উদ্ধারকর্মীদের হার, স্থানীয়দের চেষ্টায় উদ্ধার

প্রায় ২৩ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর কয়েকজন তরুণের প্রচেষ্টায় গভীর নলকূপের পাইপের ভেতর থেকে বের করে আনা হল চার বছরের জিহাদকে।

লিটন হায়দার অপরাধ বিষয়ক প্রধান প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2014, 10:24 AM
Updated : 27 Dec 2014, 05:12 PM

শেষ পর্যন্ত লোহার তৈরি যে ‘খাঁচার’ মাধ্যমে তাকে উদ্ধার করা হয় সেটি ঘটনাস্থলেই বানানো হয় বলে জানান তরুণদের একজন।

শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে থাকা জিহাদ শুক্রবার বিকালে রেলওয়ের পরিত্যক্ত কয়েকশ’ ফুট দীর্ঘ ওই গভীর নলকূপের ভেতরে পড়ে যাওয়ার পর থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।

বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় টানা অভিযান চালিয়ে শনিবার দুপুর আড়াইটায় সংবাদ সম্মেলন করে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক আলী আহমদ খান উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন।

এর পেছনে যুক্তি হিসেবে তিনি পাইপের ভেতরে পাঠানো ক্যামেরায় কোনো মানবদেহের অস্তিত্ব ধরা না পড়ার কথা জানিয়েছিলেন।

পাইপের ১০-১২ গজ দূরে তার সংবাদ সম্মেলনের মধ্যেই জিহাদকে পাওয়ার উদ্ধারের নাটকীয় খবরে সচকিত হয়ে ওঠে শাহজাহানপুর কলোনির পুরো এলাকা, যেখানে শুক্রবার বিকাল থেকে রয়েছে ব্যাপক ভিড়।

ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান স্থগিতের পরও তরুণরা বিভিন্নভাবে পাইপের ভেতরে থাকা শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তাদের সহযোগিতার কথা বলেছিলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালকও।

ওই তরুণদের অন্যতম শাহ মোহাম্মদ আব্দুল মুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা লোহা দিয়ে তৈরি প্রায় সাড়ে চার ফুট লম্বা একটি খাঁচার সঙ্গে ম্যানুয়েল ক্যামেরা বেঁধে পাইপের ভেতরে পাঠিয়ে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করেছেন। এক্ষেত্রে সেখানে একটি টর্চ লাইটও বাঁধা ছিল।

এই ক্যামেরার সঙ্গে তারের মাধ্যমে একটি টিভির সংযোগ ছিল। নলকূপের পাশে রাখা ওই টিভিতেই সব ভেসে ওঠে।

ওই দলের আরেক সদস্য সাভারের ইলেক্ট্রিশিয়ান আব্দুল মজিদ বলেন, “ছয়/সাতজনের একটি দল কাজটা করেছে। গত রাতেও আমাদের কয়েকজন চেষ্টা করে সফল হইনি। কিন্তু আজ এক ঘণ্টার চেষ্টায় সফল হয়েছি।”

মজিদ জানান, লোহার যে খাঁচা দিয়ে উদ্ধার করা হয় সেটি ঘটনাস্থলে বসেই বানানো হয়। এজন্য লোহা এবং ওয়েল্ডিংয়ের সরঞ্জাম এখানে আনা হয়েছিল।

গত রাতে যেসব জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে তার ব্যর্থতার অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানো হয় বলেও জানান তিনি।

মজিদ বলেন, কি কারণে ব্যর্থ হচ্ছে এসব চিন্তা করেই নলকূপের কাছে গিয়ে বার বার মাপ নিয়ে এবং সবার ধারণা কাজে লাগিয়ে এ খাঁচাটি বানানো হয়।

“এক্ষেত্রে আমাদের নেতৃত্ব দেন ‘ফারুক মামা’। এই খাঁচার নিচের অংশে প্রায় দুই ইঞ্চি লম্বা তিনটি লোহার টুকরা লাগানো হয়, যা উঠানামা করে।”

এই টুকরা লোহার মধ্যে জিহাদ আটকে যায় বলেন মজিদ।

সাভারের রানা প্লাজার উদ্ধার অভিযানেও অংশ নিয়েছিলেন বলে দাবি মজিদের।

এই দলের মধ্যে মুরাদ, আনোয়ার এবং লিটু শাহজাহানপুর এলাকার। ফারুক, রাকিব, মজিদ বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।

ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ব্যবসায়ী আনোয়ার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, খাঁচার মাঝখানে একটি লোহার ভারি বাটি লাগানো হয়। এই বাটির মাঝখানে ফুটো রয়েছে আর সেখানেই বসানো হয়েছে একটি ক্যামেরা।

“সিসি ক্যামেরাটি তার নিজের। এই ক্যামেরায় পাওয়ার সাপ্লাইয়ের জন্য বাটির উপর বসানো হয় একটি অ্যাডাপটার। আর ইন্টারনেট ক্যাবল দিয়ে তা সংযোগ করা হয় মনিটরের সঙ্গে।”

একই সঙ্গে খাঁচার একটি লোহায় কসটেপ দিয়ে একটি টর্চ লাইট লাগানো হয় বলে জানান আনোয়ার।

তিনি জানান, তারা তিনজন ছাড়া বাকিদের কারো সাথে তাদের পূর্ব কোন পরিচয় ছিল না। ঘটনাস্থলেই পরিচয় হয় এবং সবাই এক হয়ে মতামত এবং অভিজ্ঞতা শেয়ার করি। 

এই তরুণরা আশপাশের ও বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার সঙ্গে যুক্ত।

জিহাদকে উদ্ধারের পর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফায়ার সার্ভিসের এক ডিএডি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা চরম বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি।”

অভিযান সমাপ্তির পর উদ্ধার হওয়ার বিষয়ে আলী আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা স্থগিত করছিলাম, তবে তখনও আমাদের কর্মীরা সেখানে ছিল। এলাকাবাসী আমাদের সহযোগিতা করেছে। সবার সহযোগিতায় শিশুটি উদ্ধার হয়েছে।”

৩টার দিকে জিহাদকে বের করে আনার পর সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে সাড়ে ৩টায় পৌঁছনোর পর জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা শুরু করেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা।

এরপর ৪টার সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক রিয়াজ মোরশেদ সাংবাদিকদের সামনে এসে বলেন, শিশুটি মারা গেছে বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে। মৃত অবস্থায় তাকে পেয়েছিলেন তারা।