বিটিভির প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

৫০ বছর পেরিয়ে আসা রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ টেলিভিশনের বেসরকারি চ্যানেলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Dec 2014, 02:29 PM
Updated : 25 Dec 2014, 02:29 PM

জনগণের অর্থে পরিচালিত এই টেলিভিশন চ্যানেলকে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা রেখে অনুষ্ঠান সম্প্রচারের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার রামপুরার বিটিভি ভবনে বাংলাদেশ টেলিভিশনের সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদ্বোধন করেন। তিনি বিটিভির নবনির্মিত ১২ তলা সদর দপ্তর ভবনের ফলকও উন্মোচন করেন।

১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন ডিআইটি ভবনে (বর্তমান রাজউক ভবন) টেলিভিশনের কার্যক্রম শুরু হয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে এর নাম হয় ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’।

রামপুরার ভবনে বিটিভি স্থানান্তর হয় ১৯৭৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্র এবং ১৪টি উপকেন্দ্র থেকে বিটিভির কার্ক্রম পরিচালিত হচ্ছে। টেরেস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইটে চলা বিটিভি বাংলাদেশের প্রায় ৯৮ ভাগ এলাকা থেকে দেখা যায়।

গত ৬ বছরে ৩১টি বেসরকারি স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল স্থাপনের অনুমোদন দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে অনুষ্ঠানে বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিটিভির অনেক উন্নয়ন হয়েছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে। বেসরকারি চ্যানেলগুলোর সাথে বিটিভিকে প্রতিযোগিতা করতে হবে।”

সৃজনশীল না হলে বিটিভি আরও সঙ্কুচিত হবে বলে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের সতর্ক করে দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর।

রাষ্ট্রায়ত্ত বিটিভিকে সরকারের মুখপত্র হিসেবে ব্যবহারের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।

“টেলিভিশনকে ব্যবহার করা হত মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতের খেলনা হিসাবে। অবৈধ ক্ষমতা বৈধকরণের প্রক্রিয়া হিসাবে টেলিভিশনটাকেই সব সময় ব্যবহার করা হয়েছে। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে টেলিভিশনে এসে ঘোষণা দিয়েছে, ‘আজ থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম’।”

“৭৫ এর পর রাজাকারকে রাজাকার, আল বদরকে আল বদর বলা যাবে না। এমনকি ওই হানাদার পাকিস্তানি শব্দটিও বলা যাবে না। এটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। আমরা একে সরকারি মুখপত্র হিসাবে ব্যবহার করতে চাই না।”

২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ বন্ধের উদ্যোগ নেয় বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “মানুষের মাঝে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করার উদ্যোগ নেই।”

বিটিভি প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছেই প্রধানমন্ত্রী বেলুন ও পায়রা ওড়িয়ে সুবর্ণ জয়ন্তী উৎসব উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা। এরপর নতুন ভবনের ফলক উন্মোচন করে তিনি আলোচনা অনুষ্ঠানে যান।

মঞ্চে উঠেই বিটিভির প্রথম শিল্পী ফেরদৌসী রহমানকে আলিঙ্গন করেন শেখ হাসিনা, এরপর তিনি বিটিভির প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে জামিল চৌধুরী জানান, বিটিভিই পাকিস্তান আমলে প্রথম বাংলায় চেক লেখার বিষয়টি শুরু করে।

টেলিশিভনের প্রথম শিল্পী হিসাবে ফেরদৌসী রহমান তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় আবু হেনা মোস্তফা কামালের লেখা এবং আনোয়ার উদ্দীন খানের সুরে ‘ওই যে আকাশ নীল হল আকাশ’ গানটি গেয়েছিলেন তিনি।

শেখ হাসিনা ১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বরের কথা স্মরণ করে বলেন, “আমার এখনও মনে আছে ৩২ নম্বর সড়কে একটা বাড়িতে টেলিভিশন ছিল, তিনি বদরুন্নেসা আহমেদ। তিনি আওয়ামী লীগ নেত্রী ছিলেন। উনার বাড়িতে আমরা পাড়ার সব ছেলে-মেয়েরা গিয়ে সমবেত হয়েছিলাম।”

পাশে বসে থাকা ফেরদৌসী রহমানের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “ফেরদৌসী আপাকে এখনও মনে হয় যেন.. আপার কিন্তু বয়স হয়েছে কেউ বলতে পারবে না। আপা কিন্তু চিরসবুজ। এখনও সেই সুন্দর, সেই সাজে আছেন।

“তার গান দিয়ে টেলিভিশনের যাত্রা শুরু। আপা আজকে আপনাকে এখানে পেয়ে খুব খুশি।”

১৯৭২ সালে রামপুরায় বিটিভির কার্যক্রম শুরুর দিনটি স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “পুরো পরিবার এখানে উপস্থিত ছিলাম। জাতির পিতা এখানে এসেছিলেন, তিনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।”

বাংলাদেশের সঙ্গে মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাংলাদেশ টেলিভিশন’ রাখেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর ‘বিপ্লব দিবসের’ নামে বিটিভি ভবনে চার কর্মকর্তা এম মনিরুল আলম, মোহাম্মদ আকমল খান, এএফএম সিদ্দিক এবং ফিরোজ কাইয়ুমকে হত্যার বিষয়টিও আসে শেখ হাসিনার বক্তব্যে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “তাদের অপরাধ ছিল, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনেক ফুটেজ দেখিয়েছিলেন টেলিভিশনে।”

বিটিভির দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক অনুষ্ঠান সম্প্রচারের প্রত্যাশা রাখেন শেখ হাসিনা। গ্রাম বাংলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মেধাবীরা যেন বিটিভিতে মেধা বিকাশের সুযোগ পায়, সেই আহ্বানও জানান তিনি।

সংসদ অধিবেশন না থাকলে সংসদ টিভিতে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান প্রচারের পরামর্শও দেন প্রধানমন্ত্রী।

নবনির্মিত ১২ তলা সদর দপ্তর ভবনের ফলক উন্মোচনের পর ব্ক্তৃতা মঞ্চে এসে তিনি বিটিভির উন্নয়নে তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন।  

৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে বিটিভি সদর দপ্তর ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং ৫৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা টেলিভিশন কেন্দ্রের সম্প্রসারিত ভবনের স্টুডিও যন্ত্রপাতি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।

প্রত্যেক বিভাগে টেলিভিশন কেন্দ্র নির্মাণ ও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়ার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। চট্টগ্রাম কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচারের সময় বৃদ্ধি এবং ডিজিটাল টেরিস্ট্রিয়াল ও স্যাটেলাইট ট্রান্সমিশনসহ এই কেন্দ্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রে রূপান্তরের কাজ হাতে নেওয়ার কথা জানান তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বিটিভির সূবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক ডাকটিকিট ও বিশেষ খাম অবমুক্ত এবং সুবর্ণ স্মারক ও সুবর্ণ দর্পনের মোড়ক উন্মোচন করেন।

তথ্য সচিব মর্তূজা আহমেদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ কে এম রহমতুল্লাহ এবং এশিয়া প্যাসিফিক ব্রডকাস্ট্রিং ইউনিয়নের জাওয়াহাদী মোক্তাদী, বিটিভির মহাপরিচালক আব্দুল মান্নান বক্তব্য রাখেন।