পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় উত্তেজনা গাজীপুরে

ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ মাঠে খালেদা জিয়ার জনসভা নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের পাল্টাপাল্টি ঘোষণায় উত্তেজনা চলছে গাজীপুরে।

গাজীপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2014, 04:05 PM
Updated : 25 Dec 2014, 04:27 PM

আগামী শনিবার যে কোনো মূল্যে সমাবেশের ঘোষণা বৃহস্পতিবারও দিয়েছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে ছাত্রলীগও সমাবেশ করতে অটল থাকার কথা জানিয়েছে একই দিন।

দুই পক্ষের ‍মুখোমুখি অবস্থানে শনিবারের পরিস্থিতি নিয়ে নগরীর বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা কাউকে ছাড় দেবে না।

নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার আগে জেলা সফরের অংশ হিসেবে বেশ কিছু দিন আগেই গাজীপুরে জনসভার কথা জানিয়েছিল বিএনপি।

এরপর তারেক রহমানের এক বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তার মা খালেদা জিয়ার জনসভা ঠেকানোর ঘোষণা দিয়ে বদরে আলম কলেজ মাঠে একই দিন সমাবেশের কর্মসূচি দেয় ছাত্রলীগ। তাদের কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সহযোগী অন্য সংগঠনের স্থানীয় নেতারাও সমর্থন দিচ্ছে। 

মঙ্গলবার রাতে কলেজ মাঠ এলাকায় বিএনপির লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন ভাংচুর করে তাতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়, যেজন্য ছাত্র ও যুবলীগকে দায়ী করেছে বিএনপি।

কলেজের সামনে পুলিশের অবস্থান

উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলেজ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও জলকামান মোতায়েন রয়েছে।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পরিস্থিতি অবজার্ভ করা হচ্ছে। দুপক্ষ মিলে সিদ্ধান্ত নিলে বেটার। আর তারা যদি জনসভার নামে আরাজকতা-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”

জয়দেবপুর থানার ওসি খন্দকার রেজাউল করিম রেজা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে বিভিন্ন এলাকা থেকে বুধবার বিএনপির চার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

জনসভা ও সমাবেশ সফল করতে উভয় পক্ষই গত কয়েকদিন ধরে মিছিল-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে একটি লাঠি মিছিল নিয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও কলেজ ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরে তারা কলেজের সামনে সমাবেশ করে।

কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মো. খোরশেদ আলম সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারেক রহমানের কটূক্তির প্রতিবাদে তারা সমাবেশ করবেনই।

বৃহস্পতিবার লাঠি হাতে ছাত্র-যুব-শ্রমিক লীগের মিছিল।

ছাত্রলীগের প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশকে সমর্থন জানিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজমত উল্লাহ খান বলেন, তারেক রহমানের শিষ্টাচারবহির্ভূত বক্তব্য তারা আশা করেননি।

সরকার সমর্থকরা মিছিল-সমাবেশ করলেও বিএনপিকে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, মিছিল ও সমাবেশ করতে গেলেই পুলিশ বাধা দেয়, ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।

তবে বিকালে বিএনপি চান্দনা চৌরাস্তার ঢাকা-গাজীপুর সড়কে খালেদা জিয়ার গাজীপুর আগমনকে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেছে।

গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনুমতি নেওয়ার পরও আমাদের মাঠে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। আর সেখানে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও শ্রমিক লীগ নেতাকর্মীরা পুলিশ প্রহরায় মিছিল সমাবেশ করছে।

“তবে যত বাধাই আসুক আমাদের সিদ্ধান্ত ২৭ ডিসেম্বর জনসভা আমরা করবই।”

অন্যদিকে খালেদা জিয়ার জনসভাস্থলে সমাবেশ করার বিষয়ে অনড় থাকার কথা ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি এ এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান।

জেলা প্রশাসকের কাছে বিএনপি নেতারা

উত্তেজনার মধ্যে বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুর বিএনপির নেতারা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে জনসভার বিষয়ে তার সহায়তা চেয়েছেন।

জেলা প্রশাসকের সঙ্গে বৈঠকে বিএনপি নেতারা

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান, জেলা বিএনপি সভাপতি ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুলসহ নেতারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যান।

জেলা প্রশাসক মো. নূরুল ইসলাম বিএনপি নেতাদের বলেন, “যেহেতু আপনাদের সাথে একটি রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে, তাই এ ব্যাপারে আমার কিছু করার নেই। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হোক, তা হতে দিতে পারি না।”

মেয়র মান্নান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, জনসভা সফল করতে তাদের প্রস্তুতি চলছে। তবে পুলিশের মদদে সরকার সমর্থকরা তাতে বাধা দিচ্ছে।

“আমরা আজকেও লক্ষ্য করলাম পুলিশের ছত্রছায়ায় সেখানে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা ও অস্ত্রপাতি নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় বসে আছে।”

তবে বিএনপি কোনো ধরনের সংঘাতে না জড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করতে চায় বলে মান্নান জানান।