কাজিরা ‘ভয়ঙ্কর’

সরকারের নানা উদ্যোগের ফলে বাল্যবিবাহ কিছুটা রোধ করা গেলেও অনেক সময় বিয়ের রেজিস্টার অর্থাৎ কাজিরা টাকার লোভে বাল্যবিয়ে সংঘটনে ভূমিকা রাখছেন বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া।

নিজস্ব প্রতিবেদক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2014, 02:38 PM
Updated : 21 Dec 2014, 02:38 PM

কাজিদের অপতৎপরতা রোধে তাদের কার্যক্রমের ওপর নজরদারি বাড়াতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রোববার জাতীয় শিশু অধিকার সংগঠন ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্ক ফোর্সের (এনসিটিএফ) অ্যাডভোকেসি শাখা চাইল্ড পার্লামেন্টের অধিবেশনে তিনি বলেন, “কাজিরা বড়ই ভয়ঙ্কর। তারা জেনে-শুনে ছোট্ট মেয়েদের বয়স বাড়িয়ে বিয়ের ব্যবস্থা করেন। টাকার বিনিময়ে অনেক সময় জন্ম সনদেও ঘষামাজা করেন।”

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে প্রচলিত সংসদীয় অধিবেশনের অনুকরণে আলোচনার আয়োজন করে চাইল্ড পার্লামেন্ট।

দেশের ৬৪টি জেলা এবং ১৬টি প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে নির্বাচিত ৮৪ জন সদস্য অধিবেশনে আলোচনায় অংশ নেয়। ‘বাল্যবিবাহ শিশু শিক্ষা ও সুরক্ষার অন্তরায়’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবারের অধিবেশন হয়।

মেয়েদের বিয়ের বয়স কমানোর চিন্তা থেকে সরকার সরে এসেছে জানিয়ে ডেপুটি স্পিকার বলেন, মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরই থাকছে। বয়স কমিয়ে ১৬ বছর করার প্রস্তাব গৃহীত হয়নি।

চাইল্ড পার্লামেন্টের স্পিকার লোমাত সহিবা, ডেপুটি স্পিকার শাইখ হাসান সালভী ও নুসরাত জাহান সূচনার পরিচালনায় অধিবেশনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্যরা আলোচনায় অংশ নেন। নিজের অভিজ্ঞতা ও সমাজের বাস্তব সমস্যার চিত্র তুলে ধরে সরকারের কাছে এর সমাধান চান তারা।

জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অধিবেশন শোনেন এবং নিজের মতামত তুলে ধরেন।

১৮ বছরের আগে মেয়েদের বিয়ে ঠেকাতে কাজিদের বেআইনি তৎপরতা থামাতে আইনমন্ত্রণালয়কে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

“সমস্যার সমাধানে আইন মন্ত্রণালয়কে মূল ভূমিকা রাখতে হবে। বিভিন্ন জেলায় ম্যারেজ রেজিস্টার পরিদর্শকদের পদ খালি পড়ে আছে। এসব পদে নিয়োগ দেওয়া এবং কাজিদের কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করতে মনিটরিং আরো জোরদার করতে হবে,” বলেন ডেপুটি স্পিকার।

বাল্য বিয়ে রোধে গণমাধ্যমকেও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।

জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে চাইল্ড পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরু হয়। সম্প্রতি পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায় নিহত শিশুদের স্মরণে অধিবেশনে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

অধিবেশনে তারকা চিহ্নিত প্রশ্নে মেহেরপুর থেকে আসা পলাশ কুমার দে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা অনেক সময় অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়ে শিশুদের বয়স বাড়িয়ে ভুয়া জন্ম সনদ দেন। এটি বল্যা বিবাহের অন্যতম কারণ।

টাঙ্গাইল থেকে আসা সিদরাতুল মুনতাহা তার জেলায় হরিজন পল্লীর শিশুদের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার তথ্য তুলে ধরেন।

ঢাকার চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্য শম্পা বলেন, শহরের বস্তিগুলোতে এখনো শতভাগ বাল্য বিবাহ হচ্ছে।

বখাটেদের হাত থেকে রক্ষা করতে অনেক সময় অভিভাবকরা বাধ্য হয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দেন বলে মন্তব্য করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাইদা সানজিদা লোপা। সমস্যার সমাধানে সরকারের উদ্যোগ প্রত্যাশা করেন তিনি।

নরসিংদী চাইল্ড পার্লামেন্ট সদস্য জীবন নেসা বাল্য বিয়ে নিয়ে নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, “আমি নিজেই বাল্য বিবাহের শিকার হতে চলেছিলাম। সবার সহযোগিতায় বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পেলেও স্কুলে যেতে পারছি না।”

অধিবেশনে উপস্থিত ডেপুটি স্পিকার তাৎক্ষণিকভাবে লোপার পড়াশোনা আবার শুরু করার পরিস্থিতি তৈরির জন্য ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।