সুন্দরবন সংরক্ষণে সরকার উদাসীন: বিএনপি

দিনব্যাপী সুন্দরবন ঘুরে এটি সংরক্ষণে বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর উদ্বেগকে সরকার ‘উদাসীনতার’ দৃষ্টিতে দেখছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে শেলা নদীতে ট্যাংকার ডুবির ঘটনা তদন্তে গঠিত বিএনপির কমিটি।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2014, 03:41 PM
Updated : 22 Dec 2014, 03:41 PM

আর এ ঘটনায় জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও অন্যান্য ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখতে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে জাতিসংঘ পরিদর্শক দলও মংলায় পৌঁছেছে।  

সোমবার বিকালে ঘটনাস্থল ঘুরে বিএনপির তদন্ত কমিটির প্রধান ও দলটির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ আহমেদ বলেন, “সুন্দরবন সংরক্ষণের বিদেশি দাতা সংস্থাগুলোর উদ্বেগ ও আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশের সরকার উদাসীন।

“তাদের এ বিষয়ে আগ্রহ নেই। বরং তারা এই বন ধ্বংস করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিচ্ছে।”  

গত ৯ ডিসেম্বর শেলা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় সাউদার্ন স্টার ৭ নামের একটি অয়েল ট্যাংকার ডুবে গেলে এতে থাকা সাড়ে ৩ লাখ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়ে সুন্দরবনের নদী-খালে।

বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ২০ ডিসেম্বর খালেদা জিয়া সাত সদস্যের একটি ‘তদন্ত কমিটি’ গঠন করেন।

দুর্ঘটনাকবলিত ওই ট্যাংকারটিকে ‘বালুবাহী নৌযান’ বলে দাবি করে হাফিজ বলেন, “এটা বিস্ময়কর যে এমন একটি নৌযানে বিপজ্জনক জ্বালানী তেল পরিবহন করা হচ্ছিল।

“সুন্দরবন নিয়ে এই সরকারের যদি কোন আগ্রহ থাকত তবে এমনটি হতে পারতো না। এর আগেও এই সরকার ভারতকে খুশি করতে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আরও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বানানোর চেষ্টা করছে।”

সাত সদস্যের বিএনপি তদন্ত কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- খুলনার মেয়র মনিরুজ্জামান, খুলনা-২ আসনের সাবেক সাংসদ নজরুল ইসলাম মঞ্জু, বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ সালাম, খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, পরিবেশ সাংবাদিক কামরুল ইসলাম এবং সুন্দরবন ফাউণ্ডেশনের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম।

অসুস্থতাজনিত কারণে মেয়র মনিরুজ্জামান ছাড়া কমিটির অপর সদস্যরা সরেজমিন ‘তদন্ত’ কাজে অংশ নেন।

দুপুরে নাগাদ মংলা থেকে পশুর নদী পথে একটি লঞ্চে করে তদন্ত দলটি দুর্ঘটনাস্থলসহ শেলা নদীর বিভিন্ন এলাকা ও সুন্দরবনের কিছুটা ভেতরে ঘুরে দেখেন।

বাগেরহাট ও খুলনাসহ মংলা এবং রামপাল উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা তদন্ত দলটির সঙ্গে ছিলেন।

বিকালে জয়মনি খেয়াঘাট এলাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা হাফিজ জানান,  তারা বনের ভেতরে প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার এলাকা ঘুরেছেন।

হাফিজ দাবি করেন, স্থানীয় মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিনি ও তার সহযোগিরা জানতে পেরেছেন, ‘জ্বালানি তেলবাহী ট্যাঙ্কারডুবির ঘটনায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। অনেক বণ্যপ্রাণী মারা গেছে।’

“নদীতে মাছের অভাবে এলাকার মৎস্যজীবীরা এখন অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন। পানিতে ভাসা জ্বালানি তেল অপসারণ করতে যেয়ে অনেক গ্রামবাসীর শরীরে চর্মরোগে দেখা দিয়েছে,” বলেন হাফিজ।    

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ দল মংলায়

ট্যাংকার ডুবির ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও জীব বৈচিত্র্যে এর প্রভাব পর্যবেক্ষণে জাতিসংঘের ‘জয়েন্ট ইউএন-গভর্মেন্ট অয়েল স্পিল রেসপন্স মিশন’ এর একটি প্রতিনিধি দল সোমবার বাগেরহাটের মংলায় পৌঁছেছে।

সুন্দরবন বণ্যপ্রাণী বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, “দেশি ও বিদেশিদের সমন্বয়ে কুড়ি থেকে পঁচিশ সদস্যের এই দলটি মংলা পৌঁছেছেন।

“তারা রাতে পশুর নদীতে লঞ্চে অবস্থান করবেন। মঙ্গলবার তাদের সুন্দরবন পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।”

এদিকে বিকালে মংলায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের জেটিতে ওই দলটির প্রধান অ্যামেলিয়া ওয়ালস্ট্রম সাংবাদিকদের বলেন,  “আমরা বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে সুন্দরবনে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি পরিদর্শন করতে এসেছি।

“এখান থেকে আমাদের সদস্যরা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত ও উপকরণ সংগ্রহ করবেন। সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই বোঝা যাবে প্রকৃতপক্ষে এই দুর্ঘটনায় সুন্দরবনের কতটুকু ক্ষতি করেছে এবং তা কাটিয়ে উঠতে কী করতে হবে।”