, কীসের হেরিটেজ? ব্রিটিশদের গোলামি করেছি আমরা। তাদের হেরিটেজ রক্ষা করার কোনো প্রয়োজন আমাদের আছে বলে অন্তত আমি মনে করি না।”

দুইশ বছরের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের লড়াই করতে হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছে, রক্ত দিতে হয়েছে। এটাও মনে রাখতে হবে। ”

তিনি বলেন, স্থাপত্য শিল্পের বিবেচনায় যেসব ভবনের গুরুত্ব আছে, সেগুলো সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

“কিন্তু সব দালান ধরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা আছে.. আমি জানি না আমার একথা শুনে হয়তো অনেকেই খুব মন খারাপ করতে পারে। কিন্তু আমি ব্যক্তিগতভাবে এটাই মনে করি।”

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের উপস্থিতিতে এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সার্বিক পরিকল্পনা করে নতুন বিভাগগুলোর অবকাঠামো উন্নয়নের তাগিদ দেন। দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা করে সব সরকারি দপ্তর ও আবাসিক এলাকার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে বলেন।  

“জেলা শহরে যখন নির্মাণ কাজ হবে সেটা পরিকল্পিতভাবে করা উচিৎ বলে আমি মনে করি। আমি চাই, এ বিষয়টা আপনারা বিশেষভাবে দেখবেন।”

উপজেলা, ইউনিয়ন ও পর্যটন এলাকাগুলোর উন্নয়নেও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করার নির্দেশ দেন তিনি।

“ঢাকা শহরে ধীরে ধীরে লোকসংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু শহরটা এত ছোট, ঘিঞ্জি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ সুষ্ঠভাবে বসবাস করবে, তারা নাগরিক সুযোগ-সুবিধাগুলি পাবে। সেগুলি যদি আমরা পরকিল্পিতভাবে না করতে পারি, তাহলে কিন্তু মানুষের বসবাসের উপযোগী থাকবে না।”

পাশাপাশি হাসপাতালে এখন যেভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা হয়, তার সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। 

“হাসপাতালের ব্যাপারে একটা নির্দেশনা থাকা উচিৎ। যত্রতত্র আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল হচ্ছে। কিন্তু হাসপাতালের বর্জ্য নিষ্কাশনের কোনোরকম ব্যবস্থা নাই। আমি বড় বড় হাসপাতাল কর্তপক্ষকে জিজ্ঞেসও করেছি; তারা বলেছে, ‘কন্টেইনারে করে সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দেয়। সিটি করপোরেশন ওটা নিয়ে কি করে, কোথায় ফেলে জানি না’। এতে রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়বে।”

আবাসিক এলাকায় হাসপাতাল ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “সব থেকে ক্ষতিকারক মনে হয় হাসপাতালের বর্জ্যগুলি। এটার একটা ব্যবস্থা একান্তভাবে নেওয়া দরকার এবং প্রত্যেকটা হাসপাতালের এজন্য নিজস্ব ব্যবস্থা থাকা উচিৎ।”

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ঢাকার যেখানে সেখানে শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলারও সমালোচনা করেন।

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তো কোনো মাত্রাজ্ঞানই নাই। ইউনিভার্সিটি বলতে আগে যা বুঝতাম এখন আর তা নাই। ব্যাঙের ছাতার মতো ইউনিভার্সিটি। এক বিল্ডিংয়ে দেখা গেল অনেকগুলি সাইনবোর্ড। সব নাকি ইউনিভার্সিটি।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কোনো একটা পরিকল্পনা নিয়ে কিন্তু কিচ্ছু করা হয়নি। যে যখন এসেছে, একেকটা পারমিশন দিয়ে গেছে।”

সরকারি পরিত্যক্ত জমিতে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা করতেও তিনি নির্দেশ দেনে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, তেজগাঁও শিল্প এলাকাকে বাণিজ্যিক এলাকায় রূপান্তর করা হচ্ছে। সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণ শুরুর আগেই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে হবে।

ঢাকার জলাধার রক্ষায় করা ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান (ড্যাপ) বাস্তবায়নের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক। এটা করাতে একটা কাজ ভালো হচ্ছে যে, যেখানে সেখানে দখল করে জমি ভরাট করে ফেলা- সেই সুযোগটা আর কেউ পায়নি। পায়নি বলে অনেকেরই ক্ষোভ আছে আমাদের ওপরে- এটা আমি জানি।”