ছেলের লাশ উদ্ধারের পর শনিবার বিকেলে নাসির ফকিরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে সন্ধ্যায় শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির ২০ নম্বর বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মতিঝিল মডেল স্কুলের প্রহরী নাসির। এই বাসাটি তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের, যিনি রেলওয়ের চৌকিদার পদে কাজ করেন।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় শিশুটির পড়ে যাওয়ার খবর শুনে উদ্ধার কাজে গেলেও কয়েকশ ফুট গভীর ওই পাইপের বহুদূর পর্যন্ত ভেতরে ক্যামেরা নামিয়েও কোনো মানবদেহের অস্তিত্ব ধরা না পড়ার কথা জানায় ফায়ার সার্ভিস।
এরপর ভোররাতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল শিশুটির ওই পাইপে অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার পর পুলিশ নাসিরকে থানায় নিয়ে যায়।
তিনি জানান, শুক্রবার রাত ৩টার সময় শাহজাহানপুর থানার পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশ হেফাজতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে নাসির বলেন, “পুলিশ আমাকে বলেছে- তুমি বাইরে থাকলে সাংবাদিকরা বিরক্ত করবে। চল থানায় যাই। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমাকে জানায়- পাইপে পাঠানো ক্যামেরায় কারো অবস্থান পাওয়া যায়নি।”
তিনি জানান, পুলিশ সন্দেহ করছিল ছেলেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে।
“তারা আমাকে বলে, তোমার সঙ্গে কারো ঝামেলা রয়েছে কিনা আমাদের বলো। ছেলেকে কোথাও লুকিয়ে রেখেছো কিনা স্বীকার করো? কোনো ঝামেলা থাকলে আমাদের জানাও। আমাদেরকে না বললে পরে র্যাব এসে আবার মারধর করবে। তখন তাদের আসল কথা বলতে হবে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কলোনির অনেকেই জিহাদের চিৎকার শুনেছে, তাও কেউ কেউ এই ঘটনাকে ‘গুজব’ বলে আখ্যায়িত করে।
নাসিরের ভাষায়: “শুক্রবার বিকালে জিহাদ যে পাইপে পড়ে গেছে তা দুই শিশু দেখেছে। কয়েকজন মহিলা ও শিশু এসে পাইপের মুখে কান পেতে ছেলের আওয়াজও শুনেছে।
“ও খেলছিল। এসময় পাইপের মধ্যে পড়ে যায়। আশপাশের লোকজন এসে তা জানায়। ‘মা আমাকে বাঁচাও’ বলেও চিৎকার করেছে বলে কয়েকজন শিশু জানিয়েছিল।”
কথা বলার এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন নাসির।
“আমার জন্যে ছেলেটা রাস্তায় এসে অপেক্ষা করতো। আজ জিহাদ নেই। আমি ওই ঠিকাদার ও ইঞ্জিনিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা করবো। এ দুর্ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
২৩ ঘণ্টার উদ্ধার তৎপরতা শেষে শনিবার বিকালে উদ্ধার করা হয় চার বছরের শিশুটির লাশ।