খালেদার জনসভাস্থলে ১৪৪ ধারা

বিএনপি বা ছাত্রলীগের পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে গাজীপুরে খালেদা জিয়ার সমাবেশস্থলে ১৪৪ ধারা জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2014, 08:14 AM
Updated : 26 Dec 2014, 08:14 AM

জেলার পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শুক্রবার বেলা ২টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজীপুরের বদরে আলম কলেজ মাঠ ও আশেপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। 

“যেহেতু তারা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেন নাই, সেহেতু আমরা কাউকেই অ্যালাও করছি না।”

শুক্রবার সকালে জেলা সার্কিট হাউসে আইন-শৃঙ্খলা কমিটির এক সভার পর গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) নূরুল ইসলামও সাংবাদিকদের একই ইংগিত দিয়েছিলেন।

কাউকে জনসভার অনুমতি দেওয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, “বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লন্ডন থেকে একটি তীর্যক মন্তব্য আসার পরই (ছাত্রলীগের) এই আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। তাদের সহযোগিতা চাচ্ছি, যে একটি সুরাহা হয়ে গেলে গাজীপুরবাসী পরিত্রাণ পায়। 

“তা যদি না হয় তখন তো আমাদের আইন অনুযায়ী যে পন্থা রয়েছে সে পন্থায় যেতে হবে। জনজীবনে বিঘ্ন ঘটে এরকম কোনো কিছু আমরা অ্যালাও করব না।”

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুনুর রশিদ

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম

পাল্টা-পাল্টি সমাবেশের এরকম ঘোষণায় উত্তেজনা থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণত ১৪৪ ধারা জারি করে সব ধরনের সভা, সমাবেশ মিছিল নিষিদ্ধ করা হয়। গাজীপুরেও যে তেমন ঘোষণা আসতে পারে, সে গুঞ্জন বৃহস্পতিবার থেকেই ছিল।   

জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার ঘণ্টাখানেক আগেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন,গাজীপুরে জনসভার অনুমতির সব প্রক্রিয়া তারা পালন করেছেন এবং স্থানীয় প্রশাসনও তাদের আশ্বস্ত করেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, কাল জনসভা হবেই। অবশ্যই আমরা কাল গাজীপুর যাব। এখন বিরোধী দলের জনসভা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারেরই।”

বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি।

এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার মা খালেদার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বদরে আলম কলেজ মাঠে একই দিন সমাবেশের কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ।

মঙ্গলবার রাতে কলেজ মাঠ এলাকায় বিএনপির লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। মাঠ দখলে নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে দফায় দফায় মিছিল চালিয়ে যায়। মাঠের ভেতরে সামিয়ানা টাঙিয়ে ছাত্রলীগের বিক্ষোভ সমাবেশের ব্যানার ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় পাঁচ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয় বলে জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা জানান।

 

তিনি জানান, নাশকতা ও বিশৃঙ্খলার পরিকল্পনার অভিযোগে বৃহস্পতিবার রাতে টঙ্গী থেকে গাজীপুর যুবদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. বশির উদ্দিন আহমেদ, বিএনপি কর্মী ইজ্জত আলী ও রনি মিয়াকে পুলিশ আটক করে।

একই অভিযোগে জয়দেবপুর থানার বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধ ও বৃহস্পতিবার বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের ছয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছেন জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হকের অভিযোগ, ভাওয়াল কলেজ মাঠে বিএনপির জনসভা ভণ্ডুল করতেই গত তিন দিন ধরে বাড়ি বাড়ি অভিযান চালিয়ে পুলিশ নেতা-কর্মীকে  আটক করছে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের গাজীপুর মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. তৌহিদুল ইসলাম দীপ বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি করায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। তা না হলে গাজীপুরের কোথাও তাদের জনসভা করতে দেওয়া হবে না।”

জেলার পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা অনেকবার চেষ্টা করেছিলাম, ভেবেছিলাম দুই পক্ষ সমঝোতায় আসবে। যেহেতু তারা সমঝোতায় আসতে পারেননি এবং একই স্থানে সভা করার চেষ্টা করছেন, সে কারণে আইন-শৃঙ্খলার অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।

“এটাতো আমরা পুলিশ প্রশাসন হতে দিতে পারি না। এ কারণে সবার সাথে কথা বলে আমরা চিন্তা করেছি যে এখানে জনসভা করতে দেওয়া ঠিক হবে না। আগামীকাল এখানে কোনো সমাবেশ হবে না।”

১৪৪ ধারা জারির বিষয়টি মাইকিং করে এলাকায় জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।