আরও ৭ মামলায় তারেককে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা

বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সোমবারও ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2014, 04:21 PM
Updated : 22 Dec 2014, 04:23 PM

নতুন এসব মামলার মধ্যে সাতটিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে খালেদা জিয়ার এই ছেলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আর বাকি অধিকাংশ মামলাতেই তারেককে আদালতে হাজির হতে সমন দেওয়া হয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে গত ১৫ ডিসেম্বর তারেক লন্ডনে বিএনপির এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজাকার’ বলেন।

জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ছেলে বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি ৭ মার্চ সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসারদের নিয়ে যুদ্ধ শুরু করতেন, তাহলে যে ‘সামান্য সংখ্যক’ পাকিস্তানি সৈন্য তখন ছিল, তাদের সহজেই পরাজিত করা যেত; প্রাণহানি ও অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক কমানো যেত।

তিনি দাবি করেন, বঙ্গবন্ধু ‘পাকবন্ধু’ ছিলেন বলেই এমনটি করেননি। আর সে কারণে তাকে ‘রাজাকার’ আখ্যায়িত করা যায়।

ছয় বছর ধরে প্রবাসে থাকা তারেক বঙ্গবন্ধু পরিবার এবং স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এর আগেও বিতর্কিত বক্তব্য দেন, যে জন্যও তাকে বেশ কয়েকটি মানহানির মামলার বিবাদী হতে হয়।

সর্বশেষ বক্তব্যের পর ইতোমধ্যে কয়েকটি মানহানির মামলা হয়েছে তারেকের বিরুদ্ধে। রোববারও তার বিরুদ্ধে আরও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে ডজনখানেক মামলা হয়। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জে এক হাজার কোটি টাকার মানহানির অভিযোগ আনা হয়েছে একটি মামলায়।

সোমবার সকালে ঢাকার মহানগর হাকিম আদালতে তারেকের বিরুদ্ধে মামলা করেন যুবলীগ নেতা মনির হোসেন মোল্লা, বিচারক মাহবুবুর রহমান যার শুনানি নিয়ে তারেকের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।

গোপালগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে করা মামলায় তারেকের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ পাঁচজনকে।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা মো.শওকত আলী খান ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইসরাত জাহান তামান্নার আদালতে এ মামলা  করেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, লন্ডনের অনুষ্ঠানের সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস ও অনুষ্ঠান পরিচালনাকারী কায়েস আহমেদ।

শুনানি শেষে বিচারক আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে ১৩ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখেন।

পিরোজপুরে পরোয়ানা জারি হওয়া মামলার বাদী জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আলাউদ্দিন খান।

মামলাটি হয়েছে পিরোজপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবুল বাসারের আদালতে।

একই সময় জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করা এবং উস্কানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একই আদালতে আরেকটি মামলা করেন।

শুনানি শেষে বিচারক অভিযোগটি থানায় পাঠিয়ে এফআইআর করার আদেশ দেন।

নড়াইলের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তোফায়েল মাহমুদ তুফানর করা মামলায় বিচারক মো. সালেহুজ্জামান পরোয়ানা জারি করেছেন। এছাড়া আগামী ১০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী তারিখ রাখা হয়েছে।

মাদারীপুর জুডিশিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট আদালতে করা মামলার বাদী জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক আইনজীবী বাবুল আখতার। বিচারক নূরুননাহার ইয়াসমিন মামলাটি আমলে নিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।

খুলনায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে হওয়া দুটি মামলার একটিতে পরোয়ানা ও অপরটিতে সমন জারি হয়েছে। মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসেন টিপুর আদালতে মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ শাহজালাল হোসেন সুজনের করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ২১ জানুয়ারি।

আর মহানগর হাকিম আয়েশা আক্তার মৌসুমীর আদালতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা শেখ আলী আকবর টিপুর করা মামলায় সমন জারি হয়েছে। দুটি মামলারই পরবর্তী তারিখ ২১ জানুয়ারি।

এছাড়া আরো দুটি মামলার নথি পর্যালোচনার জন্য রাখা হয়েছে জানা গেলেও আইনজীবীরা এসব মামলা সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি।

চট্টগ্রাম জেলা বিচারিক হাকিম ফারজানা ইসমিনের আদালতে এদিন তারেকের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন চন্দনাইশ উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য মো. মিজানুর রহমান। দণ্ডবিধির ৫০০ ধারায় করা মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক পরে তারেকের বিরুদ্ধে সমন করেছেন

এর আগে রোববার তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শিহাবুল হক শিকদার।

বৃহস্পতিবার নগর ছাত্রলীগের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনিও আরেকটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট নূসরাত জাহানের আদালতে সরকারি বিএম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক নাহিদ সেরনিয়াবাত ও যুবলীগ নেতা আইনজীবী কাইয়ুম খান কায়সার আলাদা দুটি মামলা করেছেন। বিচারক দুটি মামলাতেই তারেককে আগামী ১১ মার্চ আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

খাগড়াছড়ি মুখ্য বিচারিক আদালতে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানি মামলা করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মংসাপ্রু মারমা।

আমলি আদালতের বিচারক আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান মামলা আমলে নিয়ে আগামী ২২ জানুয়ারি তারেক রহমানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের আদনান অনিকের করা মামলায় তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. নোমান মাইনুদ্দিন।

মেহেরপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হামিক আব্দুল্লাহ আল মামুনের আদালতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজনের করা মামলায়ও সমন জারি হয়েছে।

কুমিল্লার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে আলাদা তিনটি মামলা করেছেন ছাত্রলীগের তিন নেতা।  

এর মধ্যে তিতাস উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল পারভেজ বিচারক নাছরিন জাহানের আদালতে, বিচারক আফরোজা জেসমিন কলির আদালতে দেবিদ্বার উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহবায়ক হোসাইন আহমেদ ও বিচারক মিথিলা ইসলামের আদালতে চান্দিনা পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোজাম্মেল হক এসব মামলা করেন।

মামলাগুলো আমলে নিয়ে আদালত একটিতে ২২ জানুয়ারি ১টি ও দুটিতে ৩০ জানুয়ারি আসামিকে হাজির হতে সমন জারি করে।

গত ১৮ ডিসেম্বর কুমিল্লার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিমের হওয়ায় মামলায়ও আগামী ১ মার্চ তারেককে হাজির হতে সমন জারি করা হয়।

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অরুন কান্তি রায়ের করা মামলায় দিনাজপুর জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী ৭ জানুয়ারি তারেককে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি করায় ন্যায় বিচার চেয়ে মামলা করেছেন ছাত্রলীগ কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি আলী মর্তুজা খসরু।

মামলা আমলে নিয়ে কুষ্টিয়া জেলা বিচারিক আদালতের বিচারক হুমায়ুন কবির আসামি তারেক রহমানকে আগামী ২২ জানুয়ারির  মধ্যে আদালতে হাজির হওয়ার নের্দশ দিয়েছেন।

যশোরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক আদালতে (আমলী) জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেনের করা মামলা আমলে নিলেও বিচারক আবু ইব্রাহিম আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।

নওগাঁয় দায়ের করা দুটি মামলার একটিতে তারেককে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারির আদেশ হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রহমানিয়া আলম রিজভী মামলাটি করেন।

জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ এনে অন্য মামলাটি করেন। বিচারক ওই মামলায় কোনো আদেশ দেননি।